দেশের সব ক্ষুদ্রজাতির ভাষা সংরক্ষণ ও বিকাশে প্রথমবারের মতো সমীক্ষা করতে যাচ্ছে সরকার। এ জন্য আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট এরই মধ্যে গ্রহণ করেছে বছরব্যাপী এক কর্মসূচি। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল ভাষা ও নৃবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞ এবং চৌকস একটি কর্মীবাহিনী আগামী মার্চ থেকে শুরু করবে মাঠপর্যায়ের সমীক্ষার কাজ। ক্ষুদ্রজাতির প্রতিনিধিরাও যুক্ত থাকছেন এ উদ্যোগে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ‘বাংলাদেশে নৃভাষার বৈজ্ঞানিক সমীক্ষা’ নামক পরীক্ষামূলক এই কর্মসূচি চলবে ক্ষুদ্রজাতি অধ্যুষিত দেশের ২০টি অঞ্চলে। এরপর চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গা, ম্রো, লুসাই, বম, রাখাইন, গারো, হাজং, সাঁওতাল, ওঁরাও, মুণ্ডা, খাসিয়া, মণিপুরিসহ প্রায় ৭০টি ক্ষুদ্রজাতির প্রায় ২৫ লাখ মানুষের নিজস্ব ভাষা, উচ্চারণ, বর্ণমালা, ভাষার বৈশিষ্ট্য, ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে চলবে গবেষণা। পরে মাঠ পর্যায়ের সব তথ্য ও শ্রুতি সংরক্ষণ করা হবে মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের নিজস্ব তথ্য ব্যাংকে। ভাষাগত সংখ্যালঘুর এসব তথ্য-উপাত্ত নিয়ে বাংলা ও ইংরেজিতে প্রকাশ করা হবে বিশদ গ্রন্থ। এসব গ্রন্থ সবার জন্য উন্মুক্ত করা হবে ওয়েবসাইটেও।
সরকারি অর্থায়নে পুরো সমীক্ষায় ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় চার কোটি টাকা। পরে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত নিয়ে চলবে নিবিড় গবেষণা। বিস্তারিত কর্মসূচি নিয়ে পরবর্তী সময়ে বড় মাপে আরেকটি পূর্ণাঙ্গ ভাষাভিত্তিক সমীক্ষা হবে।
ভারত উপমহাদেশে ১৯ শতকের শুরুতে প্রথম ভাষাগত সমীক্ষা করেন জর্জ আব্রাহাম গিয়ারসন। এটি একটি ঐতিহাসিক তথ্যসূত্র হিসেবে বহু গবেষণায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কিন্তু তথ্য স্বল্পতার কারণে প্রাচীন এই সমীক্ষার রয়েছে অনেক সীমাবদ্ধতা। এটি যথাযথ মাঠ পর্যায়ের সমীক্ষাও নয়। বাংলাদেশের ভাষাগত সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর সব ভাষাও এতে স্থান পায়নি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, বহু ভাষা ও সংস্কৃতিতে বৈচিত্র্যপূর্ণ বাংলাদেশে ক্ষুদ্রজাতির সব ভাষা, নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য, রীতিনীতি, কৃষ্টি-সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণে এখন নতুন করে নেওয়া ভাষাবিষয়ক সমীক্ষাটি এ ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখবে।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. জীনাত ইমতিয়াজ আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ভাষা কেবল প্রকাশমাধ্যম নয়, তা একটি জাতির সাংস্কৃতিক স্বরূপের নির্দেশনাও। তাই বৃহত্তর ভাষার প্রভাবে দেশের ভাষাগত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বহু ভাষা আজ বিপন্ন। ক্ষুদ্রজাতির কয়েকটি ভাষা এরই মধ্যে বিলুপ্তপ্রায়।’ তিনি আরো বলেন, ‘কিন্তু সংখ্যালঘুদের এসব ভাষা ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য আমাদের এক অমূল্য সম্পদ। তাই এসব সংরক্ষণ ও বিকাশে ক্ষুদ্রজাতির ভাষাবিষয়ক সমীক্ষাটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া পড়াশোনা, গবেষণা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানচর্চায় সমীক্ষাটি ব্যবহৃত হবে তথ্যসূত্র হিসেবে।’
‘বাংলাদেশে নৃ-ভাষার বৈজ্ঞানিক সমীক্ষা’ কর্মসূচির পরিচালক ড. অরুণা বিশ্বাস বলেন, ‘দেশের ক্ষুদ্রজাতির ভাষা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে একেকটি গ্রন্থে একেক রকম তথ্য দেওয়া আছে। অনেক তথ্য আবার নির্ভরযোগ্যও নয়। এমনই বাস্তবতায় ইনস্টিটিউটের ভাষাবিষয়ক সমীক্ষাটি হবে ভাষা ও নৃবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞ, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সংশ্লিষ্ট জাতিগোষ্ঠীর অংশগ্রহণে বৈজ্ঞানিক পন্থায়। এর তথ্য-উপাত্ত যেন যথাযথ হয়, সেদিকে দেওয়া হবে বিশেষ গুরুত্ব। এসব কারণে আমরা মনে করছি, সব মহলে এই সমীক্ষা গ্রন্থের বিশেষ গ্রহণযোগ্যতা থাকবে।’
- See more at: http://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2014/02/13/51736#sthash.XLPkmCNc.dpuf
No comments:
Post a Comment