কোটা সংস্কার আন্দোলনকে দমন-পীড়নে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রক্ষা পাবে? এটি সম্ভবতঃ এই সময়ে বিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন।
২
সরকারি চাকরির কোটা সংস্কারের দাবিতে দুই সপ্তাহ ধরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যেই গত রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, সরকারি চাকরিতে কোটার বিষয়টি আদালতেই ফয়সালা করতে হবে।
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, “কোটা আন্দোলন করার আগে তো তাদের রেজাল্টগুলো দেখা উচিত ছিল যে- কোথায় তারা দাঁড়িয়েছে! দ্বিতীয়টি হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি তাদের এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি পুতিরা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতি পুতিরা (চাকরি) পাবে?"
প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যে ‘মর্মাহত’ হয়ে রোববার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষালয়ে আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ দেখান; যেখানে স্লোগান দেওয়া হয়, "তুমি কে আমি কে, রাজাকার-রাজাকার; কে বলেছে কে বলেছ, স্বৈরাচার, স্বৈরাচার’।"
৩
একেই পুঁজি করে "রাজাকার" দমনে নেমেছে পুলিশ, ছাত্রলীগ, তথা হেলমেট লীগ।
দৃশ্যত আন্দোলনে একদিনে ৭ জনের মৃত্যু ও কয়েক হাজার আহত হওয়ার পর শিক্ষার্থীরা পিছু হটেছে।
তবে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় ও রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মংগলবার রাতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বের করে দেয়া হয়েছে। রংপুরের রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় ভিসির বাসভবনে হয়েছে ভাংচুর।
এ পর্যায়ে আরও কয়েকটি দিক নজরে আনা জরুরি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়-স্কুল-কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এরই সাইড ট্রাকে বন্ধ করা হয়েছে মোবাইল ইন্টারনেটে ফেসবুক এক্সেস, সব বিশ্ববিদ্যালয় ও আশেপাশের এলাকায় ইন্টারনেটে ধীর গতি দেখা দিয়েছে। এ কারণে মংগলবার রাতে টিভিগুলোতে ঘটনাস্থল থেকে লাইভ সংবাদ সম্প্রচারে বিঘ্ন ঘটে।
৪
সরকারের এ আক্রমণাত্মক আচরণে এটি স্পষ্ট যে, কোটা সংস্কার আন্দোলন ধীরে ধীরে শিক্ষার আন্দোলন থেকে সরকার বিরোধী আন্দোলনে পরিনত হওয়ায় শাসকগোষ্ঠী ভীত-সন্ত্রস্ত্র হয়ে পড়েছে।
নানা রকম হামলা-মামলার মধ্যেই বছর দুয়েক ধরে চলমান কোটা আন্দোলনে এই প্রথম "স্বৈরাচার!" "স্বৈরাচার!" শ্লোগান উঠেছে।
এছাড়া অসহিষ্ণুতার প্রেক্ষাপট তৈরি করেছে, সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে সাবেক আইজিপি বেনজিরসহ আরও কর্তাদের রাতারাতি কোটিপতিতে পরিনত হওয়ায় কেলেংকারি ফাঁস! এছাড়া ছাগলকাণ্ডে সাবেক এনবিআর কর্মকর্তার দুর্নীতি, সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের যোগসাজশে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের প্রশ্নফাঁস, অস্থির নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের বাজার, দফায় দফায় বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধি।
এসব ইস্যু থেকে দৃষ্টি ফেরাতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে বানচাল করা নার্ভাস সরকারের জন্য হয়তো জরুরি হয়ে পড়েছে।
২০১৩ সালের শাহবাগ গণবিস্ফোরণের পর যে কোনো ইস্যুভিত্তিক সাধারণ শিক্ষার্থী ও জনতার আন্দোলন "মুক্তিযোদ্ধা" বনাম "রাজাকার" বাইনারিতে সহজেই পণ্ড করা অনেকটাই সহজ।
আর এরই ফাঁদে পড়েছে শিক্ষার্থীরা।
আর বরাবরই এসব আন্দোলনে নেচিবাচক ঘি ঢালছে সরকার ও বিরোধী দলে চরম ব্যর্থ বিএনপি-জামাত গোষ্ঠী।
৫
ফুটনোটে, সবকিছু সরকারের ছক মতো হলেও শিক্ষার্থী হত্যা-দমন-পীড়নে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের আপাতত পিছু হটতে হলেও শেষ পর্যন্ত তাদের মাঠে থাকা ছাড়া আর কোনও গত্যন্তর নেই।
~
আরও দেখুন :
No comments:
Post a Comment