অবশেষে জামিন পেলেন বাংলাদেশের মুন্সীগঞ্জের বিজ্ঞানের শিক্ষক হৃদয় মণ্ডল। খবরে প্রকাশ, ধর্মানুভুতিতে আঘাত দেওয়ার মামলায় ১৯ দিন কারাবাসের পর জেলা ও দায়রা জজ আদালত রোববার তার জামিন মঞ্জুর করেন।
গত ২০ মার্চ দশম শ্রেণির একটি অনির্ধারিত ক্লাসে গিয়ে ছাত্রদের সঙ্গে বিজ্ঞান নিয়ে আলোচনা করছিলেন হৃদয় মণ্ডল। এ সময় একদল ছাত্র বিজ্ঞানের সঙ্গে ধর্মের তুলনা করে কিছু প্রশ্ন করে। হৃদয় মণ্ডল সেগুলোর জবাব দেন। কিন্ত ছাত্রদের একাংশ গোপনে ওই আলোচনা মোবাইলে রেকর্ড করে ছড়িয়ে দেয়। যদিও উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্রদের শ্রেণিকক্ষে মোবাইল ফোন ব্যবহারের অনুমতি নাই।
দুদিন পর কিছু ছাত্র ও স্থানীয় লোকজন মিলে হৃদয় মণ্ডলের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে। পরে পুলিশ গিয়ে তাকে থানায় নিয়ে যায়। স্কুল কর্তৃপক্ষ তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে। ওই রাতেই স্কুলের এক অফিস সহকারী বাদী হয়ে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে মামলা করলে সেই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলকে।
সবশেষ, ২৮ মার্চ মুন্সীগঞ্জের বিচারিক হাকিম আদালতে জামিন আবেদন করেন হৃদয়, তা নাকচ করা হয়। এরপর সোমবার জেলা ও দায়রা জজ আদালতও তার জামিন নাকচ করে।
এদিকে ঢাকায় এক পুলিশ কনস্টেবলের টিপ কাণ্ডের পর হৃদয় মণ্ডলের হেনস্থা প্রগতিশীল, অসাম্প্রদায়িক মানুষকে উদ্বিগ্ন করে। তারা সন্দেহ প্রকাশ করেন, এই কথিত ধর্মানুভুতি নিয়ে।
খবরে প্রকাশ, এর আগে রাজধানী ঢাকার ব্যস্ততম ফার্মগেটে তেজগাঁও কলেজের প্রভাষক লতা সমাদ্দার তার টিপ পরা নিয়ে হেনস্তার অভিযোগ করেন পুলিশ সদস্য নাজমুল তারেকের বিরুদ্ধে। পরে নাজমুলকে শনাক্ত করে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। নাজমুল তারেক ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) প্রোটেকশন বিভাগে কর্মরত ছিলেন। নাজমুল ওই শিক্ষককে ‘টিপ পরছোস কেন’ বলেই বাজে গালি দেন। এর প্রতিবাদ করায় তিনি শিক্ষকের পায়ের ওপর দিয়ে মটরসাইকেল চালিয়ে দেন। পরে হেনস্থার শিকার শিক্ষক ওই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ইভ টিজিং ও প্রাণনাশের চেষ্টার অভিযোগে ফৌজদারি মামলা করেন।
এই নারী স্বাধীনতা ও সাম্প্রায়িক আচরণের প্রতিবাদে প্রগতিশীল নাগরিক সমাজ, ছাত্র-ছাত্রী, নারীবাদিসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ অনলাইন ও অফলাইনে প্রতিবাদ জানান। শিগগিরই চিহ্নিত পুলিশ সদস্য নাজমুলকে শনাক্ত করে জেল হাজতে পাঠানো হয়।
এরপর পরই ধর্মান্ধ মৌলবাদী গোষ্ঠি টিপের বিকল্প হিসেবে বাংলাদেশে হিজাব পরার কারণে মেয়েরা নাকি হেনস্থার শিকার হচ্ছেন, অনলাইনে এমন কাল্পনিক গোষ্ঠিবদ্ধ গাল-গল্প তুলতে থাকেন। বলা ভাল, ভারতের কর্নাটকে হিজাব বিতর্কের পর থেকেই এপারে মৌলবাদী গোষ্ঠি পাল্টা আঘাতের জন্য মুখিয়ে ছিলেন।
আর কিছুদিন আগেই দুর্গা পূজাকে কেন্দ্র করে ছক কাটার মৌলবাদী নকশায় একের পর এক মন্দির ও মণ্ডপ পুড়েছে। হিন্দুদের ঘর-বাড়ি-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন দেওয়া হয়েছে। খুন হয়েছেন বেশ কয়েকজন। তবে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপে খুব দ্রুতই পরিস্থিতি নাগালের বাইরে যাওয়ার আগে সামাল দেওয়া গেছে।
এদিকে গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে খুব দ্রুতই বিজানশিক্ষক হৃদয় মণ্ডল যে মৌলবাদী গোষ্ঠির আরেক ছকের শিকার, তা বেরিয়ে আসে। খবরে প্রকাশ, সুপরিকল্পিতভাবে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা, ধর্ম অবমাননার কিছুই বলেননি শিক্ষক হৃদয় মণ্ডল |
এবারো তার পক্ষে দাঁড়িয়েছে সেই শাহবাগ, ২০১৩ সালে যা যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ বিচারের দাবিতে গণবিস্ফোরণ ঘটিয়ে একাত্তরের লাল-সবুজ চেতনা সমুজ্জ্বল রেখে চলেছে। বিজ্ঞান, ধর্মনিরপেক্ষতা ও কুপমুণ্ডুকতার প্রতিবাদ হচ্ছে দেশের বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে। পাহাড় থেকে সমতলে ছড়িয়েছে প্রগতির প্রতিবাদ।…
বটম লাইনে, এইবার হৃদয় মণ্ডলের কারাবাস যাত্রা শুধু বিজ্ঞান চেতনাকে উস্কে দেয় নি, তিনি আসলে একই সংগে উস্কে দিয়েছেন ধর্মীয় তর্ক জ্ঞান, ফৌজদারি অপরাধ, কিশোর গ্যাং, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের রাজনীতি, ছাত্র - শিক্ষক সম্পর্কের চরম নৈতিক অবক্ষয়ের অবস্থান এবং আরও নিগুঢ় নেপথ্য কথন।
No comments:
Post a Comment