সে দিন সন্ধ্যায় ( ৩ নভেম্বর) আমার ছোট খালা, বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ এলিজা সিরাজী (ডাক নাম মঞ্জু), দীর্ঘ রোগে শোকে ভুগে সিরাজগঞ্জে হাসপাতালে মারা গিয়েছেন।
খালার বড় বোন, আমার মা সৈয়দা আজগারী সিরাজী (৭৭) বছর পাঁচেক ধরে গুরুতর এলঝেইমারে ভুগে স্মৃতিভ্রষ্ট। একদিক থেকে ভালই হয়েছে, শেষ বয়সে এসে এই গুরু শোকভার তাকে বহন করতে হচ্ছে না।
আমার মঞ্জু খালা, একজন প্রকৃত মানুষ ছিলেন, ১৯৭১ এর রণাংগনের সৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন।
সাদাকালো ঐতিহাসিক ছবিতে মুখের কাছে হাত গোল করে শ্লোগান দিতে দেখা যাচ্ছে তাকে।
সাদাকালো ঐতিহাসিক ছবিতে মুখের কাছে হাত গোল করে শ্লোগান দিতে দেখা যাচ্ছে তাকে।
সেটি সিরাজগঞ্জে ১৯৭১ এর ২৪ মার্চের ঘটনা। মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্ন। মঞ্জুখালা তখন বিএড কলেজে পড়েন, ছিলেন ছাত্রী সংগ্রাম পরিষদ ও মহিলা সংগ্রাম পরিষদ, সিরাজগঞ্জ মহকুমা (এখন জেলা, তখন সিরাজগঞ্জ ছিল পাবনা জেলার অন্তর্ভুক্ত) কমিটির আহবায়ক।
আগুন ঝরা ওই সকালে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ছাত্র মিছিলের পাশাপাশি তিনি সব কলেজের ছাত্রীদের সংগঠিত করে বিশাল মিছিলের নেতৃত্ব দিয়ে যোগ দেন মিছিলে।
১৯৭১ এ মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে এই ছবির সূত্র ধরেই পাক সামরিক জান্তা মঞ্জু খালাকে গ্রেপ্তার করার জন্য অনেক অভিযান চালিয়েছে।
খালার বড় ভাই, সৈয়দ মোস্তাফিজুর রহমান সিরাজি, মন্টু মামাও ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের কর্মী। ১৯৭১ এ রাজাকাররা তাকে ঘুমখুন করে। শহীদ মন্টুমামার মরদেহ খুঁজে পাওয়া যায়নি, তার কোনো ছবিও নেই। তার স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে একটি নীল রংগের তিন ব্যান্ডের ফিলিপস
রেডিও খালার কাছে সংরক্ষিত ছিল।
রেডিও খালার কাছে সংরক্ষিত ছিল।
মন্টু মামা মুক্তিযুদ্ধের এক অকথিত অধ্যায়।...
মঞ্জু খালা আজীবন শিক্ষকতার পেশায় নিভৃত আদর্শিক জীবন কাটিয়েছেন, বরাবরই শিরদাঁড়া সোজা রেখেছেন, ছেলেমেয়েদের বড় করেছেন তারই ন্যায় ও সত্যের আদর্শে।
No comments:
Post a Comment