ইট-কাঠ-পাথরের ব্যস্ত এই পাষাণপুরী যেন প্রতি সন্ধ্যায় ইফতারের সময় খনিকের জন্য থমকে যায়, থেমে যায় সব নাগরিক কোলাহল, যানবাহনের দিকশূন্য গতি ও ব্যস্ততার প্রতিযোগিতা। কংক্রিট অরণ্য এ-শহর তখন যেন দম ফিরে পেতে খানিকটা জিরিয়ে নেয়, আগের অহেতুক ভোগবাদীতায় আবারও ফিরে যেতে নিতে থাকে প্রস্তুতি।
এই সময়ে অফিস থেকে ফেরার পথে প্রায়ই পাঁচ তাঁরা হোটেল সোনারগাঁওয়ের দক্ষিণ দিকের এন্ট্রি গেট ঘেঁষে ফুটপাতে দেখি এক মা ছোট্ট দুই কন্যা সন্তান নিয়ে ইফতারের এটা সেটা খাচ্ছেন। একেবারে পুঁচকেটির নাম মরিয়ম, বয়স বোধহয় দুই-আড়াই, আরেকটু বড় রাবেয়া, বয়স চার-সাড়ে চার হবে।
মাঝে মাঝে অফিসের ইফতার থেকে বেঁচে যাওয়া দু-একটি খাবার ব্যাগ থেকে বের করে শিশু দুটির হাতে দেই, টুকরো ফল, ফালুদা বা হালিমের বাক্স। আমাকে দেখলেই মরিয়ম বা মাদার মেরি খুশীতে হাত নাড়ে, পরিচিতির হাসি হাসে, খাবার নিতে এগিয়ে আসে।
তবে নিয়ম খুবই কড়া, আগে হাত ধুয়ে তারপর খেতে হবে। ব্যাগের পানির বোতল থেকে প্রথমে মরিয়ম ও পরে রাবেয়ার ডান হাত ধুয়ে দেই, তারপর বলি, যাও, খাবার ভাগ করে খাও! বাধ্য শিশু দুটি মায়ের পাশে বসে ওই সামান্য খাবারই তৃপ্তি নিয়ে খায়। মা তাদের খাবার ভাগ করে দেন। এই আদিম ক্ষুধা থেকেই সভ্যতার সৃষ্টি, নয়?...
দু-এক পলক দৃশ্যটি দেখে বা না দেখেই আমি দ্রুত কারওয়ান বাজার রেললাইন ধরে বাসায় ফেরার পথ ধরি, মাথা থেকে পথ চলতি এইসব ঘটনাবলী অবিরাম তাড়াতে থাকি। মাঝে মাঝে দূরাগত ট্রেনের তীব্র আলো দেখে গাড়ির গতিপথ বুঝে লাইন চেঞ্জ করি। স্লিপার থেকে স্লিপার গুনে গুনে পা ফেলি, ফিরতে থাকি, ফিরতে থাকি।... জগতে কে কাহার?
No comments:
Post a Comment