Thursday, November 4, 2021

কাণ্ডারী হুঁশিয়ার!

কাণ্ডারী হুঁশিয়ার!

--বিপ্লব রহমান

(...‌’অসহায় জাতি মরিছে ডুবিয়া, জানেনা সন্তরণ,/কান্ডারী! আজ দেখিব তোমার মাতৃমুক্তিপণ!/“হিন্দু না ওরা মুসলিম?” ওই জিজ্ঞাসে কোন জন?/

কান্ডারী! বল ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর মা’র!’… নজরুল)

বাংলাদেশে দুর্গোৎসবের সময় কুমিল্লার পূজা মণ্ডপে পবিত্র কোরান পাওয়াকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক হামলা ও সহিংসতার (লক্ষনীয়, দাঙ্গা নয়, এপারে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুর ওপর শুধু একপক্ষীয় হামলা ও সহিংসতাই হয়) পরিপ্রেক্ষিতে নানা ধরণের ঘটনা ঘটেই চলছে। এ যেন ঝড়ের পূর্বাভাস মাত্র।

পর্যবেক্ষণ বলছে, ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে হতে যাওয়া সম্ভাব্য জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে লাগামহীন বাজার দরের পরিস্থিতিতে একের পর এক ছক কাটা হচ্ছে।

(দেখুন, বাংলাদেশে চাল, ডাল, আটাসহনিত্যপণ্যের দাম বাড়ছেই, কারণ কী?, ৪ নভেম্বর ২০২১, বিবিসি বাংলা)

দৃশ্যতই টানা ১৫ বছর ধরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় সবচেয়ে সোচ্চার, বিরোধী বিএনপি-জামাত গোষ্ঠীর সঙ্গে তাদের পারস্পারিক দোষারোপের রাজনীতিও সমানতালে চলছে।

ওদিকে, সহিংসতার তিন সপ্তাহের মাথাও সনাতন ধর্মাবলম্বী (যারা হিন্দু নামে বেশি পরিচিত) বসতিগুলো এখনো স্বাভাবিক হতে পারেনি। পর্যাপ্ত পুলিশি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হলেও এখনো সেখানের মন্দিরগুলোতে পূজা-অর্চনা সেভাবে শুরু হয়নি। হিন্দু ব্যবসায়ীরা দোকান-পাটে নতুন করে ভাংচুর, হামলা ও লুঠপাটের ভয়ে ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান খুলতে ভয় পাচ্ছেন। সর্বত্র চাপা ভীতি কাজ করছে। প্রতি শুক্রবার জুমা বারে মসজিদ থেকে মুসুল্লিদের মিছিল ফের হিন্দু পাড়ামুখি হয় কি না, এই আতংকে ভেতরে ভেতরে সবাই কাঁটা হয়ে আছেন!

ভালবাসি মেঘদল

গত ১৩ অক্টোবর কুমিল্লায় পূজা মণ্ডপে কোরান পাওয়া নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়া হিন্দু জনপদে হামলা ও সহিংসতার প্রতিবাদে সঙ্গে সঙ্গে সোচ্চার হয়েছেন শুভ বুদ্ধির মানুষ। দলমত নির্বিশেষ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ করেছেন তারা। শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা শাহবাগ বা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নয়, দেশের সর্বত্র কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে তো বটেই, জেলা প্রেসক্লাবগুলোর সামনে ছাত্র-শিক্ষক-জনতা সাম্প্রদায়িক শক্তিকে রুখে দিতে মহান ১৯৭১ এর অসাম্প্রদায়িক জয় বাংলার শ্লোগান আর লাল-সবুজ জাতীয় পতাকা নিয়ে জড়ো হয়েছেন। মানববন্ধন, বিক্ষোভ, সমাবেশে জানান দিয়েছেন মৌলবাদকে রুখতেই হবে।

এই প্রেক্ষাপটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাস বিরোধী ‘রাজু ভাস্কর্যের’ সামনে সম্প্রতি হয়ে গেল সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী কনসার্ট। এতে ‘মেঘদল’ নামক গানের দল ‘ওম!’ নামে সদ্য লেখা একটি গান পরিবেশন করে। এই গানে নাকি ধর্মানুভুতিতে আঘাত হানা হয়েছে! এমনই অভিযোগে মোমিন মুসলমানেরা প্রথমে ফেসবুকে ও পরে এক আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে মামলা ঠুকে দিয়েছেন। ‘মেঘদলের পাশে দাঁড়ান’ অনলাইন অন্দোলনের নিয়ে দুকথা লিখেছেন বন্ধুবরেষু লেখক, এক্টিভিস্ট ফিরোজ আহমেদ। তিনি অবশ্য স্বৈর ব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধেই সোচ্চার হওয়ার কথা বলেন।

ফিরোজ বলছেন, ‘তাই আবারও বিস্তারিত করেই বলি, মোসাহেবদের কাছে তা যতই ঘ্যানঘেনে ঠেকুক। মেঘদলের বিরুদ্ধে যে আইনে মামলাটা করা হয়েছে, তা করা হয়েছে শেখ হাসিনার আমলে। শেখ হাসিনার আমলে লেখালেখির দায়ে অজস্র গায়ক, লেখক, শিল্পীর নামে মামলা হয়েছে। হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, নাট্যকর্মীর নামে।  আপনি যদি রাজনীতি সচেতন মানুষ হয়ে থাকেন, এককথায় মেঘদলের পাশে থাকলেই কি আপনার চলে? এই একবাক্যের প্রতিবাদে তারা আপনাকে সরকারের ছকে ফেলে দেবে না তো? সেই এক বাক্যের সব ঘৃনা মামলা দায়ের করা মানুষটার প্রতি দিতে গিয়ে আপনি জনগণকে মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক, চিন্তার স্বাধীনতার বিরোধী এবং সরকারকে রক্ষক বানিয়ে দেবেন না তো?’

‘পুরনো বাংলাগানের মতই যেন,"তুমি সর্প হইয়া দংশন করো, ওঝা হইয়া ঝাড়ো"।’

‘মেঘদলের পাশে থাকা মানে আমার কাছে তাই চিন্তার ঘোর অন্ধকার নামিয়ে আনা, অমিত শক্তির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যটাকে সরকারের বানোনো খোয়ারে আটকাবার ষড়যন্ত্রেরও বিরোধিতা করা। যে মঞ্চ এই কথাগুলো বলতে দেবে না, তারা মেঘদলের পাশে থাকার নামে আসলে সকল মেঘদের যাতায়াত বন্ধ করে দিতে চায়।’

‘গোটা বাংলাদেশের সংস্কৃতির রাজনীতি এখন সেই হাতিখেদানো নাটকে পরিণত হয়েছে। সেই ফাঁদ আপনি যদি এড়াতে পারেন, মোসাহেবরা তাদের এই 'বিভাজন করো, শাসন করো' খেলাটা চালাতে পারবে না। দংশন করা সাপটা যে আদতে তারাই, সেটা চিনতে পারলে তাদের এই রাজনীতিটা অচল হয়ে যায।’

বরং এই সুযোগে ‘মেঘদল’র সেই গানটি নিষিদ্ধ হওয়ার আগেই একবার শুনে নেওয়া যাক :

https://www.youtube.com/watch?v=VQvbqaGo3Mw

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতিতে বিভ্রান্তি

এদিকে, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেনের একটি বিবৃতি আগুনে যেন ঘি ঢেলেছে!

পররাষ্ট্র মন্ত্রীর বিবৃতি ফলাও করে প্রকাশ করে টাইমস অব ইন্ডিয়া, টাইমস নাউ, হিন্দুস্তান টাইমসসহ ভারতের প্রথম সারির কয়েকটি সংবাদমাধ্যম। দেশের কয়েকটি গণমাধ্যমও এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে।

অভিযোগ উঠেছে, এই বিবৃতিতে স্পষ্টতই সাম্প্রদায়িক হামলা ও সহিংসতাকে অনেক লঘু করে দেখানো হয়েছে, শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টায় আড়াল করা হয়েছে নগ্ন সত্যকে, যা দোষীদের আবারো সহিংসতায় মদদ দেবে।

বিদেশ মন্ত্রীর বিবৃতির চুম্বক অংশটি এরকম :

"Contrary to all the ongoing propaganda, only 6 people died during recent violence of which 4 were Muslims, killed during the encounters with law enforcing authorities, and 2 were Hindus, one of whom had normal death and another when he jumped in a pond. None was raped and not a single Mandir was destroyed," Bangladeshi foreign minister AK Abdul Momen said in the statement.

(দেখুন, নট এ সিংগেল টেম্পল ওয়াজ ডেস্ট্রয়েড: বাংলাদেশ ফরেন মিনিস্ট্রি অন কম্যুনাল রায়ট, ৪ নভেম্বর, ২০২১, হিন্দুস্থান টাইমস)

মন্ত্রীর এই বক্তব্যকে প্রত্যাখান করে তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে জাতীয় পূজা উদযাপন পরিষদ, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ, ইসকনসহ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন সংগঠন।

মন্দির, পূজামণ্ডপ, দোকানপাট, বাসাবাড়িতে হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাট এবং নিহতের ঘটনা নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্যের প্রতিবাদে নোয়াখালী জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও ইসকন মন্দির কর্তৃপক্ষ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।

‘সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ১৫ অক্টোবর বেলা দুইটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত দুষ্কৃতকারীরা নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের চৌমুহনীতে ১১টি মন্দির, পূজামণ্ডপসহ বেশ কয়েকটি দোকান ও ঘরবাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ চালায়। দুষ্কৃতকারীরা বিজয়া সর্বজনীন দুর্গামন্দিরের সদস্য যতন সাহাকে পিটিয়ে হত্যা করে এবং ইসকনভক্ত প্রান্ত চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে মেরে পুকুরে ফেলে দেয়, যার লাশ পরদিন সকালে ইসকন মন্দির-সংলগ্ন পুকুরে ভেসে ওঠে, যা ইতিমধ্যে গণমাধ্যম ঘটনার ভয়বহতা দেশবাসীকে অবহিত করেছে।’

‘সংবাদ সম্মেলনে পাঠ করা লিখিত বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে চৌমুহনী আসার আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, ‘আমরা মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়কে অনুরোধ করব, আপনি চৌমুহনীতে এসে দেখে যান ঘটনার ভয়াবহতা। আর কী হলে আপনি স্বীকার করবেন মন্দিরে ভাঙচুর হয়েছে ও মানুষ খুন হয়েছে? আপনার বক্তব্য আমাদের ব্যথিত ও মর্মাহত করেছে। আমরা মন্ত্রী মহোদয়ের বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’’

(দেখুন, মন্দিরে হামলা-ভাঙচুর ও নিহতেরঘটনায় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি, ৩ নভেম্বর ২০২১, দৈনিক প্রথম আলো)

চোর দিয়া চোর ধরাধরি, একি কারখানা!

বাস্তবত, হিন্দু ধর্মের মন্দির, পূজা মণ্ডপ, বাসাবাড়ি, দোকান-পাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার জন্য জুমার নামাজের যে মিছিলগুলো বের হয়েছিল, মসজিদে-মাদ্রাসায় মাইকিং করে ধর্মানুভূতিতে আঘাতপ্রাপ্ত, জেহাদী জোশে যারা ‘নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবর!’ ধ্বনীতে বিধর্মী-কাফেরদের ওপর হামলা করেছিলেন, ভাঙচুর, লুঠপাঠ ও অগ্নিসংযোগ করে বদলা নিতে মরিয়া ছিলেন, তাদের কোনো দল ছিল না, ওই জেহাদী মিছিলে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামাত, কমিউনিস্ট পার্টি – সব মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল, মিছিলকারীদের একটিই পরিচয় তখন যেন প্রধান, ‘আমরা সবাই তালেবান, বাংলা হবে আফগান!’

এ কারণেই পূজা মণ্ডপে কথিত নিরাপত্তার দায়িত্বে পুলিশ, আর্মড পুলিশ, আনসার, র‍্যাব ইত্যাদি চৌকশ আইন-শৃংখলা বাহিনী কোনো কাজেই আসেনি। খবরে প্রকাশ, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা নিবর দর্শকের ভূমিকায় ছিলেন। জরুরি সেবা (পুলিশ, অ্যাম্বুলেন্স, স্বাস্হ্য, দমকল) ৯৯৯ নম্বরে ফোন করেও কোনো সাহায্য মেলেনি। এমনকি, সরকারের লাখ-কোটি টাকার জরুরি সেবায় ফোন করলেও পুলিশ সহিংসতা ঠেকাতে ঘটনাস্থলে আসেনি। এমনকি সরকারের সামরিক-বেসমারিক ডজনখানেক গোয়েন্দা সংস্থার একটিও দুর্গোৎসবে সিরিজ হামলার আগাম সম্ভাবনার খবর একটুও আভাস দেয়নি।

মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন বলছে, ‘দেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় ১৩ থেকে ২০ অক্টোবরের মধ্যে মারা গেছেন ৯ জন। এর মধ্যে ছয়জন মুসলিম ও তিনজন হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। আহত হয়েছেন দুই শতাধিক মানুষ। মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

‘সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এখন পর্যন্ত কোনো সাম্প্রদায়িক হামলার বিচার শেষ হয়নি। হিন্দুধর্মাবলম্বীসহ পূজামণ্ডপের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা ও জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব পালনে অবহেলায় প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্ত না করে ঢালাওভাবে গ্রেপ্তার দেখিয়ে সাম্প্রদায়িক হামলার বিচারপ্রক্রিয়া জটিল করা হচ্ছে, যা অগ্রহণযোগ্য ও সংবিধানের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী।’

(দেখুন, সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় মারা গেছেন ৯ জন, ৩১ অক্টোবর, ২০০১, দৈনিক প্রথম আলো)

বলা ভাল, গত ১২ বছরে দুর্গা পূজার সময় এমন ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক হামলা দেখেনি বাংলাদেশ। সেদিক থেকে হামলাকারীরা খুবই পরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যপ্রনোদিত বলা চলে। আর যাই হোক, হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা এতোটা বোকা নন যে, পবিত্র কোরান শরীফ পূজামণ্ডপে রেখে দুর্গা পূজা বানচাল করতে চাইবে!   

সত্যিকার অর্থে, ধর্মীয় সংখ্যালঘুর দেশে হিন্দু-বৌদ্ধ মন্দিরে হামলা যেন রীতিতে পরিনত হয়েছে। আসলে মূর্তি ভাঙাভাঙি শুরু হলেই টের পাওয়া যায়, দুর্গা পূজা আসন্ন। কিন্তু কি আয়রনি! আরেক ধর্মীয় সংখ্যালঘু খ্রিষ্টানের গির্জাঘরে কখনো কোথাও একটি ঢিল পর্যন্ত পড়ে না! পৌত্তলিক কাফের ধর্ম হলেও যিশু, সাধু-সন্ত সমেত কুমারি মাতা মরিয়ম বিবির মূর্তি বরাবরই অক্ষুন্ন থেকে যায়। সম্ভবত এর গুঢ় কারণ, দাতাদেশগুলো পশ্চিমা বলে শুধু নয়, মোল্লাদের গ্রেট গ্রেন্ড ফাদার আসলে সিআইএ, তাই ধর্ম মেনে চোরেরা নিজের পাড়ায় চুরি করে না! বিষয়টির গভীর কারণ সত্যিই অনুসন্ধানের বিষয়।

তবে দীর্ঘ পর্যবেক্ষণ বলছে, ধর্মীয় সংখ্যালঘুর ওপরে সহিংসতা যেখানাই জেঁকে বসেছে, দেখা গেছে সেখানে দেশান্তরী বা উদ্বাস্তু হওয়ার পর হিন্দু ঘরবাড়ি, জমিজমা স্থানীয় প্রভাবশালীদের দখলে নিতে। মূলত, প্রতিটি সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও হামলার নিট ইহজাগতিক লাভ হচ্ছে, লুন্ঠন। ঘরবাড়ি, ব্যবসা-বাণিজ্য, জমি-জমা, এমনকি নারীও।    

শেখ হাসিনা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বাংলাদেশ কী সমার্থক?

অন্তত বছর কুড়ি হলো বাংলাদেশে শক্তিশালী বিরোধী দলের অভাবে আওয়ামী কাগুজে বাঘ অষ্টপ্রহর সর্বত্র জেঁকে বসেছে।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সূত্রে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির অন্যতম সহযোগি জামাতে ইসলামের অধিকাংশ শীর্ষ স্থানীয় নেতা ফাঁসিতে নিহত, না হয় কারাবন্দী। বাকীরা মামলা আর হুলিয়া নিয়ে পলাতক। মূল দল বিএনপির নেতাকর্মীরাও জেলা-উপজেলা পর্যায়ে নেতৃত্বহীন, দিশেহারা। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এক যুগেরও বেশী সময় অসুস্থ, কারাবন্দী। দলের সেকেন্ড ইন কমান্ড, খালেদা পুত্র তারেক জিয়াও ওই বছর কুড়ি ধরেই দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে বিলেতবাসী, পলাতক। এ অবস্থায় বিএনপির জেলা-উপজেলা পর্যায়ে রাজপথের আন্দোলন তো দূরের কথা, একটি বড় সমাবেশ করারও হিম্মত নাই। উপরন্ত রয়েছে হেলমেট লীগ-হাতুড়ি লীগের সন্ত্রাস।  

আর নানান ঐতিহাসিক ভুল করতে করতে বাম দলগুলো নিজেরাই এখন ইতিহাস হতে বসেছে। আদর্শ ও অহমিকার দ্বন্দ্বে বহুধা বিভক্ত টুকরো টুকরো বাম দলগুলো স্বাধীনতার আগে থেকে এখনো অন্তত সাত দশক ধরে কোনো শক্তিশালী জোটও গড়তে পারেনি। তাদের টাইগার বাম না বলে দলীয় কোন্দলে ঝান্টু বাম বলাইভাল। তাদের একাংশ ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদ অনেক আগেই সরকারের সঙ্গে জোট করে, মন্ত্রীত্ব নিয়ে বি-টিম হয়েছে। গুলে খেয়েছে কমিউনিজম ও রাষ্ট্র বিপ্লব।

আর সাবেক স্বৈরশাসক জেনারেল এরশাদের (এখন প্রয়াত) গড়া জাতীয় পার্টি শুরু থেকেই জাতীয় সংসদে সরকারের পোষা বিরোধী দল হয়ে দানাপানি খাচ্ছে, মাঝে মাঝে দু-একটা সরকার বিরোধী বোলচালে ফুটেজ খাওয়ার চেষ্টায় আছে।    

এমন দীনহীন পরিস্থিতিতে সত্যিকার অর্থে আল্লাহর দুনিয়ায় আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কিছু নাই। ক্ষমতার এই ভারসাম্যহীনতা সরকারকে যেন এক বিশাল ফানুশে পরিনত করেছে। সামান্য আগুনের তাপে আলো ছড়িয়ে এর উড়ে যাওয়াই শুধু বাকী।

 ‘আমরা আর মামুরা’ যখন রাজনীতির মাঠজুড়ে, তখন এই সুযোগে, ‘শেখ হাসিনা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বাংলাদেশ সমার্থক’ – এই ফ্যাসিবাদী আওয়ামী প্রচারণা বেশ জোরেশোরেই হচ্ছে।  ‘রাজা তুমি নেংটো’, অকপট এই সত্যি বলার মতো শিশুটিও বুঝি আর পথের ধারে নাই!

এরপরেও মুক্তিযুদ্ধের নামে, দেশ প্রেমের নামে, উন্নয়নের নামে, জনগণের নামে, গরীব-দুখি মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনের নামে যা কিছু প্রপাগাণ্ডা, অনলাইন থেকে অফলাইন, তা দিয়ে কিছু মানুষকে নিশ্চয়ই বোকা বানানো যায়, কিন্তু সব মানুষকে আজীবন বোকা বানানো সম্ভব নয়, তা সে নানান আইনে মুখ সেলাই করে বন্ধ করে দেওয়া হলেও। সবচেয়ে আশ্চর্য, আর যাদের বিচার করার কথা, তারাও এখন বিচার চাইছে!

এই ডামাডোলে, কথামালার রাজনীতির ভেতরেই  আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সরকারের অন্যতম প্রভাবশালী সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের কিছু সত্য ভাষণ করেছেন।

‘নোয়াখালীর চৌমুহনীতে হিন্দুদের ওপর হামলার ঘটনায় দলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা করার পাশাপাশি এলাকার সন্তান হিসেবে নিজের ‘লজ্জিত’ হওয়ার কথা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।’ সম্প্রতি রাজধানীতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দুদের মধ্যে ভার্চুয়ালি ত্রাণসামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এ প্রতিক্রিয়া জানান।

‘ওবায়দুল কাদের বলেন, “চৌমুহনীতে গত ১২ বছর এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। নোয়াখালীতে পুজামণ্ডপে কোনো হামলা হয়নি। এবারের তাণ্ডবটা  কেন হলো, কীভাবে হলো? আমি সেখানকার নেতৃবৃন্দকেই সে প্রশ্ন রাখতে চাই। কুমিল্লায় যখন ঘটেছে… এতগুলো পুজামণ্ডপে…চৌমুহনীতে, আপনারা কেন সতর্ক হলেন না।’

“ভোট এলে হিন্দুদের কাছে গিয়ে আমরা যারা মায়াকান্না করি, দরদ দেখাই। হিন্দুদের বিপদের সময় আমরা তাদের পাশে দাঁড়াতে পারিনি কেন? এ প্রশ্ন আপনাদের প্রত্যেকের বিবেকের কাছে আমি রেখে গেলাম।”

(দেখুন, এতগুলো মণ্ডপ জ্বললো, আপনারাকি ‘নীরব দর্শক’ : কাদের, ২ নভেম্বর, ২০২১, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)


সাক্ষী আইন ও একটি চমকে দেওয়া পরিসংখ্যান

কুমিল্লা ট্রাজেডির পর সরকার বেশ কিছু ধরপাকড় করেছে, মামলা-মোকদ্দমাও হচ্ছে। আরো আছে মিষ্টি কথায় চিড়ে ভেজানোর রাজনীতি।

খবরে প্রকাশ, ‘বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, খুব দ্রুত একটি নতুন আইন করতে যাচ্ছে সরকার, যাতে কোন মামলায় সাক্ষ্য দেয়ার জন্য সাক্ষীর সুরক্ষা এবং তার গোপনীয়তা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা থাকবে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনার বিচারের জন্য সরকার এই আইনগত উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে বলে বলেছেন আইনমন্ত্রী। বাংলাদেশের আইনজীবী ও অধিকারকর্মীরা বলছেন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনাগুলোর বিচার প্রক্রিয়া অনেক ক্ষেত্রে শেষই করা যায় না সাক্ষীর অভাবে।’

(দেখুন, হিন্দুদের ওপর হামলা : সংখ্যালঘুসম্প্রদায়ের ওপর হামলার বিচারে সাক্ষী সুরক্ষা আইন করবে সরকার : বলছেন আইনমন্ত্রী, ২৪ অক্টোবর, ২০২১, বিবিসি বাংলা)

তবে কাগুজে আইন বাস্তবে কতটুকু প্রয়োগ হবে, আদৌ হবে কি না, নাকি দিস্তা দিস্তা আইনে কবে কোন সুরক্ষা হয়েছে সেটিও অনুসন্ধানের বিষয়।

অন্যদিকে, ‘শেখ হাসিনা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বাংলাদেশ সমার্থক’ এই গোয়েবলস প্রপাগাণ্ডার মুণ্ডুপাত করে একটি পরিসংখ্যান বলছে, বিএনপির চেয়ে আওয়ামী লীগ আমলেই সবচেয়ে বেশী হিন্দু নির্যাতন হচ্ছে।

‘কুমিল্লাসহ কয়েকটি জেলায় পূজামণ্ডপে হামলা ভাংচুরের মধ্যে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, গত নয় বছরে বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর ৩ হাজার ৬৭৯টি হামলা হয়েছে।’

‘বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থাটি প্রতিবছরই মানবাধিকার লঙ্ঘনের একটি প্রতিবেদন দেয়। ২০১৩ সাল থেকে হিন্দুসহ সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর উপর হামলার ঘটনাগুলোও তারা প্রতিবেদনে আলাদাভাবে দিয়ে আসছে।’

‘সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে আসক নয় বছরে হিন্দুদের উপর সাড়ে ৩ হাজারের বেশি হামলার তথ্য দিলেও প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে বেশি বলে দাবি করেন বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত।’

‘আসকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সাল থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আট বছর নয় মাসে হিন্দুদের উপর ৩ হাজার ৬৭৯টি হামলা হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৫৫৯টি বাড়িঘর ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা। এই সময়ে হিন্দুদের ৪৪২টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাংচুর ও আগুন দেওয়া হয়েছে। প্রতিমা, পূজামণ্ডপ, মন্দিরে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে ১ হাজার ৬৭৮টি। এসব হামলায় আহত হয়েছে ৮৬২ জন হিন্দু ধর্মাবলম্বী। নিহত হয়েছে ১১ জন।’

(দেখুন, ৯ বছরে হিন্দুদের উপর ‘৩৬৭৯হামলা’, ১৮ অক্টোবর, ২০২১, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)

হিন্দু হামলার সুলুক সন্ধান

আগেই বলা হয়েছে, ধর্মীয় সংখ্যালঘু, প্রধানত হিন্দু জনগোষ্ঠী তো বটেই, এমনকি ভিন্ন ভাষাভাষী জাতিগত সংখ্যালঘু আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসত-বাড়ি, উপনাসনালয়, ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর হামলা, ভাঙচুর, লুঠপাটের অন্যতম কারণ, তাদের তাড়িয়ে দিয়ে সম্পদ-জমি-জমা দখলে নেওয়া। ধর্মের জিকিরটুকু এখানে হাতিয়ার মাত্র। আর এই সুপ্তফনার রাজনীতিতে দুধ দিয়ে কালসাপ মৌলবাদ পোষার প্রতিযোগিতায় আওয়ামী লীগ-বিএনপি, কেউই পিছিয়ে নাই। তবু ক্ষমতায় থাকলেও হিন্দু হামলার দায়ভার বিএনপির, বিরোধী দলে থাকলেও এর দায়ভার তাদেরই।

এদিকে, হিন্দুদের ওপর হামলার রাজনৈতিক যোগ-সাজশ অকপটে উন্মোচন করেছেন প্রবীণ কমিউনিস্ট নেতা পংকজ ভট্টচার্য। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দেশের ৬৮টি নারী, মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংগঠনের প্ল্যাটফর্ম সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি ‘সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও’ স্লোগানে এক সমাবেশের আয়োজন করে।

এতে ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, ‘কোনো মাতাল কিংবা মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে দিয়ে জজ মিয়া নাটক সাজিয়ে কাজ হবে না। এর পেছনের আসল কারণটা বের করতে হবে। আমরা আর জজ মিয়া নাটক দেখতে চাই না। বিচারহীনতাই এই সীমাহীন অবিচার ঘটায়। রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার হলে এ ঘটনাই ঘটে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি চালু হলে এ রকম অমানবিক ঘটনা বারবার ঘটতে থাকবে। তদন্তসাপেক্ষে এসব ঘটনার প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।’

পঙ্কজ ভট্টাচার্য আরও বলেন, ‘পাকিস্তান আমলে পরাজিত হলেও এখন সাম্প্রদায়িক শক্তি জিতে যাচ্ছে। সহিংসতার ঘটনাগুলো নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দোষারোপের রাজনীতি করছে। ফলে এসবের আসল নায়ক ধর্ম ব্যবসায়ীরা পার পেয়ে গেল, বেঁচে গেল।’

‘বাংলাদেশের প্রধান দুই রাজৈনিতক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয়ই ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করা গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে ‘দোস্তি’ করে সংকট বাড়াচ্ছে বলে মন্তব্য করেন পঙ্কজ ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘আমরা একটা দোস্তির রাজনীতি দেখতে পাচ্ছি৷ বিএনপি জামায়াতকে ছাড়তে রাজি নয়। এই দোস্তির রাজনীতি থাকলে জামায়াত অক্ষত থাকবে এবং এই ঘটনা ঘটতেই থাকবে। আওয়ামী লীগ কৌশলের কারণে হেফাজতকে সঙ্গে নিয়ে যে রাজনীতিটা করল, তার ফলে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা অসহিষ্ণুতা ও বিভাজন শিখছে। ফলে শর্ষের মধ্যেই ভূত আছে। এসবে নজর না দেওয়া হলে সাম্প্রদায়িকতার উদ্দাম নৃত্য শুরু হবে।’

(দেখুন, ‘দোস্তির রাজনীতি না ছাড়লেসাম্প্রদায়িকতার উদ্দাম নৃত্য শুরু হবে’, ১ নভেম্বর ২০২১, দৈনিক প্রথম আলো)

আর অন্যদিকে, আসমানী শিক্ষায় ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা হাজার হাজার মাদ্রাসাগুলোতে জাতীয় পতাকা তোলা হয় না, জাতীয় সংগীতও গাওয়া হয় না। বছর তিনেক আগের হাইকোর্টের একটি নির্দেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চলছে তারা। সেখানে সাধারণ শিক্ষাদানেও রয়েছে যথেষ্ট ঘাটতি। এ অবস্থায় ‘শষ্যের চেয়ে টুপি বেশী, ধর্মের চেয়ে ধর্মের আগাছা বেশী’ হবে, এ আর নতুন কী?

ফলত, সেখানে জঙ্গিবাদের দেদার চাষাবাদের সুযোগ যেমন সৃষ্টি হয়, তেমনি ধর্মের জিকির তুলে বেহেস্তি খোয়াবে মশগুল মাদ্রাসা ছাত্রদের সংখ্যালঘুদের ওপর সহজেই লেলিয়ে দেওয়া যায়। আর প্রতি জুমা বারে, নামাজের খুৎবায়, ইসলামি জলসায় ও ওয়াজ মহফিলে এক ধর্মকে মহান করতে গিয়ে  অপরাপর ধর্মগুলোকে যে হিংস্রভাষায় আক্রমণ করা হয়, এর প্রত্যক্ষ ফল – মগজ ধোলাই।

এই মোল্লা তৈরি কারখানা থেকে তাই সৃজনশীল পেশার নাগরিক তৈরিই সম্ভব নয়, ইবনে সিনা থেকে মুরগি খামারী পর্যন্ত। কিন্তু ইসলামী দলগুলোর ভোট হারানোর ভয়ে কোনো সরকারিই মাদ্রাসা শিক্ষাকে আমূল সংস্কারে রাজী নয়, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় একই রকম সেক্যুলার পাঠ্যক্রমে তারা রাজী তো নয়ই।

(দেখুন, মাদ্রাসায় জাতীয় সংগীতের প্রতিযোগিতাওহতে হবে : হাইকোর্ট, ২৮ মার্চ ২০১৮, ডয়েচে ভেলে বাংলা)

উপসংহারের বদলে

(‘যেদিন হিন্দু-মুসলমান, বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান, জাতি-গোত্র নাহি রবে, এমন সমাজ কবে গো সৃজন হবে?’ … লালন ফকির।)

এ নাজুক পরিস্থিতিতে যতদিন না দুর্গা পূজা ও ভিন্ন ধর্মাবলম্বীর অন্যান্য ধর্মীয় উৎসবের সময় মাদ্রাসা ছাত্ররাই পূজা মণ্ডপ, মন্দির, হিন্দু বসতি ও তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্র দিনরাত পাহারা না দেবে, আইন-শৃংখলা বাহিনীর প্রধান সহায়ক হয়ে উঠবে, ততোদিন সংখ্যালঘুর সাম্প্রদায়িক হামলা থেকে মুক্তি নাই। পরমত সহিষ্ণুতার বিকল্প তো নাইই।

 

 

 

 

No comments:

Post a Comment