গজদন্ত শিল্পী বিজয়কেতন চাকমা এই শেষ বয়সেও ঘুমঘোরে ফিরে যান দূর অতীতে। উঁচু পাহাড় থেকে বন -জঙ্গল ভেঙে নামছে ম্যামথের মতো প্রমাণ আকৃতির বুনো হাতির পাল। তাদের তাণ্ডেব তটস্থ পুরো পাহাড়। উজাড় হয় জুমের সাজানো বাগান। অথচ আদিবাসী মানুষ একে মেনে নেয় পাহাড়ি জীবনের স্বাভাবিকতা হিসেবে।
প্রজনন মৌসুমে হাতির পাল ভারী করার সুযোগ দেন তারা। বাকি সময় অরণ্যের গহিন পথে শিকারের খোঁজে ছোটেন দুর্ধর্ষ ম্রো কি বম আদিবাসী তরুণ। তার গাদা বন্দুকের নিশানায় কখনো বা ধরাশায়ী হয় দু - একটা। তারপর পাহাড় জুড়ে শুধুই উৎসব - আনন্দ।
এভাবেই বয়ে চলে পাহাড়ি জীবন। পরম মমতায় প্রতিটি প্রাণ সত্বাকে টিকিয়ে রেখে আদিবাসী মানুষ আবার সেগুলোকে আশ্রয় করেই বাঁচিয়ে রাখেন নিজেদের।
বিজয়কেতন চাকমা স্বপ্ন দেখেন--শিকারী নামমাত্র দামে হাত দেড়েক লম্বা হাতির দাঁত বিক্রি করলেন ব্রিটিশ সাহেব কি ফরেস্টের বড় কর্তার কাছে। সেখান থেকে আদেশ পেয়ে লংগদুতে মাচাং ঘরের ইজরে বসে কাজে ডুব দেন দাদু কল্পতরু চাকমা। ক্ষুদে হাতুড়ি - বাটাল দিয়ে হাতির দাঁতের উপর আশ্চর্য - সুন্দর নকশা বোনেন তিনি।
*
কিন্তু এ সবই এখন ধূসর অতীত, স্বপ্ন মাত্র। সংঘাত বিক্ষুব্ধ আদিবাসী বনের এখন ভিন্ন চিত্র। দিন গেলে বাড়ছে চিরচেনা গাছ উজাড়ের সংখ্যা। বিপন্ন বনে এখন বিপন্ন বুনো হাতিও। তাই এখন দুর্দিনে বড়ই দুর্লভ বিশালাকায় সেই হাতির দাঁত। বিজয়কেতনের তিন পুরুষের এই পেশা আজ তাই খাদের কিনারে।
বন উজাড়ের সঙ্গে হাতির অস্তিত্ব হারিয়ে যাক--তা চান না বিজয়কেতন। এর পরো আছে চোরাই হাতি শিকারীর উৎপাত। প্রবীন এই গজদন্ত শিল্পী চান, বন থাকলে থাকবে বুনো হাতির প্রাচুর্য; আর নিজেদের পরিবেশে মাথা উঁচু করে বাঁচবেন অরণ্যচারী আদিবাসীরা।
বিপন্ন হাতি শিকারের পক্ষে নন তিনি। তার আশা, আবার পুরনো দিনের নিঝুম অরণ্য ফিরে পেলে বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে তিনি বৈধ পন্থায় মৃত হাতির দাঁত সংগ্রহ করতে পারবেন। কিন্তু আদৌ কী মিটবে তাঁর সেই আশা?...
*
রাঙামাটি সদরের জেল রোডের 'কল্পতরু' নামের বাসায় বিজয়কেতন চাকমা বলছিলেন এইসব কথা।
তিনি বললেন, "বাবা মোহনবাঁ শি চাকমার কাছে আমি কাজ শিখি সেই ১৯৬২ সালে, ছাত্র অবস্থায়। তারপর কখনো বন্ধ করিনি কাজ। আর এখন--একদম মেলে না হাতির দাঁত। তারপর খবর দেওয়া আছে বন বিভাগকে। কোনো হাতি মারা গেলে তাদের কাছ থেকে নিলামে দাঁত কিনে নেই। অনেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া হাতির দাঁতও মাঝে-মধ্যে বিক্রি করেন।"
তিনি বলেন, "হাতির আবাস আর খাদ্যের এখন বড় সঙ্কট দেখা দিয়েছে। তার ওপর আছে, পাহাড় কেটে অপরিকল্পিত বসতি স্থাপন। সব মিলিয়ে বুদ্ধিমান এই প্রাণীটি নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় পাড়ি জমাচ্ছে ভারত ও মায়নমারের গহিন অরণ্যে।"
হাতির দাঁত দিয়ে মেয়েদের প্রায় সব ধরনের সৌখিন অলঙ্কার বানান বিজয়কেতন। তার সংগ্রহে আছে কয়েক ধরনের চুলের কাঁটা, চিরুনী, আঙটি, গলার হার, কানের দুল। ছেলেদের জন্য আছে টাই পিন, কোট পিন, কাফলিঙ্ক, টোবাকো পাইপ, সিগারেট হোল্ডার--ইত্যাদি।
এছাড়া আছে ছোটবড় নানান ধরনের শোপিস। পাওয়া যাবে হাত পাখা, বুদ্ধ মূর্তি, হাতির প্রতিকৃতি, পেপার নাইফ, ছোটো-বড় স্টিক, ফুল-লতা-পাতার নকশা।...
কেমন দাম? এই প্রশ্নে বিজয় বাবু হেসে বলেন, "এই সবের তো কোনো নির্দিষ্ট দাম নেই; পুরোটাই সখের বিষয়। কোন জিনিষের কতো দাম হবে, তা নির্ভর করবে কাজটির আকৃতি ও নকশার ওপর। ২০০ টাকা থেকে শুরু করে এক লাখ টাকার জিনিষও পাবেন আমার কাছে।"
এক লাখ টাকা! "ঠিক তাই, এর চেয়েও বেশী দাম হতে পারে। একটা আস্ত দাঁত খোদাই করে যদি সুক্ষ নকশা করি, তবে দাম হতে পারে এক লাখ টাকারো বেশী। এ কাজে লাগবে এক মাসেরও বেশী সময়।"
*
আপনিই তো এই শিল্পের শেষ কারিগর। এরপর? হতাশা ছড়ায় বিজয়কেতনের কন্ঠে। "এর পর কী হবে জানি না। হাতির দাঁত না পেলে এই শিল্প টিকবে না।" বলেন ৭০ ছুঁই ছুঁই এই শিল্পী। ।
______
ছবি: লেখক
*
কিন্তু এ সবই এখন ধূসর অতীত, স্বপ্ন মাত্র। সংঘাত বিক্ষুব্ধ আদিবাসী বনের এখন ভিন্ন চিত্র। দিন গেলে বাড়ছে চিরচেনা গাছ উজাড়ের সংখ্যা। বিপন্ন বনে এখন বিপন্ন বুনো হাতিও। তাই এখন দুর্দিনে বড়ই দুর্লভ বিশালাকায় সেই হাতির দাঁত। বিজয়কেতনের তিন পুরুষের এই পেশা আজ তাই খাদের কিনারে।
বন উজাড়ের সঙ্গে হাতির অস্তিত্ব হারিয়ে যাক--তা চান না বিজয়কেতন। এর পরো আছে চোরাই হাতি শিকারীর উৎপাত। প্রবীন এই গজদন্ত শিল্পী চান, বন থাকলে থাকবে বুনো হাতির প্রাচুর্য; আর নিজেদের পরিবেশে মাথা উঁচু করে বাঁচবেন অরণ্যচারী আদিবাসীরা।
বিপন্ন হাতি শিকারের পক্ষে নন তিনি। তার আশা, আবার পুরনো দিনের নিঝুম অরণ্য ফিরে পেলে বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে তিনি বৈধ পন্থায় মৃত হাতির দাঁত সংগ্রহ করতে পারবেন। কিন্তু আদৌ কী মিটবে তাঁর সেই আশা?...
*
রাঙামাটি সদরের জেল রোডের 'কল্পতরু' নামের বাসায় বিজয়কেতন চাকমা বলছিলেন এইসব কথা।
তিনি বললেন, "বাবা মোহনবাঁ শি চাকমার কাছে আমি কাজ শিখি সেই ১৯৬২ সালে, ছাত্র অবস্থায়। তারপর কখনো বন্ধ করিনি কাজ। আর এখন--একদম মেলে না হাতির দাঁত। তারপর খবর দেওয়া আছে বন বিভাগকে। কোনো হাতি মারা গেলে তাদের কাছ থেকে নিলামে দাঁত কিনে নেই। অনেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া হাতির দাঁতও মাঝে-মধ্যে বিক্রি করেন।"
তিনি বলেন, "হাতির আবাস আর খাদ্যের এখন বড় সঙ্কট দেখা দিয়েছে। তার ওপর আছে, পাহাড় কেটে অপরিকল্পিত বসতি স্থাপন। সব মিলিয়ে বুদ্ধিমান এই প্রাণীটি নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় পাড়ি জমাচ্ছে ভারত ও মায়নমারের গহিন অরণ্যে।"
হাতির দাঁত দিয়ে মেয়েদের প্রায় সব ধরনের সৌখিন অলঙ্কার বানান বিজয়কেতন। তার সংগ্রহে আছে কয়েক ধরনের চুলের কাঁটা, চিরুনী, আঙটি, গলার হার, কানের দুল। ছেলেদের জন্য আছে টাই পিন, কোট পিন, কাফলিঙ্ক, টোবাকো পাইপ, সিগারেট হোল্ডার--ইত্যাদি।
এছাড়া আছে ছোটবড় নানান ধরনের শোপিস। পাওয়া যাবে হাত পাখা, বুদ্ধ মূর্তি, হাতির প্রতিকৃতি, পেপার নাইফ, ছোটো-বড় স্টিক, ফুল-লতা-পাতার নকশা।...
কেমন দাম? এই প্রশ্নে বিজয় বাবু হেসে বলেন, "এই সবের তো কোনো নির্দিষ্ট দাম নেই; পুরোটাই সখের বিষয়। কোন জিনিষের কতো দাম হবে, তা নির্ভর করবে কাজটির আকৃতি ও নকশার ওপর। ২০০ টাকা থেকে শুরু করে এক লাখ টাকার জিনিষও পাবেন আমার কাছে।"
এক লাখ টাকা! "ঠিক তাই, এর চেয়েও বেশী দাম হতে পারে। একটা আস্ত দাঁত খোদাই করে যদি সুক্ষ নকশা করি, তবে দাম হতে পারে এক লাখ টাকারো বেশী। এ কাজে লাগবে এক মাসেরও বেশী সময়।"
*
আপনিই তো এই শিল্পের শেষ কারিগর। এরপর? হতাশা ছড়ায় বিজয়কেতনের কন্ঠে। "এর পর কী হবে জানি না। হাতির দাঁত না পেলে এই শিল্প টিকবে না।" বলেন ৭০ ছুঁই ছুঁই এই শিল্পী। ।
______
ছবি: লেখক
No comments:
Post a Comment