পাহাড়, অরণ্য, ঝর্ণাধারায় নয়নাভিরাম পার্বত্য চট্টগ্রাম এখন সাম্প্রতিক অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি সহিংস, রাজনৈতিক সংঘাতময়। পাহাড়ি-অভিবাসী বাঙালি (সেটেলার) দ্বন্দ্ব-সংঘাতের মূল রাজনৈতিক মেরুকরণের বাইরে সেখানের পাহাড়ি আঞ্চলিক দল-উপদলগুলোর মধ্যে সশস্ত্র সংঘাত এখন উদ্বেগ মাত্রায় পৌঁছেছে। ভাতৃঘাতী হত্যার হিংসার রাজনীতির বিপরীতে চলছে পাল্টা হত্যার প্রতিহিংসার রাজনীতি।
রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি শক্তিমান চাকমাকে বৃহস্পতিবার দিনে-দুপুরে তার কার্যালয়ের সামনে গুলি করে হত্যা করা হয়।
জেএসএস-সংস্কারপন্থী এ নেতার হত্যার পর পরই পাহাড়ের পর্যবেক্ষক মহল ধারণা করছিলেন, পার্বত্য রাজনীতিতে অশনী সংকেত ঘনিয়ে আসছে। শিগগিরই এর জেরে সেখানে আরো রক্ত ঝরবে। একের পর এক ধারাবাহিক হত্যাকাণ্ড হতেই থাকবে।
শেষ পর্যন্ত বোধহয় সেই আশঙ্কায় সত্যি হচ্ছে। পরদিন শুক্রবার শক্তিমানের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিতে জেএসএস (এমএন লারমা) এবং ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক) একদল নেতাকর্মী খাগড়াছড়ি থেকে রাঙামাটি যাওয়ার পথে হামলার শিকার হন। তাদের মাইক্রোবাসে প্রকাশ্যে গুলি চালিয়ে চালকসহ পাঁচজনকে হত্যা করা হয়। আহত হন আরো আটজন।
পাহাড়ের সূত্রগুলো নিশ্চিত করে বলছে, নিহতদের মধ্যে ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক গ্রুপের প্রধান তপন জ্যোতি চাকমা, ওরফে বর্মাও রয়েছেন। সংগঠন দুটি এই হত্যাকাণ্ডের জন্য ইউপিডিএফকে দায়ী করলেও প্রসিত খীসার নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফ গ্রুপটি তা অস্বীকার করেছে।
পর পর এইসব নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় চমকে উঠেছেন সেখানের শান্তিপ্রিয় পাহাড়ি-বাঙালি সাধারণ মানুষ। দেশের রাজনৈতিক মহলও নড়েচড়ে বসেছেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শুক্রবার রাজধানীর এক অনুষ্ঠানে এমন মন্তব্য করেছেন, নির্বাচন সামনে রেখে এ বছর আরো অনেক অঘটন ঘটানোর চক্রান্ত হচ্ছে।
পর্যবেক্ষণ বলছে, শক্তিমান চাকমা এবং চার সহযোগীসহ বর্মা চাকমা হত্যাকাণ্ড কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এই দুই হত্যাকাণ্ড সম্প্রতি সময়ে চলমান হত্যা-অপহরণ, আর পাল্টা হত্যার প্রতিশোধের রাজনীতির ইঙ্গিতবাহী।
১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য শান্তিচুক্তির পর পার্বত্যাঞ্চলে গত আড়াই দশকে পাহাড়ি রাজনৈতিক শক্তিগুলো এখন চারটি দল ও উপদলে বিভক্ত হয়ে প্রায়ই একে অপরের সঙ্গে দ্বন্দ্ব-সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছে। ঐতিহাসিক শান্তিচুক্তির পর বহু বছর ধরে শান্তিচুক্তির পক্ষে-বিপক্ষে সন্ত লারমার নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সঙ্গে প্রসিত খীসার চুক্তি বিরোধী গ্রুপ ইউপিডিএফের রক্তাক্ত সংঘাত চলে আসছে। আড়াই দশকে অসংখ্য হামলায় দুই গ্রুপের আনুমানিক হাজার তিনেক নেতাকর্মী মারা গেছেন।
২০১০ সালে সুধাসিন্ধু খীসা-রূপায়ন দেওয়ানের নেতৃত্ব জেএসএস (এমএন লারমা) নামে নতুন গ্রুপ সৃষ্টি হয়। এতো বছর ধরে তারাও ইউপিডিএফের সাথে যুক্ত হয়ে জেএসএস মূল দলের ওপর অসংখ্য চোরাগোপ্তা হামলায় খুন-জখম চালিয়েছে। বছরখানেক আগে তপন জ্যোতি চাকমার (বর্মা) নেতৃত্বে ইউপিডিএফে ভাঙন হয়ে ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক গঠন হলে এই চারটি বিভাজনে পার্বত্য রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ হয়।
বছর দুয়েক হলো সন্ত লারমার জেএসএস ও প্রসিত খীসার ইউপিডিএফ রাজনৈতিক সমঝোতায় আসায় উভয়ের মধ্যে শান্তিপুর্ণ অবস্থান দেখা দিয়েছে। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে জেএসএস (এমএন লারমা) ও ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) এক জোট হয়ে প্রসীতের ইউপিডিএফের সঙ্গে সশস্ত্র সংঘাত চালিয়ে আসছিল।
এরই জেরে এ বছর ২৮ ফেব্রুয়ারি খাগড়াছড়িতে খুন হন ইউপিডিএফ নেতা মিথুন চাকমা। ১৮ মার্চ ইউপিডিএফ সমর্থিত হিল উইমেন্স ফেডারেশনের দুই নেত্রী মন্টি ও দয়াসোনা চাকমা রাঙামাটি থেকে একমাসের জন্য অপহৃত হন। ২২ এপ্রিল খাগড়াছড়ির পানছড়িতে খুন হন ইউপিডিএফ সংগঠক সুনীল বিকাশ ত্রিপুরা। প্রতিটি ঘটনার জন্যই গ্রুপটি প্রতিপক্ষ ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) ও জেএসএস (এমএন লারমা)কে দায়ী করে আসছিল। যদিও অভিযুক্ত গ্রুপটি তা অস্বীকার করে।
এখন সবশেষ শক্তিমান চাকমা ও চার সহযোগীসহ তপনজ্যোতি চাকমা (বর্মা) হত্যাকাণ্ড এসব সহিংসতারই প্রতিশোধ হলে খুব আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকবে না।
উপসংহারের বদলে
গেরিলা যুদ্ধের মহানায়ক মাও সেতুং এর একটি বিখ্যাত উক্তি, ‘আমাদের নীতি হচ্ছে, পার্টি বন্দুককে কমান্ড করবে, বন্দুক পার্টিকে কখনোই নয়।’ কিন্তু দৃশ্যতই পাহাড়ের গ্রুপগুলো এর উল্টোটাই চর্চা করছে, অস্ত্রবাজী ও আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্বে অকালে ঝরে পড়ছে কত তাজা প্রাণ!
ইতিহাস সাক্ষী, রাজনৈতিক সমঝোতা না হলে এই খুনোখুনি, বৃথা রক্তপাত চলতেই থাকবে। আর পাহাড়ে উন্নয়ন, স্থিতিশীলতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে সুদূর পরাহত।
রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি শক্তিমান চাকমাকে বৃহস্পতিবার দিনে-দুপুরে তার কার্যালয়ের সামনে গুলি করে হত্যা করা হয়।
জেএসএস-সংস্কারপন্থী এ নেতার হত্যার পর পরই পাহাড়ের পর্যবেক্ষক মহল ধারণা করছিলেন, পার্বত্য রাজনীতিতে অশনী সংকেত ঘনিয়ে আসছে। শিগগিরই এর জেরে সেখানে আরো রক্ত ঝরবে। একের পর এক ধারাবাহিক হত্যাকাণ্ড হতেই থাকবে।
শেষ পর্যন্ত বোধহয় সেই আশঙ্কায় সত্যি হচ্ছে। পরদিন শুক্রবার শক্তিমানের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিতে জেএসএস (এমএন লারমা) এবং ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক) একদল নেতাকর্মী খাগড়াছড়ি থেকে রাঙামাটি যাওয়ার পথে হামলার শিকার হন। তাদের মাইক্রোবাসে প্রকাশ্যে গুলি চালিয়ে চালকসহ পাঁচজনকে হত্যা করা হয়। আহত হন আরো আটজন।
পাহাড়ের সূত্রগুলো নিশ্চিত করে বলছে, নিহতদের মধ্যে ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক গ্রুপের প্রধান তপন জ্যোতি চাকমা, ওরফে বর্মাও রয়েছেন। সংগঠন দুটি এই হত্যাকাণ্ডের জন্য ইউপিডিএফকে দায়ী করলেও প্রসিত খীসার নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফ গ্রুপটি তা অস্বীকার করেছে।
পর পর এইসব নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় চমকে উঠেছেন সেখানের শান্তিপ্রিয় পাহাড়ি-বাঙালি সাধারণ মানুষ। দেশের রাজনৈতিক মহলও নড়েচড়ে বসেছেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শুক্রবার রাজধানীর এক অনুষ্ঠানে এমন মন্তব্য করেছেন, নির্বাচন সামনে রেখে এ বছর আরো অনেক অঘটন ঘটানোর চক্রান্ত হচ্ছে।
পর্যবেক্ষণ বলছে, শক্তিমান চাকমা এবং চার সহযোগীসহ বর্মা চাকমা হত্যাকাণ্ড কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এই দুই হত্যাকাণ্ড সম্প্রতি সময়ে চলমান হত্যা-অপহরণ, আর পাল্টা হত্যার প্রতিশোধের রাজনীতির ইঙ্গিতবাহী।
১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য শান্তিচুক্তির পর পার্বত্যাঞ্চলে গত আড়াই দশকে পাহাড়ি রাজনৈতিক শক্তিগুলো এখন চারটি দল ও উপদলে বিভক্ত হয়ে প্রায়ই একে অপরের সঙ্গে দ্বন্দ্ব-সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছে। ঐতিহাসিক শান্তিচুক্তির পর বহু বছর ধরে শান্তিচুক্তির পক্ষে-বিপক্ষে সন্ত লারমার নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সঙ্গে প্রসিত খীসার চুক্তি বিরোধী গ্রুপ ইউপিডিএফের রক্তাক্ত সংঘাত চলে আসছে। আড়াই দশকে অসংখ্য হামলায় দুই গ্রুপের আনুমানিক হাজার তিনেক নেতাকর্মী মারা গেছেন।
২০১০ সালে সুধাসিন্ধু খীসা-রূপায়ন দেওয়ানের নেতৃত্ব জেএসএস (এমএন লারমা) নামে নতুন গ্রুপ সৃষ্টি হয়। এতো বছর ধরে তারাও ইউপিডিএফের সাথে যুক্ত হয়ে জেএসএস মূল দলের ওপর অসংখ্য চোরাগোপ্তা হামলায় খুন-জখম চালিয়েছে। বছরখানেক আগে তপন জ্যোতি চাকমার (বর্মা) নেতৃত্বে ইউপিডিএফে ভাঙন হয়ে ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক গঠন হলে এই চারটি বিভাজনে পার্বত্য রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ হয়।
বছর দুয়েক হলো সন্ত লারমার জেএসএস ও প্রসিত খীসার ইউপিডিএফ রাজনৈতিক সমঝোতায় আসায় উভয়ের মধ্যে শান্তিপুর্ণ অবস্থান দেখা দিয়েছে। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে জেএসএস (এমএন লারমা) ও ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) এক জোট হয়ে প্রসীতের ইউপিডিএফের সঙ্গে সশস্ত্র সংঘাত চালিয়ে আসছিল।
এরই জেরে এ বছর ২৮ ফেব্রুয়ারি খাগড়াছড়িতে খুন হন ইউপিডিএফ নেতা মিথুন চাকমা। ১৮ মার্চ ইউপিডিএফ সমর্থিত হিল উইমেন্স ফেডারেশনের দুই নেত্রী মন্টি ও দয়াসোনা চাকমা রাঙামাটি থেকে একমাসের জন্য অপহৃত হন। ২২ এপ্রিল খাগড়াছড়ির পানছড়িতে খুন হন ইউপিডিএফ সংগঠক সুনীল বিকাশ ত্রিপুরা। প্রতিটি ঘটনার জন্যই গ্রুপটি প্রতিপক্ষ ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) ও জেএসএস (এমএন লারমা)কে দায়ী করে আসছিল। যদিও অভিযুক্ত গ্রুপটি তা অস্বীকার করে।
এখন সবশেষ শক্তিমান চাকমা ও চার সহযোগীসহ তপনজ্যোতি চাকমা (বর্মা) হত্যাকাণ্ড এসব সহিংসতারই প্রতিশোধ হলে খুব আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকবে না।
উপসংহারের বদলে
গেরিলা যুদ্ধের মহানায়ক মাও সেতুং এর একটি বিখ্যাত উক্তি, ‘আমাদের নীতি হচ্ছে, পার্টি বন্দুককে কমান্ড করবে, বন্দুক পার্টিকে কখনোই নয়।’ কিন্তু দৃশ্যতই পাহাড়ের গ্রুপগুলো এর উল্টোটাই চর্চা করছে, অস্ত্রবাজী ও আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্বে অকালে ঝরে পড়ছে কত তাজা প্রাণ!
ইতিহাস সাক্ষী, রাজনৈতিক সমঝোতা না হলে এই খুনোখুনি, বৃথা রক্তপাত চলতেই থাকবে। আর পাহাড়ে উন্নয়ন, স্থিতিশীলতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে সুদূর পরাহত।
--
মূল লেখাটি এখানে: https://www.channelionline.com/%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A7%9C%E0%A7%87-%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A7%87-%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%B0/
No comments:
Post a Comment