বিপ্লব রহমান, ঢাকা: জঙ্গি হামলায় নিহত মুক্তমনা লেখক অভিজিৎ রায় এবং তার প্রকাশক আরেফিন ফয়সাল দিপন একুশের বইমেলায় উপেক্ষিত হওয়ায় তীব্র সমালোচনা করেছেন সাংবাদিক ও লেখক প্রভাষ আমিন।
তিনি বলেন, ‘অভিজিৎ যেন অনেক পুরোনো ইতিহাস। বইমেলায় ‘জাগৃতি প্রকাশনী’র স্টল ছাড়া আর কোথাও তাদের নাম-চিহ্ন নেই। এই বিস্মৃতিপ্রবণতা জাতি হিসেবেই আমাদের খাটো করে দেয়।’
নিউজনেক্সটবিডি ডটকম’র সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এটিএন নিউজের অ্যাসোসিয়েট হেড অব নিউজ ও সমাজ বিশ্লেষক প্রভাষ আমিন এ কথা বলেন। কথোপকথনে নিজস্ব লেখালেখি ও অমর একুশে গ্রন্থমেলার নানা দিক উঠে আসে।
প্রভাষ বলেন, ‘গত বছর ৩১ অক্টোবর একই দিনে অভিজিতের প্রকাশক আহমেদুর রশিদ টুটুলের (‘শুদ্ধস্বর’র স্বত্তাধিকারী) ওপর হামলা এবং ফয়সাল আরেফিন দিপনকে (‘জাগৃতি’র স্বত্তাধিকারী) হত্যার পর দেশজুড়ে বিক্ষোভের ঝড় উঠেছিল। তখন মনে হয়েছিল, এবারের বইমেলা বুঝি মুক্তচিন্তার ওপর হামলার বিষয়কে ঘিরেই আবর্তিত হবে। অথচ মাত্র তিনমাসেই দিপন আজ যেন ভুলে যাওয়া নাম। অভিজিৎ যেন অনেক পুরোনো ইতিহাস।
সহিংস জঙ্গি হামলায় মুক্তচিন্তার দমন সম্ভব নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মৌলবাদীরা রীতিমত তালিকা করে, ঘোষণা দিয়ে মুক্তচিন্তার লেখক, ব্লগার, প্রকাশকদের হত্যা করছে। অভিজিৎকে খুন করা হয়েছে টিএসসির সামনে (২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫), দিপনকে হত্যা করা হয়েছে আজিজ সুপার মার্কেটের অফিসে (৩১ অক্টোবর, ২০১৫)। তাই সাংস্কৃতিক জাগরণ ছাড়া নিছক পুলিশি নিরাপত্তা দিয়ে এই হামলা মোকাবেলা সম্ভব নয়। এদের নির্মূল করতে হবে। কিন্তু ভয়ের ব্যাপার হল, এখন পর্যন্ত ব্লগার-প্রকাশকদের খুনের বিচার হয়নি, খুনীদের চিহ্নিতও করা যায়নি। আর আশার কথা হল, বাংলাদেশে কখনোই ভয় দেখিয়ে মুক্তচিন্তাকে দমন করা যায়নি, যাবেও না।’
বইমেলার বিস্তৃতি ও স্টল বিন্যাস প্রসঙ্গে প্রভাষ আমিন মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখান। তিনি বলেন, ‘শারীরিক অসুস্থতার জন্য এবার এখনো বইমেলায় যাওয়া হয়নি। তবে যারা গিয়েছেন, তারা বলেছেন, এবারের মেলা অনেক গোছানো, অনেক বেশি জায়গা নিয়ে হওয়াতে পাঠক-দর্শকরা আরামে ঘুরে বেড়াতে পারছেন। তবে আরেকটা কথা আমি অনেকদিন ধরে বলে আসছি, বইমেলাকে দুই ভাগ না করে এক জায়গায় করার। বর্ধমান হাউস চত্বরে শুধু সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মঞ্চটি রেখে পুরো মেলাটি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্থানান্তর করলে ভালো হয়। নইলে একটা বিভ্রান্তি থেকেই যায়। অনেকেই বাংলা একাডেমি চত্বরে ঘোরাঘুরি করে ক্লান্ত হয়ে মূল মেলায় না গিয়েই ফিরে যান।’
‘অমর একুশের গ্রন্থমেলা এখন আমাদের সংস্কৃতির অঙ্গ’ উল্লেখ করে প্রভাষ বলেন, ‘আামাদের প্রকাশনা শিল্পও এখন বইমেলাকেন্দ্রিক। বইমেলা ভালো, তবে একমাসের মেলা শেষে ১১ মাস ঝিমিয়ে কাটানো প্রকাশনা শিল্পের জন্য স্বাস্থ্যকর নয়। চিন্তাকে, সৃজনশীলতাকে ছড়িয়ে দিতে হবে বছরজুড়ে।’
টেলিভিশন সাংবাদিকতার পাশাপাশি লেখালেখি তার দীর্ঘদিনের চর্চা—এ কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দেখুন, টেলিভিশন সাংবাদিকতার আগে আমি দীর্ঘদিন প্রিন্ট মিডিয়ায় কাজ করেছি। আর লেখালেখির প্রতি ভালোবাসা থেকেই সাংবাদিকতায় আসা। তাই লেখালেখিটা সব সময়ই চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। তবে টেলিভিশন সাংবাদিকতা শুরুর পর লেখালেখির তাগিদটা একটু বেশিই কাজ করে। কারণ বলা হয়, টেলিভিশনে সাংবাদিকতা কম, টেকনোলজি বেশি। আর সবসময় আমি মনের আনন্দে লেখালেখি করি। কোনো পরিকল্পনা করে নয়, যখন যা মনে আসে তাই লেখি।’
নিজস্ব লেখালেখির প্রসঙ্গে প্রভাষ আমিন বলেন, ‘এবারের বইমেলায় আমার দুটি বই প্রকাশিত হয়েছে। ‘তাম্রলিপি’ প্রকাশ করেছে ‘মাথায় কত প্রশ্ন আসে’। এটি সমকালীন রাজনীতি ও নানা সমাজ ভাবনা নিয়ে লেখা। দাম: ৩৩৫ টাকা। প্রচ্ছদ একেছেন ধ্রুব এষ। ‘স্পোর্টিংলি নাও’ প্রকাশ করেছে ‘আদর্শ’। এটি মূলত খেলাধূলা বিষয়ক লেখার সংকলন। দাম ২০০ টাকা। প্রচ্ছদ- প্রান্ত ঘোষ দস্তিদার।’
তিনি জানান, তার প্রথম বই ‘স্বাধীনতা আমার ভালো লাগে না’ প্রকাশিত হয় ২০১৩ সালে [ঐতিহ্য প্রকাশনী, প্রচ্ছদ- ধ্রুব এষ]। এটি গণমাধ্যম সম্পর্কিত এবং সমকালীন রাজনীতির নানা দিক নিয়ে লেখা একটি গ্রন্থ।
এছাড়া তার প্রকাশিত অন্যান্য বইগুলো হচ্ছে: ‘প্রধানমন্ত্রী যেখানে অসহায়’ [২০১৪ সাল, অন্যপ্রকাশ, প্রচ্ছদ- ধ্রুব এষ], একই বছর ‘রাজাকারের ফাঁসি সারা বাংলার হাসি’ [অনন্যা, প্রচ্ছদ- নওরোজ ইমতিয়াজ], ‘প্রসূনদের জন্য ভালোবাসা’ [২০১৫ সাল, অন্যপ্রকাশ, প্রচ্ছদ-ধ্রুব এষ] এবং একই বছর ‘স্বৈরাচারের দালাল বলছি’ [তাম্রলিপি, প্রচ্ছদ-ধ্রুব এষ]।
নিউজনেক্সটবিডি ডটকম/বিআর/এফআর
মূল লেখাটি এখানে: http://bangla.newsnextbd.com/articl...
তিনি বলেন, ‘অভিজিৎ যেন অনেক পুরোনো ইতিহাস। বইমেলায় ‘জাগৃতি প্রকাশনী’র স্টল ছাড়া আর কোথাও তাদের নাম-চিহ্ন নেই। এই বিস্মৃতিপ্রবণতা জাতি হিসেবেই আমাদের খাটো করে দেয়।’
নিউজনেক্সটবিডি ডটকম’র সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এটিএন নিউজের অ্যাসোসিয়েট হেড অব নিউজ ও সমাজ বিশ্লেষক প্রভাষ আমিন এ কথা বলেন। কথোপকথনে নিজস্ব লেখালেখি ও অমর একুশে গ্রন্থমেলার নানা দিক উঠে আসে।
প্রভাষ বলেন, ‘গত বছর ৩১ অক্টোবর একই দিনে অভিজিতের প্রকাশক আহমেদুর রশিদ টুটুলের (‘শুদ্ধস্বর’র স্বত্তাধিকারী) ওপর হামলা এবং ফয়সাল আরেফিন দিপনকে (‘জাগৃতি’র স্বত্তাধিকারী) হত্যার পর দেশজুড়ে বিক্ষোভের ঝড় উঠেছিল। তখন মনে হয়েছিল, এবারের বইমেলা বুঝি মুক্তচিন্তার ওপর হামলার বিষয়কে ঘিরেই আবর্তিত হবে। অথচ মাত্র তিনমাসেই দিপন আজ যেন ভুলে যাওয়া নাম। অভিজিৎ যেন অনেক পুরোনো ইতিহাস।
সহিংস জঙ্গি হামলায় মুক্তচিন্তার দমন সম্ভব নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মৌলবাদীরা রীতিমত তালিকা করে, ঘোষণা দিয়ে মুক্তচিন্তার লেখক, ব্লগার, প্রকাশকদের হত্যা করছে। অভিজিৎকে খুন করা হয়েছে টিএসসির সামনে (২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫), দিপনকে হত্যা করা হয়েছে আজিজ সুপার মার্কেটের অফিসে (৩১ অক্টোবর, ২০১৫)। তাই সাংস্কৃতিক জাগরণ ছাড়া নিছক পুলিশি নিরাপত্তা দিয়ে এই হামলা মোকাবেলা সম্ভব নয়। এদের নির্মূল করতে হবে। কিন্তু ভয়ের ব্যাপার হল, এখন পর্যন্ত ব্লগার-প্রকাশকদের খুনের বিচার হয়নি, খুনীদের চিহ্নিতও করা যায়নি। আর আশার কথা হল, বাংলাদেশে কখনোই ভয় দেখিয়ে মুক্তচিন্তাকে দমন করা যায়নি, যাবেও না।’
বইমেলার বিস্তৃতি ও স্টল বিন্যাস প্রসঙ্গে প্রভাষ আমিন মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখান। তিনি বলেন, ‘শারীরিক অসুস্থতার জন্য এবার এখনো বইমেলায় যাওয়া হয়নি। তবে যারা গিয়েছেন, তারা বলেছেন, এবারের মেলা অনেক গোছানো, অনেক বেশি জায়গা নিয়ে হওয়াতে পাঠক-দর্শকরা আরামে ঘুরে বেড়াতে পারছেন। তবে আরেকটা কথা আমি অনেকদিন ধরে বলে আসছি, বইমেলাকে দুই ভাগ না করে এক জায়গায় করার। বর্ধমান হাউস চত্বরে শুধু সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মঞ্চটি রেখে পুরো মেলাটি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্থানান্তর করলে ভালো হয়। নইলে একটা বিভ্রান্তি থেকেই যায়। অনেকেই বাংলা একাডেমি চত্বরে ঘোরাঘুরি করে ক্লান্ত হয়ে মূল মেলায় না গিয়েই ফিরে যান।’
‘অমর একুশের গ্রন্থমেলা এখন আমাদের সংস্কৃতির অঙ্গ’ উল্লেখ করে প্রভাষ বলেন, ‘আামাদের প্রকাশনা শিল্পও এখন বইমেলাকেন্দ্রিক। বইমেলা ভালো, তবে একমাসের মেলা শেষে ১১ মাস ঝিমিয়ে কাটানো প্রকাশনা শিল্পের জন্য স্বাস্থ্যকর নয়। চিন্তাকে, সৃজনশীলতাকে ছড়িয়ে দিতে হবে বছরজুড়ে।’
টেলিভিশন সাংবাদিকতার পাশাপাশি লেখালেখি তার দীর্ঘদিনের চর্চা—এ কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দেখুন, টেলিভিশন সাংবাদিকতার আগে আমি দীর্ঘদিন প্রিন্ট মিডিয়ায় কাজ করেছি। আর লেখালেখির প্রতি ভালোবাসা থেকেই সাংবাদিকতায় আসা। তাই লেখালেখিটা সব সময়ই চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। তবে টেলিভিশন সাংবাদিকতা শুরুর পর লেখালেখির তাগিদটা একটু বেশিই কাজ করে। কারণ বলা হয়, টেলিভিশনে সাংবাদিকতা কম, টেকনোলজি বেশি। আর সবসময় আমি মনের আনন্দে লেখালেখি করি। কোনো পরিকল্পনা করে নয়, যখন যা মনে আসে তাই লেখি।’
নিজস্ব লেখালেখির প্রসঙ্গে প্রভাষ আমিন বলেন, ‘এবারের বইমেলায় আমার দুটি বই প্রকাশিত হয়েছে। ‘তাম্রলিপি’ প্রকাশ করেছে ‘মাথায় কত প্রশ্ন আসে’। এটি সমকালীন রাজনীতি ও নানা সমাজ ভাবনা নিয়ে লেখা। দাম: ৩৩৫ টাকা। প্রচ্ছদ একেছেন ধ্রুব এষ। ‘স্পোর্টিংলি নাও’ প্রকাশ করেছে ‘আদর্শ’। এটি মূলত খেলাধূলা বিষয়ক লেখার সংকলন। দাম ২০০ টাকা। প্রচ্ছদ- প্রান্ত ঘোষ দস্তিদার।’
তিনি জানান, তার প্রথম বই ‘স্বাধীনতা আমার ভালো লাগে না’ প্রকাশিত হয় ২০১৩ সালে [ঐতিহ্য প্রকাশনী, প্রচ্ছদ- ধ্রুব এষ]। এটি গণমাধ্যম সম্পর্কিত এবং সমকালীন রাজনীতির নানা দিক নিয়ে লেখা একটি গ্রন্থ।
এছাড়া তার প্রকাশিত অন্যান্য বইগুলো হচ্ছে: ‘প্রধানমন্ত্রী যেখানে অসহায়’ [২০১৪ সাল, অন্যপ্রকাশ, প্রচ্ছদ- ধ্রুব এষ], একই বছর ‘রাজাকারের ফাঁসি সারা বাংলার হাসি’ [অনন্যা, প্রচ্ছদ- নওরোজ ইমতিয়াজ], ‘প্রসূনদের জন্য ভালোবাসা’ [২০১৫ সাল, অন্যপ্রকাশ, প্রচ্ছদ-ধ্রুব এষ] এবং একই বছর ‘স্বৈরাচারের দালাল বলছি’ [তাম্রলিপি, প্রচ্ছদ-ধ্রুব এষ]।
নিউজনেক্সটবিডি ডটকম/বিআর/এফআর
মূল লেখাটি এখানে: http://bangla.newsnextbd.com/articl...
No comments:
Post a Comment