১৯৭১
সালের ২৫ মার্চ কারফিউ জারি করে মধ্যরাতে পাকিস্তানি সেনারা পুরো ঢাকায় যে
নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালায়, তার আনুষ্ঠানিক নাম ছিল 'অপারেশন সার্চলাইট'। এটি
ছিল মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রহরে বাঙালির স্বাধীনতার আন্দোলনকে চিরতরে
বুলেটে স্তব্ধ করে দেওয়ার নীলনকশা।
ঢাকার খিলগাঁওয়ের চৌধুরীপাড়ার বাসায় বসে সেদিন রাত দেড়টা থেকে পরদিন সকাল ৯টা পর্যন্ত পাকিস্তানি সেনাদের বেতারবার্তা রেকর্ড করেছিলেন আণবিক শক্তি কেন্দ্রের পদার্থবিজ্ঞানবিদ ড. এম এম হোসাইন। তাঁর রেকর্ডকৃত বেতারবার্তার স্ক্রিপ্টে দেখা যায় পাকিস্তানি সেনাদের বেশ কিছু সামরিক সংকেত ব্যবহার করতে। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজারবাগ পুলিশ লাইন ও পিলখানায় অপারেশনের দায়িত্বে থাকা ইউনিটগুলোর কথোপকথনের ধারাভাষ্য থেকে বাঙালি নিধনের খণ্ডচিত্র ফুটে ওঠে। একই সঙ্গে মূর্ত হয় প্রতিরোধের লড়াইও।
এসব বেতারবার্তায় 'ইমাম' বলতে গ্রুপ কমান্ডার ও 'মেইন বার্ড' বলতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বোঝানো হয়েছে। ইংরেজি-উর্দুতে মেশানো দীর্ঘ এই বেতারবার্তাটি সংগ্রহ ও অনুবাদ করেছেন অমি রহমান পিয়াল।পাকিস্তানি সেনাদের বেতারবার্তার স্ক্রিপ্টে দেখা যায়, কন্ট্রোল রুম ২৬, ৭৭, ৮৮ ও ৯৯ নম্বর ইউনিটকে নির্দেশ দিয়ে বলছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল ও ইকবাল হলসহ (বর্তমানে সার্জেন্ট জহুরুল হক ছাত্রাবাস) ক্যাম্পাস এলাকার বড় বড় ভবন গুঁড়িয়ে দিতে। এই ছাত্রাবাস দুটি থেকে আসা পাল্টা প্রতিরোধ যুদ্ধ স্তব্ধ করার জন্যও ইউনিটগুলোকে বারবার নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে ইউনিটগুলোকে কড়া নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে, মাইকে কারফিউ জারির কথা ঘোষণার পাশাপাশি এটিও প্রচার করতে, যেন কোথাও স্বাধীন বাংলার পতাকা বা কালো পতাকা উড়তে দেখা না যায়। পতাকা ওড়ানো বাড়িওয়ালাদের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার জন্যও নির্দেশ দেওয়া হয়। কন্ট্রোল রুম ইউনিটগুলোকে আরো নির্দেশ দিচ্ছে নগরীর সড়কগুলো থেকে ব্যারিকেড সরিয়ে ফেলতে। যেখানেই ব্যারিকেড দেখা যাবে, এর আশপাশের ঘরবাড়িতে গুলি চালাতে।
বেতারবার্তায় দেখা যায়, একই সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজারবাগ পুলিশ লাইন ও পিলখানায় সামরিক অভিযান চালানোর সময় পাকিস্তানি সেনারা পাল্টা প্রতিরোধ লড়াইয়ের মুখোমুখি হয়। কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে ৪১, ৫৫, ৮৮, ৯৯ ও ২০০০ নম্বর ইউনিটের কথোপকথনে দেখা যায়, অভিযানের শুরুতে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা এই তিনটি স্থান দখল করতে পারেনি। বরং রাজারবাগ পুলিশ লাইন ও পিলখানায় কঠিন প্রতিরোধ যুদ্ধ চলেছে। পুলিশ বাহিনী ও তৎকালীন সীমান্তরক্ষী বাহিনী ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস_ইপিআরের মুক্তিকামী বাঙালিরা প্রধানত থ্রিনটথ্রি রাইফেল সম্বল করে পাকিস্তানি সেনাদের সাঁজোয়া যান, কামান, এম-২৪ ট্যাঙ্ক, মেশিনগান, রিকোয়েলস রাইফেল ইত্যাদি ভারী অস্ত্রশস্ত্রের বিরুদ্ধে আমরণ লড়াই করেন। এমনকি একপর্যায়ে হামলাকারীরা শক্তি বৃদ্ধি করতে সেনানিবাস থেকে গোলন্দাজ বাহিনীও তলব করতে বাধ্য হয়। স্থানীয় সেনা ইউনিটগুলো আহত বেশ কজন পাকিস্তানি সেনাকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করার বিষয়েও কন্ট্রোল রুমকে অবহিত করে।
অন্যদিকে কন্ট্রোল রুম ৪১ নম্বর ইউনিটকে নির্দেশ দেয়, আক্রমণের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার রেললাইন (পলাশী এলাকায়) দিয়ে যেন কেউ পালাতে না পারে। তবে কোনো প্রতিরোধ ছাড়াই পাকিস্তানি সেনারা টেলিভিশন ও রেডিওর সদর দপ্তর, রমনা থানা, কমলাপুর থানা এবং টেলিফোন এক্সচেঞ্জ দখল করে। একই সঙ্গে তারা বুড়িগঙ্গা নদীতেও নামায় গানবোট।
পাকিস্তানি সেনাদের ওই বেতারবার্তায় ধরা পড়ে, রাজারবাগ পুলিশ লাইন, শাহবাগের পিপলস ডেইলি সংবাদপত্র ধ্বংস করে দেওয়া হয়। 'সেখানে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে'_কন্ট্রোল রুমের কাছে স্থানীয় ৯৯ ও ৮৮ নম্বর সেনা ইউনিট এমন রিপোর্টও করে। ৪১ নম্বর ইউনিট কন্ট্রোল রুমের কাছে জানতে চায়, মোহাম্মদপুরের শারীরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (পরে সেখানে আলবদর সদর দপ্তর বসানো হয়) এলাকায় রাস্তায় ব্যারিকেড সৃষ্টিকারী যেসব 'দুষ্কৃতকারী'কে আটক করা হয়েছে, তাদের মেরে ফেলা হবে কি না। জবাবে বলা হয় তাদের দিয়ে ব্যারিকেড সরিয়ে ফেলতে। 'খতম'-এর বিষয়ে পরে জানানো হবে।
অপর বার্তায় দেখা যায়, কন্ট্রোল রুম ২৬ নম্বর ইউনিটের কাছে জানতে চায় আলফা-লিমা (আওয়ামী লীগ-এর সামরিক সংকেত) কার্যালয় দখল করা হয়েছে কি না। জবাবে বলা হয়, সেটি ভোরবেলায় দখল করা হবে। কন্ট্রোল রুম বারবার ২৬ ও ৭৭ নম্বর ইউনিটকে নির্দেশ দেয়, ভোর হওয়ার আগেই যেন সব লাশ সরিয়ে ফেলা হয়। এই বার্তা উর্দুতে অন্যান্য ইউনিটের কাছে পুনঃপ্রচার করার জন্যও নির্দেশ দেওয়া হয়। http://www.kalerkantho.com/print_edition/index.php?view=details&type=gold&data=Food&pub_no=115&cat_id=1&menu_id=106&news_type_id=1&index=2&archiev=yes&arch_date=25-03-2010#.VRKQTo4rAdU
ঢাকার খিলগাঁওয়ের চৌধুরীপাড়ার বাসায় বসে সেদিন রাত দেড়টা থেকে পরদিন সকাল ৯টা পর্যন্ত পাকিস্তানি সেনাদের বেতারবার্তা রেকর্ড করেছিলেন আণবিক শক্তি কেন্দ্রের পদার্থবিজ্ঞানবিদ ড. এম এম হোসাইন। তাঁর রেকর্ডকৃত বেতারবার্তার স্ক্রিপ্টে দেখা যায় পাকিস্তানি সেনাদের বেশ কিছু সামরিক সংকেত ব্যবহার করতে। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজারবাগ পুলিশ লাইন ও পিলখানায় অপারেশনের দায়িত্বে থাকা ইউনিটগুলোর কথোপকথনের ধারাভাষ্য থেকে বাঙালি নিধনের খণ্ডচিত্র ফুটে ওঠে। একই সঙ্গে মূর্ত হয় প্রতিরোধের লড়াইও।
এসব বেতারবার্তায় 'ইমাম' বলতে গ্রুপ কমান্ডার ও 'মেইন বার্ড' বলতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বোঝানো হয়েছে। ইংরেজি-উর্দুতে মেশানো দীর্ঘ এই বেতারবার্তাটি সংগ্রহ ও অনুবাদ করেছেন অমি রহমান পিয়াল।পাকিস্তানি সেনাদের বেতারবার্তার স্ক্রিপ্টে দেখা যায়, কন্ট্রোল রুম ২৬, ৭৭, ৮৮ ও ৯৯ নম্বর ইউনিটকে নির্দেশ দিয়ে বলছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল ও ইকবাল হলসহ (বর্তমানে সার্জেন্ট জহুরুল হক ছাত্রাবাস) ক্যাম্পাস এলাকার বড় বড় ভবন গুঁড়িয়ে দিতে। এই ছাত্রাবাস দুটি থেকে আসা পাল্টা প্রতিরোধ যুদ্ধ স্তব্ধ করার জন্যও ইউনিটগুলোকে বারবার নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে ইউনিটগুলোকে কড়া নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে, মাইকে কারফিউ জারির কথা ঘোষণার পাশাপাশি এটিও প্রচার করতে, যেন কোথাও স্বাধীন বাংলার পতাকা বা কালো পতাকা উড়তে দেখা না যায়। পতাকা ওড়ানো বাড়িওয়ালাদের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার জন্যও নির্দেশ দেওয়া হয়। কন্ট্রোল রুম ইউনিটগুলোকে আরো নির্দেশ দিচ্ছে নগরীর সড়কগুলো থেকে ব্যারিকেড সরিয়ে ফেলতে। যেখানেই ব্যারিকেড দেখা যাবে, এর আশপাশের ঘরবাড়িতে গুলি চালাতে।
বেতারবার্তায় দেখা যায়, একই সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজারবাগ পুলিশ লাইন ও পিলখানায় সামরিক অভিযান চালানোর সময় পাকিস্তানি সেনারা পাল্টা প্রতিরোধ লড়াইয়ের মুখোমুখি হয়। কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে ৪১, ৫৫, ৮৮, ৯৯ ও ২০০০ নম্বর ইউনিটের কথোপকথনে দেখা যায়, অভিযানের শুরুতে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা এই তিনটি স্থান দখল করতে পারেনি। বরং রাজারবাগ পুলিশ লাইন ও পিলখানায় কঠিন প্রতিরোধ যুদ্ধ চলেছে। পুলিশ বাহিনী ও তৎকালীন সীমান্তরক্ষী বাহিনী ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস_ইপিআরের মুক্তিকামী বাঙালিরা প্রধানত থ্রিনটথ্রি রাইফেল সম্বল করে পাকিস্তানি সেনাদের সাঁজোয়া যান, কামান, এম-২৪ ট্যাঙ্ক, মেশিনগান, রিকোয়েলস রাইফেল ইত্যাদি ভারী অস্ত্রশস্ত্রের বিরুদ্ধে আমরণ লড়াই করেন। এমনকি একপর্যায়ে হামলাকারীরা শক্তি বৃদ্ধি করতে সেনানিবাস থেকে গোলন্দাজ বাহিনীও তলব করতে বাধ্য হয়। স্থানীয় সেনা ইউনিটগুলো আহত বেশ কজন পাকিস্তানি সেনাকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করার বিষয়েও কন্ট্রোল রুমকে অবহিত করে।
অন্যদিকে কন্ট্রোল রুম ৪১ নম্বর ইউনিটকে নির্দেশ দেয়, আক্রমণের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার রেললাইন (পলাশী এলাকায়) দিয়ে যেন কেউ পালাতে না পারে। তবে কোনো প্রতিরোধ ছাড়াই পাকিস্তানি সেনারা টেলিভিশন ও রেডিওর সদর দপ্তর, রমনা থানা, কমলাপুর থানা এবং টেলিফোন এক্সচেঞ্জ দখল করে। একই সঙ্গে তারা বুড়িগঙ্গা নদীতেও নামায় গানবোট।
পাকিস্তানি সেনাদের ওই বেতারবার্তায় ধরা পড়ে, রাজারবাগ পুলিশ লাইন, শাহবাগের পিপলস ডেইলি সংবাদপত্র ধ্বংস করে দেওয়া হয়। 'সেখানে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে'_কন্ট্রোল রুমের কাছে স্থানীয় ৯৯ ও ৮৮ নম্বর সেনা ইউনিট এমন রিপোর্টও করে। ৪১ নম্বর ইউনিট কন্ট্রোল রুমের কাছে জানতে চায়, মোহাম্মদপুরের শারীরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (পরে সেখানে আলবদর সদর দপ্তর বসানো হয়) এলাকায় রাস্তায় ব্যারিকেড সৃষ্টিকারী যেসব 'দুষ্কৃতকারী'কে আটক করা হয়েছে, তাদের মেরে ফেলা হবে কি না। জবাবে বলা হয় তাদের দিয়ে ব্যারিকেড সরিয়ে ফেলতে। 'খতম'-এর বিষয়ে পরে জানানো হবে।
অপর বার্তায় দেখা যায়, কন্ট্রোল রুম ২৬ নম্বর ইউনিটের কাছে জানতে চায় আলফা-লিমা (আওয়ামী লীগ-এর সামরিক সংকেত) কার্যালয় দখল করা হয়েছে কি না। জবাবে বলা হয়, সেটি ভোরবেলায় দখল করা হবে। কন্ট্রোল রুম বারবার ২৬ ও ৭৭ নম্বর ইউনিটকে নির্দেশ দেয়, ভোর হওয়ার আগেই যেন সব লাশ সরিয়ে ফেলা হয়। এই বার্তা উর্দুতে অন্যান্য ইউনিটের কাছে পুনঃপ্রচার করার জন্যও নির্দেশ দেওয়া হয়। http://www.kalerkantho.com/print_edition/index.php?view=details&type=gold&data=Food&pub_no=115&cat_id=1&menu_id=106&news_type_id=1&index=2&archiev=yes&arch_date=25-03-2010#.VRKQTo4rAdU
No comments:
Post a Comment