আমরা তো ভুলি নাই শহীদ...
দিনাজপুর প্রতিনিধি খবর দেওয়ার আগেই ফুলবাড়ি গণবিদ্রোহে গুলি চালানো প্রথম খবর পাই আন্দোলনের বন্ধুদের কাছ থেকে। তখনো গুলি আর টিয়ার শেল বর্ষণ চলছিলো (২৬ আগস্ট, ২০০৭, বিকেল বেলা)।
আমি খবরটি নিশ্চিত করার জন্য সঙ্গে সঙ্গে দিনাজপুরে পরিচিত সাংবাদিকদের টেলিফোন করা শুরু করি। অফিসে জানাই, টপমোস্ট নিউজ রেডি হচ্ছে।
প্রাক-কথন বাংলাদেশে গত ২৯ জুলাই জাবালে নূরের দুটি বাসের রেষারেষির মধ্যে একটি বাস ঢাকার বিমানবন্দর সড়কের এমইএস এলাকায় রাস্তার পাশে দাঁড়ানো একদল শিক্ষার্থীর উপর উঠে যায়। এতে শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী ঘটনাস্থলেই নিহত হলে ক্ষোভে ফেটে পড়ে তাদের সহপাঠীরা। ধীরে ধীরে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকার সব রাজপথে গড়ে তোলে “নিরাপদ সড়ক আন্দোলন”।
অভূতপূর্ব এই স্বতস্ফূর্ত আন্দোলন খুব শিগগিরই স্ফূলিঙ্গ থেকে দাবানলের মতো ছড়িয়ে যায় শহর থেকে বন্দরে, নগর থেকে নগরে, সারা বাংলাদেশে। শিক্ষার্থীরা রোদ-বৃষ্টি, পুলিশ ও ছাত্রলীগের লাঠিপেটা উপেক্ষা করে ট্রাফিকের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে বুঝিয়ে দেয় সিস্টেমের গলদ।
উই ওয়ান্ট জাস্টিস!
“রাস্তা বন্ধ। রাষ্ট্র মেরামতের কাজ চলিতেছে।”.... “আমরা যদি না জাগি মা,
ক্যামনে সকাল হবে?” … “যদি তুমি ভয় পাও, তবে তুমি শেষ, যদি তুমি ঘুরে
দাঁড়াও, তবে তুমিই বাংলাদেশ!”…
এগুলো কিশোর বিদ্রোহীদের প্ল্যাকার্ডের তিনটি শ্লোগান। এই সময়ে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় এই ছোট পাখিদের কলরব।
প্রথমে রাজধানী ঢাকায়, পরে সারাদেশ জুড়ে অভূতপূর্ব জাগরণ এনেছে
স্কুল-কলেজের ছোট ছেলেমেয়েরা। মন্ত্রী থেকে পুলিশ, ভিআইপি থেকে সিআইপি --
সবার ওপর কর্তৃত্ব করছে ওরা।দেশের ট্রাফিক ব্যবস্থার গুরুভার কচি কাঁধে
তুলে ধরে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে সিস্টেমের গলদ। এই কিশোর বিদ্রোহীরা
রোদ-বৃষ্টি, পুলিশ ও ছাত্রলীগের লাঠিপেটা, হুমকি-ধামকি, চোখ রাঙানি – সব
উপেক্ষা করে এক সপ্তাহ ধরে দখল করে রেখেছে রাজপথ। মূল দাবি একটাই – নিরাপদ
সড়ক চাই। এক সপ্তাহ জুড়ে চলছে এই অভূতপূর্ব আন্দোলন।