Wednesday, November 10, 2010

এমএন লারমা স্মরণে : : মঞ্জু’র কিছু স্মৃতি, কিছু কথা…


লিখেছেন: জ্যোতিপ্রভা লারমা*
আমাদের পরিবার
আমাদের ঠাকুরদাদা চানমুনি চাকমা ও তাঁর অন্যান্য ভাইদের বাসস্থান ছিল প্রথমে ‘কেরেতকাবা’ নামক স্থানে, (রাঙামাটির) মাওরুম ছড়ার উৎপত্তিস্থল সত্তা-ধ্রুং এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশে। পরে দাদুরা চলে আসেন এই মহাপুরমে (মাওরুম)। বাবারা তিন ভাই। সবার বড় কৃষ্ণ কিশোর চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রামে শিক্ষা আন্দোলনের পথিকৃৎ; মেঝোভাই হরকিশোর চাকমা, তখনকার সময়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন; আর সবার ছোট চিত্ত কিশোর চাকমা, আমাদের পিতা। আমাদের মায়ের নাম সুভাষিণী দেওয়ান, খাগড়াছড়িস্থ খবংপয্যা গ্রামের রমেশ চন্দ্র দেওয়ানের জ্যেষ্ঠ কন্যা। আমার তিন ভাই যথাক্রমে– শুভেন্দু প্রভাস লারমা (বুলু), মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা (মঞ্জু), সবার ছোট জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু) আর আমি সবার বড় বোন জ্যোতিপ্রভা লারমা মিনু। আমি মঞ্জুকে আদর করে ডাকতাম ‘চিক্ক’ বলে।

Tuesday, October 12, 2010

ঘড়িঘর...

০১. ঘড়ি নিয়ে একটি দীর্ঘতম অবসেশন আমৃত্যূ তোমাকে তাড়া করে ফিরবে নিশ্চিত।

সেই যে ছেলেবেলায় রোজ রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে তুমি মনছবিতে আঁকতে একটি বিশাল ডায়ালের গ্রান্ডস ফাদারস্ ক্লক। কাঁটা দুটি বনবন করে ঘুরতে ঘুরতে যখন উলম্ব আকারে সোজা হয়ে দাঁড়াতো, অর্থাৎ কি না ভোর ছয়টা, তুমি মনে মনে শুনতে পেতে ঢং...ঢং...ঢং...কলজে-কাঁপানো ছয়-ছয়টি ঘন্টাধ্বনি।

Sunday, August 22, 2010

সরেজমিন দিনাজপুর: দখলদারদের থাবায় আদিবাসীদের জমি


বিপ্লব রহমান, দিনাজপুরের আদিবাসী অঞ্চল থেকে ফিরে:
দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার চক বানারসি সাঁওতাল আদিবাসী গ্রামের বাসিন্দা সালগিন হেমরমের (৭০) স্বামী চণ্ডু মার্ডি মারা গেছেন বছরখানেক আগে। একমাত্র ছেলেটিও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। স্বামী মারা যাওয়ার পর বৈধ কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও তাঁর আট একর ধানি জমি দখল করে বসেছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল। জমি হারিয়ে বৃদ্ধ বয়সে ভিক্ষে করে দিন কাটছে তাঁর। 

Sunday, August 15, 2010

শঙ্খ নদী: একটি সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা



এক.পাহাড়, অরণ্য, ঝর্ণা ধারায় নয়নাভিরাম, পার্বত্য চট্টগ্রামের আয়তন ৫,০৯৩ বর্গমাইল। বাংলাদেশের এক কোনে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান– এই তিন জেলা নিয়ে গড়ে ওঠা পার্বত্যঞ্চালে পাহাড়ি-বাঙালি মিলিয়ে আনুমানিক প্রায় ১৫ লাখ লোক বাস করেন।

মায়ানমার সীমান্তবর্তী দুর্গম বান্দরবান জেলার আয়তন ৪,৪৭০ বর্গ কি.মি.। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ তাজিনডং (উচ্চতা ১০০৩ মিটার) এই জেলায় অবস্থিত, যা বিজয় বা মদক মুয়াল নামেও পরিচিত। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম পর্বতশৃঙ্গ কেওক্রাডং (উচ্চতা ৮৮৩ মিটার) এবং সর্বোচ্চ খাল রাইখিয়াং-ও বান্দরবানে অবস্থিত। [লিংক] জেলার মোট জনসংখ্যা প্রায় তিন লাখ।

Tuesday, August 10, 2010

আইটি’তে কতদুর এগোল বাংলা?


এই যে এখন কম্পিউটারে দু-একটি বোতাম টিপেই খুলে বসেছি প্রিয় ব্লগ পাতা, অসংকোচ প্রকাশের দুরন্ত সাহস, ঠিক এমনটি কী আমরা ভাবতে পেরেছিলাম বছর দশেক আগে? নিঃসন্দেহে এটি তথ্য প্রযুক্তির অগ্রগতি তথা ব্যবহারিক দিক বিবেচনায় বাংলা ভাষারই অগ্রগতি। আচ্ছা, বাংলার এই উল্লম্ফন শুরু হলো কবে থেকে?

Friday, August 6, 2010

মন কেনো এতো কথা বলে?…


এক. 
জীবনের অনেকটা বাঁক পেরিয়ে আমি আমার ছোট্ট বন্ধু মানিকের কথা ভুলতে বসেছিলাম। বছর দশেক আগে বিবিসির বাংলা বিভাগের (এখন ফ্রি ল্যান্স উন্নয়ন কর্মী) কুররাতুল আইন তাহমিনা, আমাদের মিতি আপার টেলিফোনে এক লহমায় মনে পড়ে যায় হারিয়ে যাওয়া সেই কালো মানিকের মায়াময় মুখ।

মিতি আপা জানতে চান, আপনার কী মানিকের কথা মনে আছে?

আমার প্রথমেই সাংবাদিক মানিকের নাম মনে পড়ে।
মিতি আপা বলেন, আরে না, আমি টোকাই মানিকের কথা বলছি, ওই যে সে নাকি এক সময় আপানাদের সাথে দল বেঁধে ঘুরতো। আর খুব সুন্দর গান করতো।…

হ্যাঁ, মনে আছে। কিন্তু কেনো?

সময় থাকলে আপনি এখনই বিবিসির ইন্দিরা রোডের অফিসে চলে আসুন। খুব জরুরী।

Wednesday, July 28, 2010

আমি যারে ভালবাসি, তারে আবার বাসি না…


আটের দশকে এসএসসি পরীক্ষার পর আমার স্কুলের বন্ধুরা কেউ স্পোকেন ইংলিশ, কেউ বেসিক ইংলিশ, কেউ বা শর্টহ্যান্ড-টাইপরাইটিং বা কম্পিউটার কোর্সে ভর্তি হয়ে গেল। তখন আমেরিকা যাওয়ার খুব ক্রেজ। এবং মাইকেল জ্যাকসন।…


আমি এ সব কিছুর কোনোটাই করিনি। একেবারে সিরিয়াস পরীক্ষার্থীর মতো সকাল বেলাতেই খাতা-কলম গুছিয়ে যেতে শুরু করি শাহবাগের পাবলিক লাইব্রেরিতে। তারপর একেবারে টানা চলতে থাকে গভীর অধ্যায়ন।

Friday, July 23, 2010

জোছনা করেছে আড়ি…


এক.কবি শহীদ কাদরীর প্রথম প্রেমিকা, প্রথম স্ত্রী পিয়ারী বছর আটেক আগে এসেছিলেন ঢাকায়। বার্লিন প্রবাসী প্রায় ৬০ বছর বয়সী পিয়ারী এখনো দারুন সুন্দর, উজ্জল। ঢাকা ক্লাবের এক পার্টিতে কোনো এক সাংবাদিক বন্ধু পরিচয় করিয়ে দেন তার সঙ্গে।
পানপ্রীতি, সাংবাদিকতা, নাকি অন্য কোনো কারণে জানি না, কেনো যেনো দ্রুত বন্ধুত্ব হয় তার সঙ্গে। পিয়ারী নিমন্ত্রণ করেন একসন্ধ্যায় তাকে সময় দেবার।


Saturday, July 17, 2010

জুম চাষ: একটি সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা


[ও ভেই যেই বেক্কুনে মিলি জুম কাবা যেই/পূব ছড়া থুমত বর রিজেভ' টুগুনোত/ পুরান রাঙ্গা ভূঁইয়ানি এবার বলি উত্যে হোই চেগার/ সে জুমোনি এ বঝরত মিলিমুলি খেই।...চাকমা কবিতা...ও আমার ভাই বন্ধুরা চল চল সকলে মিলে জুম কাটতে যাই/ বড় বড় পাহাড়ের চূড়ায়/ দূরের পূর্ব ছড়ার শেষ সীমানায়/আগে জুম করা ভূমিগুলো উর্বর হয়েছে/এ বছর মিলে-মিশে সেগুলো চাষ করে খাবো।...জুম কাবা, সলিল রায়, রান্যাফুল।]

Saturday, July 10, 2010

টোস্টার…


এক.হাভাতে বুড়িটি ভাতের সন্ধানেই কোনো এক আত্নীয় সঙ্গে ঢাকায় এসেছিলেন। তার জন্ম উত্তরবঙ্গের বৃহত্তর রংপুরের মঙ্গা পীড়িত কোনো এক দূর্গম গ্রামে। তাই আমাদের বুঝতে অসুবিধা হয় না, অনিবার্য এক অচিন ক্ষুধা আজন্ম চিটচিটে ঘামের মতো লেপ্টে থাকে তার জঠরে, গতরে এবং সর্বাঙ্গে। বুড়ির জীবনের গল্পটিও তাই মঙ্গা উপদ্রুত অন্চলের অন্যান্য বুড়ির মতো অতি সংক্ষিপ্ত এবং স্যাঁতসেঁতে টাইপের পুরনো। তাই আসুন, এই পর্বটুকু আমরা বরং এক বাক্যেই সেরে নেই :

Sunday, July 4, 2010

শিরোনামহীন

আম পাতা জোড়া জোড়া 
তৎকালে লোকে প্রেমকে লাইন বলিতো। আমাদিগকে বলা হইয়াছিলো, ইহা ভালো নয়। ভাবেসাবে আমরা বুঝিয়াছিলাম, লাইন একটি বখাটেপনা, সামাজিক অপরাধ বিশেষ। …

এই ঢাকা তখন সেই ঢাকা ছিলো না। ফুলবাড়িয়াতে ছিলো রেল স্টেশন। রিকশাই ছিলো সর্বত্র জনপ্রিয় বাহন। ইপিআরটিসি’র লাল দোতলা বাস বিআরটিসি হইয়াছে মাত্র। বাবার হাত ধরিয়া সেই দোতলা বাসে চাপিয়া মিরপুর-ফুলবাড়িয়া ভ্রমন করিয়া জীবনকে মনে হইয়াছিলো সার্থক। রমনা পার্কের দোলনায় আবার কবে চড়িবো, সেই ভাবনায় ছোট্ট শিশু মন কতই না রঙিন স্বপ্ন আঁকিয়াছিলো। …কিন্তু ‘ছেলেধরা’ নামক আতঙ্কে আমাদের ঘরে বন্দি থাকিতে হইতো। গ্রাম হইতে আসা ‘কামলা’ অমুক ভাইয়ের হাত ধরিয়া ইস্কুল-বাসা-দোতলা বাসার ছাদ অবধি ছিলো আমাদের দৌরাত্ন।

Wednesday, June 30, 2010

বাংলা ব্লগের অপ-শব্দসমূহ…


বাংলা ব্লগের ভাষা ও দিকদর্শন’ শিরোনামের লেখাটি রচনার সময় মনে হয়েছে, ব্লগে অনেক সময়ই যে সব সাংকেতিক ভাষা ব্যবহার করা হয়, তা নতুন ব্লগার বা সাধারণের কাছে তেমন পরিচিত নয়। আবার সুধী সমাজে এ সব ব্লগীয় অপ-শব্দ অশ্লীল হওয়াটাও বিচিত্র নয়। এমন চিন্তা থেকে বাংলা ব্লগের অপ-শব্দসমূহ একত্র করার উদ্যোগ নিয়েছি।
বলা ভালো, এটি মোটেই কোনো গূঢ় গবেষণাকর্ম নয়। নিছকই ব্লগাড্ডা মাত্র। তবে এটি রীতিমত প্রাপ্তমনস্কদের জন্য লেখা। সকলের সহযোগিতা কাম্য। হ্যাপি ব্লগিং।

Saturday, June 26, 2010

দেশহীন মানুষের উপখ্যান…

কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং পাহাড়ের ওপর ঝুঁকিপূর্ণভাবে গড়ে তোলা ঘিঞ্জি রোহিঙ্গা শিবিরটির নীচে দাঁড়াতেই বিশাল বস্তিটির বিশ্রী বোটকা গন্ধ নাকে এসে ধাক্কা দেয়। তথ্য-সাংবাদিকতার পেশাগত কাজে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরনার্থী শিবির এবং ১৯৯৬-৯৭ সালে ত্রিপুরার পাহাড়ি শরনাথী শিবির একাধিকবার পরিদর্শন করা গেছে। কিন্তু ‘আন-রেজিস্ট্রার্ড রোহিঙ্গা টাল’ নামক উখিয়ার এই বস্তিটির চরিত্রর সঙ্গে আগের অভিজ্ঞতার তেমন কোনো মিল নেই।
ওপারে মিয়ানমার থেকে এখানে এসে বছর তিনেক ধরে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা কেউই শরনার্থীর মর্যাদা পাননি। সরকারি খাতাপত্রেও তাদের শরনার্থী হিসেবে নাম নেই। একই কারণে তাদের যেনো দুর্ভোগেরও কোনো শেষ নেই।

Thursday, June 10, 2010

কল্পনা চাকমা এখন কোথায়?


[জ্বলি ন’ উধিম কিত্তেই!/ যিয়ান পরানে কয় সিনে গরিবে/ বযত্তান বানেবে বিরানভূমি/ ঝারান বানেবে মরুভূমি/ গাভুর বেলরে সাঝ/ সরয মিলেরে ভাচ।...ভাবানুবাদ: রুখে দাঁড়াবো না কেন!/ যা ইচ্ছা তাই করবে/ বসত বিরানভূমি/ নিবিড় অরণ্য মরুভূমি,/ সকালকে সন্ধ্যা/ ফলবতীকে বন্ধ্যা।...কবিতা চাকমা।]
যতবারই দূর পাহাড়ে যাই, ততবারই মনে পড়ে হারিয়ে যাওয়া পাহাড়ি মেয়ে কল্পনা চাকমার কথা। আজ থেকে ঠিক ১৪ বছর আগে, ১৯৯৬ সালের ১২ জুন রাঙামাটির দুর্গম বাঘাইছড়ির নিউ লাইল্যাঘোনা গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে অপিত হন তিনি। কল্পনা চাকমা ছিলেন হিল ইউমেন্স ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদিকা। …

Tuesday, May 18, 2010

গেরিলা নেতা এমএন লারমা



[পৃথিবীতে যুদ্ধ দুইভাগে বিভক্ত; একটি ন্যায় যুদ্ধ, আরেকটি অন্যায় যুদ্ধ। আমরা ন্যায়যুদ্ধের পক্ষে। -- মাওসেতুং।]
০১। সেই সাতের দশকের নকশালী আন্দোলন থেকে শুরু করে এ দেশে যত গেরিলা যুদ্ধ গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে, চরম আত্নত্যাগ থাকা সত্বেও জনবিচ্ছিন্নতা, গোষ্ঠি বিপ্লবী মানসিকতাসহ নানা সীমাবদ্ধতার কারণে এর সব কয়টি শেষ পর্যন্ত ব্যর্থতায় পরিনত হয়েছে– একমাত্র মানবেন্দ্র নারায়ন (এমএন) লারমার প্রতিষ্ঠিত সাবেক গেরিলা গ্রুপ শান্তিবাহিনী ছাড়া।

Friday, May 14, 2010

সিরাজ সিকদার: অন্য আলোয় দেখা


[এসএস'কে নিয়ে এ পর্যন্ত কম লেখা হয়নি। বেশীরভাগ লেখাই কোনো দলীয়স্বার্থ পূরণের জন্য। অনেকে ব্যক্তি এসএস'র জীবন নিয়ে ঘাঁটাঘাটি করে তার বিপ্লবীত্বকে খাটো করেছেন। কেউ তাকে 'ভুল/বেহাত বিপ্লব'এর দোসর বলেই মূল্যায়নটি শেষ করতে চান। এই সব দৃষ্টিভঙ্গির বাইরে বলে লেখার শিরোনামে 'অন্য আলোয় দেখা' কথাটি যুক্ত করা হয়েছে। এটি মোটেই এসএস'র কর্মকাণ্ডের সামগ্রীক মূল্যায়ন নয়। এটি ভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকে নির্মোহভাবে এই শহীদ দেশপ্রেমিক বিপ্লবীকে দেখার একটি ছোট্ট প্রয়াস।]
আর কয়েকটা শত্রু খতম হলেই তো গ্রামগুলো আমাদের/ জনগণ যেনো জল, গেরিলারা মাছের মতো সাঁতরায়...: সিরাজ সিকদার।
অস্ত্র কোনো নির্ধারক শক্তিনয়, নির্ধারক শক্তি হচ্ছে মানুষ। সংগঠিত জনগণ অ্যাটম বোমার চেয়েও শক্তিশালী।:মাওসেতুং।

Monday, May 10, 2010

আছিয়া…


মেয়েটি কোনো বলিউড বা ঢাকাই ছবির হিট নায়িকা শাবনুর, শাবনাজ, শাহনূর–এ রকম কোনো চটকদার নাম বলেনি। নারায়নগঞ্জের গোদনাইলের সরকারি ভবঘুরে আশ্রয় কেন্দ্রের অন্য ভাসমান পতিতাদের ভীড়ে অল্প বয়সী ফর্সা মতোন মেয়েটি একটু দূরে একা দাঁড়িয়ে ছিলো। তার কোলে এক রত্তি একটি দুধের শিশু। সে বোধহয় সেদিন তার সত্যিকারের নামটিই আমাকে বলেছিলো, আমার নাম আছিয়া, আছিয়া বেগম। ...

আমি ও আরেক সহকর্মি মুন্নী সাহার সঙ্গে ভবঘুরে আশ্রয় কেন্দ্রটি ঘুরে ঘুরে সেখানের আশ্রিতাদের সমস্যার কথা শুনছিলাম, নোট নিচ্ছিলাম দ্রুত, মুন্নী আপা অটো ক্যামেরায় সাদা-কালো ছবি তুলছিলেন। সেটা ১৯৯৯ সালের কথা; আমরা দুজনেই তখন ভোরের কাগজের রিপোর্টার।

Wednesday, May 5, 2010

চিকা মারো ভাই, চিকা মারো…


["দেয়ালে দেয়ালে, মনের খেয়ালে/ লিথি কথা/ আমি যে বেকার, পেয়েছি লেখার স্বাধীনতা।"...]
০১.
আমার নকশালাইট বাবা আজিজ মেহেরের কাছে শুনেছি চিকা মারার (দেয়াল লিখন) ইতিকথা। ‘৭০ সালে কমরেড মনি সিং যখন পাকিস্তান সামরিক জান্তার কারাগার বন্দি হন, তখন পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষে তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঢাকার কালো রাজপথে সাদা চুন দিয়ে লিখেছিলেন:

কমরেড মনি সিং এর মুক্তি চাই!

তবে চিকা মারা নাকি শুরু হয়েছিলো ১৯৬৯ এর গণ অভ্যূত্থানের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সে সময় ছাত্ররা জিগা গাছের ডালের এক মাথা থেঁতো করে বানাতো ব্রাশ। আর আলকাতরা দিয়ে দেয়ালে লেখা হতো স্বাধীনতাকামী নানা শ্লোগান।

Saturday, April 10, 2010

বিঝু ফেগ ডাকে, বিঝু বিঝু…


চাকমা ভাষায় ‘ফেগ’ কথাটির মানে হচ্ছে পাখি। বিঝু পাখি আমি কখনো দেখিনি, তবে শুনেছি, ছোট্ট এই রঙিন পাখিটি নাকি বিঝুর সময় অবিকল ‘বিঝু-বিঝু’ করে ডেকে ওঠে। তাই চাকমা লোকগানে গুনবন্দনা করা হয়েছে এই পাখির। তখন নাকি দূর পাহাড়ে পাপড়ি মেলে বিঝু ফুল।
ওহ, বলতে ভুলে গেছি, বিঝু হচ্ছে চাকমাদের সবচেয়ে বড় সামাজিক উৎসব। রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান– এই তিন জেলা নিয়ে গড়ে ওঠা পার্বত্য চট্টগ্রাম বিঝুকে ঘিরে যেনো নতুন করে সাজে প্রতিবছর অন্য রকম এক আনন্দে।

Tuesday, April 6, 2010

পার্বত্য চট্টগ্রাম এখনো বিদ্রোহ অধ্যুষিত অঞ্চল!




০১। সাবেক গেরিলা নেতা, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় (সন্তু) লারমা ১৯৯৯ সালের মধ্যভাগে রাঙামাটিতে আঞ্চলিক পরিষদের জমকালো অভিষেক অনুষ্ঠানে যে বক্তব্যটি দিয়েছিলেন, তাতে তিনি স্পষ্টই অভিযোগ করেছিলেন, পার্বত্য শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের (১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর) আগে পাহাড়ে সেনাবাহিনীর ‘অপারেশন দাবানল’ চলছিল। শান্তিচুক্তির পর সেখানে শুরু হয়েছে ‘অপারেশন উত্তরণ’। প্রশাসন, উন্নয়ন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ সর্বত্র সেনাবাহিনী বেসামরিক প্রশাসনের ওপর কর্তৃত্ব করে চলেছে। এটি আসলে পরোক্ষ সেনাশাসন। সন্তু লারমা তাঁর ভাষণে প্রশ্ন রাখেন, কোথায় আজ কল্পনা চাকমা? তাঁকে কেন নিখোঁজ হতে হলো?

Thursday, March 25, 2010

বেতারে খুনিরা যা বলেছিল

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কারফিউ জারি করে মধ্যরাতে পাকিস্তানি সেনারা পুরো ঢাকায় যে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালায়, তার আনুষ্ঠানিক নাম ছিল 'অপারেশন সার্চলাইট'। এটি ছিল মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রহরে বাঙালির স্বাধীনতার আন্দোলনকে চিরতরে বুলেটে স্তব্ধ করে দেওয়ার নীলনকশা।

ঢাকার খিলগাঁওয়ের চৌধুরীপাড়ার বাসায় বসে সেদিন রাত দেড়টা থেকে পরদিন সকাল ৯টা পর্যন্ত পাকিস্তানি সেনাদের বেতারবার্তা রেকর্ড করেছিলেন আণবিক শক্তি কেন্দ্রের পদার্থবিজ্ঞানবিদ ড. এম এম হোসাইন। তাঁর রেকর্ডকৃত বেতারবার্তার স্ক্রিপ্টে দেখা যায় পাকিস্তানি সেনাদের বেশ কিছু সামরিক সংকেত ব্যবহার করতে। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজারবাগ পুলিশ লাইন ও পিলখানায় অপারেশনের দায়িত্বে থাকা ইউনিটগুলোর কথোপকথনের ধারাভাষ্য থেকে বাঙালি নিধনের খণ্ডচিত্র ফুটে ওঠে। একই সঙ্গে মূর্ত হয় প্রতিরোধের লড়াইও।

'চোখের সামনেই ওরা গুলি করে বাবা মা ভাই বৌদিকে'


বায়ান্ন, একাত্তর, নব্বইসহ বাংলাদেশের প্রতিটি গণ-আন্দোলনের সূতিকাগার হিসেবে পরিচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের সদা হাস্যোজ্জ্বল, সবার প্রিয় মধুদাকে (মধুসূদন দে) পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ ভোরে ছোট ছোট ছেলেমেয়ের সামনে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে। একই সঙ্গে তারা গুলি করে হত্যা করে মধুদা'র স্ত্রী যোগমায়া দে, তাঁর বড় ছেলে রঞ্জিত কুমার দে ও পুত্রবধূ রীনা রানী দে'কে। এই চার-চারটি হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী মধুর ক্যান্টিনের বর্তমান পরিচালক ও শহীদ মধুদার ছোট ছেলে অরুণ কুমার দে। দৈনিক কালের কণ্ঠের সঙ্গে আলাপচারিতায় সে সময়ের ১০ বছরের শিশু অরুণ জানাচ্ছেন সেই নির্মম অভিজ্ঞতার কথা।

Friday, March 19, 2010

বন্ধ হয়ে গেল ‘কনসার্ট ফর বাঘাইহাট ভিক্টিমস’!


পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের নির্দেশে বন্ধ হয়ে গেছে ’কনসার্ট ফর বাঘাইহাট ভিক্টিমস’! রাঙামাটির বাঘাইহাটে সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তা দেওয়ার জন্য ১৯ মার্চ, শুক্রবার বিকাল ৩টায় জেলার রাজবাড়ি অফিস মাঠে এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল।

অনুষ্ঠানের অন্যতম উদ্যোক্তা কালায়ন চাকমা সকালে টেলিফোনে আমাকে এই খবরটি দেন। তিনি বলেন, ‘এটি কোনো রাজনৈতিক অনুষ্ঠান নয়। তারপরেও একেবারে শেষ মুহূর্তে কোন কারণ ব্যাখা না করেই তা বন্ধ করে দেওয়া সত্যিই খুব বিস্ময়কর। এতে আমাদের বিপুল আয়োজন ও পরিশ্রম পুরোটাই নষ্ট হয়ে গেল।’

Sunday, March 7, 2010

৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণটি যেভাবে রেডিওতে প্রচার হলো…


১৯৭১ এর মার্চ মাসের সময়টা ছিলো ভয়ঙ্কর। তারপরও সেই ভয়ঙ্কর দিনগুলোতে পাকিস্তান রেডিওর ঢাকা কেন্দ্রের কয়েক জন দুঃসাহসী কর্মকর্তা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক সে ভাষণ সম্প্রচার করেছিলেন।

পাকিস্তানি সামরিক জান্তার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানের জনসভায় শেখ মুজিব যে ভাষণ দেন তা সম্প্রচারের জন্য দুঃসাহসী সেসব কর্মকর্তাদের কাছে জাতি চীর কৃতজ্ঞ।

অগ্নিঝরা সেই ভাষণের বিষয়বস্তু পৌঁছে গিয়েছিলো বাংলাদেশের প্রতিটি প্রান্তে। এ ভাষণের মধ্য দিয়েই বাঙালির নেতা পাকিস্তান সরকারের সাথে যাবতীয় সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা করেন। এ ভাষণের বাঙালির স্বাধিকারের আকাঙ্খাকে আরও উস্কে দিয়েছিলো। আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলো জনগণের মনে।

Thursday, February 25, 2010

পাহাড়ে কেন এত সহিংসতা?

ন’ সাঙ যেবার এই জাগান ছাড়ি/ইদু আগং মুই জনমান ধরি/এই জাগান রইয়েদে মর মনান জুড়ি…চাকমা গান…এই জায়গা ছেড়ে আমি যাব না/এখানেই জন্ম-জন্মান্তর থেকে আমি আছি/এই জায়গা আমার মন জুড়ে রয়েছে।…
১। কিছুদিন আগে বান্দরবানের দুর্গম নাইক্ষ্যংছড়ির উপজেলা চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। তিনি গর্ব করে নিজ পরিচয় দিয়ে বললেন, আমার বাড়ি চট্টগ্রামে। বেশ কয়েক বছর আগে আমি ব্যবসায়িক কাজে নাইক্ষ্যংছড়িতে এসে আর ফিরে যাইনি। সেখানেই বসতি গড়েছি, বিপুল ভোটে উপজেলা চেয়ারম্যান হয়েছি। এর আগে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানও হয়েছিলাম। ইনশাল্লাহ, আমার এলাকায় আগামী পাঁচ-ছয় বছরে সব কয়টি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি পদে বাঙালিরাই নির্বাচিত হবেন, কোনো পাহাড়ি নন। এলাকায় বাঙালি ভোটারের সংখ্যাও বাড়ছে।