Thursday, December 25, 2025

উল্টে গেল পাশার দান?

 বাংলাদেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন অনেক রাজনৈতিক হিসেব-নিকেশ উল্টেপাল্টে দেবে। 


দীর্ঘ ১৭ বছর নির্বাসন জীবনের অবসান ঘটিয়ে বড়দিনে (২৫ ডিসেম্বর) তার দেশে ফেরার ঘটনায় এত বিপুল সংখ্যক জনমানুষের সমাগম, অভুদপূর্ব ঘটনা। নানা দিক থেকেই তার এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তন একই সঙ্গে ইতিহাস রচনা করতে যাচ্ছে।  

সম্প্রতি যে ফ্যানাটিক ফ্যাসিস্ট শক্তির আগুন সন্ত্রাসে দেশ প্রকাশ্যে কাউন্টার প্রক্সি ওফ্যার শুরু এবং ইউনূস সরকারের বিবৃতিতেই হাত ধুয়ে ফেলার প্রবনতা,   দৃশ্যতই তা পিছু হটবে, জনবিচ্ছিন্ন শক্তিতে পরিনত হবে ধর্মীয় ফ্যাসিবাদ। 
একই সঙ্গে নারী, বাউল, আদিবাসী, সনাতন সম্প্রদায় এবং মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ও ভাস্কযর্র ওপর যে আঘাত-- তাও স্থগিত হবে আশা করা যায়। নেতৃত্বহীন দেশে তারেক রহমান তা বক্তৃতায় শান্তির কথা শুনিয়েছেন। 


বিশ্লেষণ বলছে, কাউন্টার প্রক্সি ওয়্যারে উগ্র মৌলবাদী উত্থান, আসন্ন নির্বাচন ও গণতন্ত্রে যাত্রার জন্য হুমকি। শেষ বিচারে পশ্চিমা বিশ্ব তো বটেই, প্রতিবেশি দেশগুলো নিজ নিজ স্বার্থেই চাইবে, বাংলাদেশ শান্তি ও স্থিতিশীলতায় ফিরুক। 
 
ছোট্ট একটি দেশ বাংলাদেশ কখনোই চাইবে না ভারতের সঙ্গে দীর্ঘ শত্রুতা করে যাত্রা ভঙ্গ করতে।  
 
সেক্ষেত্রে তারেক রহমানের দেশে ফেরায় আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচন গতিপ্রাপ্ত হবে। এরই মধ্যে বিএনপি ‘একলা চল’ নীতি নিয়েছে। অবশ্য বামসহ দু-একটি দলের সাথে তাদের নির্বাচনী আসন ভাগাভাগির সম্ভাবনা আছে। 
 
অন্যদিকে, জামায়াত ও এনসিপি একসাথে নির্বাচন করার কথা জানিয়েছে। তাদের সাথে আছে অপরাপর ইসলামী দল। 
এই সমীকরণটি আগামী দেশি --বিদেশি রাজনীতির জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। 
 
বিএনপি সরকার গঠন করলে (এর সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি) উভয়ের স্বার্থ রক্ষার সুযোগ সর্বোচ্চ থাকছে, মৌলবাদী জামায়াতে ইসলামীর ক্ষেত্রে হবে ঠিক তার বিপরীত। আবার বিএনপির সাথে জামায়াতের বৈরি সম্পর্কও দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে সহায়ক। 
 
চীন, রাশিয়া ও পাকিস্তানের ক্ষেত্রেও তাই।  
 
এক্ষেত্রে মার্কিন প্রক্সি ওয়্যার কিছুটা ব্যাকফুটে খেলবে। কাউন্টার প্রক্সি ওয়্যার সামাল দেওয়াও সহজ হবে। 
 

 https://youtu.be/LPBOxxbE3ng?si=qVVgyuWTqUlbPMUx

এবার দেখা যাক, বিশাল জনসমূদ্রে দেওয়া ১৫ মিনিটের বক্তব্যে তারেক রহমান আশু কী কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছেন বলে জানিয়েছেন? 
 
খবরে প্রকাশ, দেশে ফেরার পর পূর্বাচলের সংবর্ধনা মঞ্চে যুক্তরাষ্ট্রের বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের নেতা মার্টিন লুথার কিংয়ের বক্তব্যের সঙ্গে মিলিয়ে তিনি বলেছেন, “আই হ্যাভ এ প্ল্যান ফর দ্য পিপল অব মাই কান্ট্রি।”
 
“আজ এই বাংলাদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে আপনাদের সকলের সামনে আমি বলতে চাই, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের একজন সদস্য হিসেবে আপনাদের সামনে আমি বলতে চাই, আই হ্যাভ এ প্ল্যান ফর দ্য পিপল অব মাই কান্ট্রি, ফর মাই কান্ট্রি।”
 
“আজ এই পরিকল্পনা দেশের মানুষের স্বার্থে, দেশের উন্নয়নের জন্য, দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য যদি সেই প্ল্যান, সেই কার্যক্রম, সেই পরিকল্পনাকে বাস্তবায়ন করতে হয়।”
 
“প্রিয় ভাই-বোনেরা, এই জনসমুদ্রে যত মানুষ উপস্থিত আছেন, এই সারা বাংলাদেশে গণতন্ত্রের শক্তি যত মানুষ উপস্থিত আছেন, প্রত্যেকটি মানুষের সহযোগিতা আমার লাগবে। প্রত্যেকটি, প্রত্যেকটি মানুষের সহযোগিতা আমাদের লাগবে।”
 
“আপনারা যদি আমাদের পাশে থাকেন, আপনারা যদি আমাদেরকে সহযোগিতা করেন, ইনশাআল্লাহ আমরা ’আই হ্যাভ এ প্ল্যান’ বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হব।”



বিএনপি ও অপরাপর বাম শক্তিগুলোর রাজনৈতিক দক্ষতা ও প্রজ্ঞার ওপরে নির্ভর করবে কাউন্টার প্রক্সি ওয়্যার কত দ্রুত সামাল দেওয়া সম্ভব হয়। আবার এর অভাবে ভবিষ্যত বিএনপি সরকারের অগ্রযাত্রাই পড়বে প্রশ্নের মুখে। 
 
এদিক থেকে দেখলে বলতে হয়, বাঘের পিঠে চড়ছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান; সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে তিনি হবেন আগামী বিএনপি সরকারের প্রধানমন্ত্রী!
আর কে না জানে, পিঠ থেকে পিছলে পড়লে ক্ষমতা নামক বাঘ ঘাড় কামড়ে ধরবে সওয়ারীই। 

No comments:

Post a Comment