গুডবাই মি. জেনারেল। অবশেষে আপনি ১২ তম সেনা প্রধানের পদ থেকে অবসর নিলেন। বিদায় বেলায় আপনাকে জানিয়ে দিতে চাই, এ দেশের মানুষ আপনার কৃতিত্বর জন্য অনেকদিন আপনাকে মনে রাখবে। এমনকী আপনি হতে পারেন ইতিহাসেরও একটি অধ্যায়।
মি. জেনারেল, আপনি ছিলেন একই সঙ্গে এক-এগারোর প্রধান সেনা নায়ক (নাকী স্বপ্নদ্রষ্টা?)। ইয়াজউদ্দিন-আজিজ-খালেদা আর লগি-বৈঠার অস্থির রাজনৈতিক পরিবেশে জরুরী আইন জারী করার পর আপনারই নেতৃত্বে আমরা এদেশে প্রথমবারের মতো পেয়েছি সেনা শাসনের ছদ্মবেশে ‘সেনা সমর্থিত অস্বাভাবিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার’! আম জনতাকে কাঁঠালের এই আমস্বত্ত্ব উপহার দেয়ার জন্য পুরো কৃতীত্ব আপনার না হলেও এর প্রধান কৃতীত্ব আমি আপনাকেই দিতে চাই।
আপনিই দেশের একমাত্র সেনা প্রধান, যার শাসন মেয়াদ ফুরিয়ে গেলে আরো এক বছরের জন্য এই মেয়াদ শুধু বাড়ানোই হয়নি, কোনো যুদ্ধ-বিগ্রহে সৌর্য্য-বীর্য ছাড়াই লেফটেনেন্ট জেনারেলের পদ থেকে আপনি পেয়েছেন সরাসরি জেনারেলের উঁচু পদটি। অবশ্য আপনি শেষ পর্যন্ত ফিল্ড মার্শাল পদটিও পেলে আমরা আম জনতা ‘হুজুরের মতে অমত কার’ই হয়তো করতাম!
মি. জেনারেল, এরশাদ সামরিক জান্তার পতনের পর আপনিই প্রথম সেনা উর্দি পরে রাজনীতির ঘোড়া শুধু দেশে-বিদেশে নয়, এমন কী সাফল্যের সঙ্গে আকাশেও উড়িয়েছিলেন। খালেদা-হাসিনাসহ শীর্ষ নেতাদের দুর্নীতির অভিযোগে কারাবন্দি, মাইনাস টু ফর্মূলা, রাজনৈতিক সংস্কারের ধুঁয়া, জলিলের জেল খানার চিঠি ও সিডি, মঞ্জুসহ শাতাধিক নেতার পলায়ন, চেয়ারম্যানদের পুকুর থেকে ত্রাণের টিন উদ্ধার, আরেক সাবেক সেনা প্রধান মশহুদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা এবং সামরিক দুর্নীতিবাজদের সর্ম্পকে আশ্চর্য নিরবতায় সামান্য হলেও অবদান নিশ্চয়ই আপনার আছে।
রাতারাতি চালের দাম ২৫-২৬ টাকা থেকে ৪০+ টাকায় দাঁড়ালে আপনি নিয়ে আসেন আলু-তত্ব (বাংলাদেশে আলু হইলো খোদার আশির্বাদ-মমতাজ)। খালেদা জিয়ার পরিত্যাক্ত ডাল-ভাত কর্মসূচি (পরে বিডিআর-বিদ্রোহে আমাদের আবারো মনে পড়বে এর কথা) আপনিই সারাদেশে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন সাফল্যের সঙ্গে। সীমান্তের অতন্ত্র প্রহরীরা প্রখর রোদে চাল মেপে দিচ্ছে, আর তা সংগ্রহ করতে ভোর বেলা থেকে লাইনে দাঁড়িয়েছে মুটে-মজুর-- এমন শীর্ষ ছবি তখন সংবাদপত্রে ফলাও করে কতোই না ছাপা হয়েছে!
আপনিই আমাদের দিয়েছেন, ‘ওন ব্র্যান্ড অব ডেমোক্র্যাসি’ বা নিজস্ব ধাঁচের গণতন্ত্রের এক নতুন ধারণা। চাকরী বিধি লংঘন করে কী না জানি না, আপনি লিখেছেন, একাধিক জ্ঞানতাত্বিক গ্রন্থ। আমরা টিভিতে দেখেছি, বই মেলায় আপনাকে উচ্ছিসিত অবস্থায় এই সব বইয়ে অটোগ্রাফ দিতে। শীর্ষ রাজনীতিবিদ, সম্পাদক-সাংবাদিক থেকে শুরু করে রথি-মহা রথিরাও হুমড়ি খেয়ে পড়েছিলেন আপনার অটোগ্রাফের জন্য!
মি. জেনারেল, অবশ্য ২০ আগস্ট ২০০৭ এর ছাত্র-বিক্ষোভের সময় আপনার বীর সেনানীরা পশ্চাদে পদাঘাত খেয়েছিলো, আর সেটিও এখানে না বললেই নয়। শিথিল জরুরি অবস্থার সুযোগে প্রথমে ঢাকা, পরে দেশের আরো কয়েকটি এলাকায় শুরু হলো ছাত্র-জনতা বিক্ষোভ। আপনার হুকুমে ‘দেশ প্রেমিক সেনা বাহিনী’ ভিডিওর ছবি দেখে ছাত্র-শিক্ষক গ্রেফতারই করে ক্ষান্ত হলো না; পাক সেনার কায়দায় গভীর রাতে ঢাবি ও রাবি শিক্ষকদের বাসায় হানা দিয়ে চোখ বেঁধে তাদের অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হলো।
পরে বিবিসিসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বিষয়টি ফাঁস হলে আবার রাষ্ট্রপতি রাতারাতি তাদের মামলা প্রত্যাহার করে ক্ষমাও ঘোষণা করেন! সত্যিই এমন উদারপনা সুমহানদেরই মানায় বটে।
আপনি ভারতের সেনা প্রধানের কাছ থেকে লাল গালিচা সম্বর্ধনা নিয়েছিলেন; সেটি তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। আমরা চমকিত হয়েছি তাঁর দেয়া ছয়টি ঘোড়াসহ আপনার গর্বিত মুখ দেখে। তখন অবশ্য চায়ের আড্ডায় নিন্দুকেরা বলেছিলো, আপনি নাকী ‘সিক্স হর্স পাওয়ার’ দ্বারা পরিচালিত হচ্ছিলেন।
‘ওন ব্র্যান্ড অব ডেমোক্র্যাসির’ প্রবক্তা মি. জেনারেল, ‘সেনা সমর্থিত অস্বাভাবিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের’ সময় গণমাধ্যম ভোগ করেছে ‘ফ্রিডম অব ডিপ্রেশন’। টিভি চ্যানেলগুলোর টক-শোগুলোর সরাসরি সম্প্রচার ছিলো বন্ধ। এমন কী শুনতে পাই, কোন টক শো'তে কোন কোন অতিথি কী বিষয়ে বক্তব্য রাখবেন, তা-ও নাকী উত্তর পাড়া থেকে নির্ধারণ করা হতো। আর পত্রিকাগুলোতে সামান্য হুমকি-ধামকি দিয়ে পাঠানো হতো আদুরে সব শাহী ফরমান! তাসনিম খলিল, কার্টুনিস্ট আরিফ -- এরা তো এ সবেরই বাই-প্রডাক্ট, তাই না?
আদিবাসী নেতা চলেশ রিছিল নিরাপত্তা হেফাজতে পিটুনি খেয়ে মরেছিলেন। সেদিক থেকে এক-এগারো পর গ্রেফতার হওয়া পাহাড়ি নেতা রাংলাই ম্রো বা সত্যবীর দেওয়ান অনেক সৌভাগ্যবান বটে। তাঁরা মিথ্যে মামলায় গ্রেফতার হয়ে সেনা পিটুনিতে হাত-পা ভাঙলেও অন্তত প্রাণে তো বেঁচে আছেন!
অন্যদিকে, ছবিসহ নির্ভুল ভোটার তালিকা ও জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি, একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু সংসদ নির্বাচন, বিডিআর বিদ্রোহের যৌক্তিক অবসান, এই বিদ্রোহকে ঘিরে সেনা কর্তাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের আংশিক তথ্য-চিত্র ইউটিউবে ফাঁস হওয়ার দায়ে এ দেশে ইউটিউব সাময়িকভাবে ব্যান করা, দুর্নীতি বিরোধী দেশব্যাপী রোড-শো এবং 'সাদা মানুষের' সন্ধানলাভ -- ইত্যাদির সাফল্য আমি আপনাকেই দিতে চাই।
মি. জেনারেল, এই সব বহুবিধ কারণে বিদায় বেলায় আমি আপনার করমর্দন করতে চাই। আপনি এক সামান্য অক্ষরজীবী ব্লাডি সিভিলিয়ানের উষ্ণ অভিনন্দন গ্রহণ করুন!
---
ছবি : বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী [লিংক]
মি. জেনারেল, আপনি ছিলেন একই সঙ্গে এক-এগারোর প্রধান সেনা নায়ক (নাকী স্বপ্নদ্রষ্টা?)। ইয়াজউদ্দিন-আজিজ-খালেদা আর লগি-বৈঠার অস্থির রাজনৈতিক পরিবেশে জরুরী আইন জারী করার পর আপনারই নেতৃত্বে আমরা এদেশে প্রথমবারের মতো পেয়েছি সেনা শাসনের ছদ্মবেশে ‘সেনা সমর্থিত অস্বাভাবিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার’! আম জনতাকে কাঁঠালের এই আমস্বত্ত্ব উপহার দেয়ার জন্য পুরো কৃতীত্ব আপনার না হলেও এর প্রধান কৃতীত্ব আমি আপনাকেই দিতে চাই।
আপনিই দেশের একমাত্র সেনা প্রধান, যার শাসন মেয়াদ ফুরিয়ে গেলে আরো এক বছরের জন্য এই মেয়াদ শুধু বাড়ানোই হয়নি, কোনো যুদ্ধ-বিগ্রহে সৌর্য্য-বীর্য ছাড়াই লেফটেনেন্ট জেনারেলের পদ থেকে আপনি পেয়েছেন সরাসরি জেনারেলের উঁচু পদটি। অবশ্য আপনি শেষ পর্যন্ত ফিল্ড মার্শাল পদটিও পেলে আমরা আম জনতা ‘হুজুরের মতে অমত কার’ই হয়তো করতাম!
মি. জেনারেল, এরশাদ সামরিক জান্তার পতনের পর আপনিই প্রথম সেনা উর্দি পরে রাজনীতির ঘোড়া শুধু দেশে-বিদেশে নয়, এমন কী সাফল্যের সঙ্গে আকাশেও উড়িয়েছিলেন। খালেদা-হাসিনাসহ শীর্ষ নেতাদের দুর্নীতির অভিযোগে কারাবন্দি, মাইনাস টু ফর্মূলা, রাজনৈতিক সংস্কারের ধুঁয়া, জলিলের জেল খানার চিঠি ও সিডি, মঞ্জুসহ শাতাধিক নেতার পলায়ন, চেয়ারম্যানদের পুকুর থেকে ত্রাণের টিন উদ্ধার, আরেক সাবেক সেনা প্রধান মশহুদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা এবং সামরিক দুর্নীতিবাজদের সর্ম্পকে আশ্চর্য নিরবতায় সামান্য হলেও অবদান নিশ্চয়ই আপনার আছে।
রাতারাতি চালের দাম ২৫-২৬ টাকা থেকে ৪০+ টাকায় দাঁড়ালে আপনি নিয়ে আসেন আলু-তত্ব (বাংলাদেশে আলু হইলো খোদার আশির্বাদ-মমতাজ)। খালেদা জিয়ার পরিত্যাক্ত ডাল-ভাত কর্মসূচি (পরে বিডিআর-বিদ্রোহে আমাদের আবারো মনে পড়বে এর কথা) আপনিই সারাদেশে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন সাফল্যের সঙ্গে। সীমান্তের অতন্ত্র প্রহরীরা প্রখর রোদে চাল মেপে দিচ্ছে, আর তা সংগ্রহ করতে ভোর বেলা থেকে লাইনে দাঁড়িয়েছে মুটে-মজুর-- এমন শীর্ষ ছবি তখন সংবাদপত্রে ফলাও করে কতোই না ছাপা হয়েছে!
আপনিই আমাদের দিয়েছেন, ‘ওন ব্র্যান্ড অব ডেমোক্র্যাসি’ বা নিজস্ব ধাঁচের গণতন্ত্রের এক নতুন ধারণা। চাকরী বিধি লংঘন করে কী না জানি না, আপনি লিখেছেন, একাধিক জ্ঞানতাত্বিক গ্রন্থ। আমরা টিভিতে দেখেছি, বই মেলায় আপনাকে উচ্ছিসিত অবস্থায় এই সব বইয়ে অটোগ্রাফ দিতে। শীর্ষ রাজনীতিবিদ, সম্পাদক-সাংবাদিক থেকে শুরু করে রথি-মহা রথিরাও হুমড়ি খেয়ে পড়েছিলেন আপনার অটোগ্রাফের জন্য!
মি. জেনারেল, অবশ্য ২০ আগস্ট ২০০৭ এর ছাত্র-বিক্ষোভের সময় আপনার বীর সেনানীরা পশ্চাদে পদাঘাত খেয়েছিলো, আর সেটিও এখানে না বললেই নয়। শিথিল জরুরি অবস্থার সুযোগে প্রথমে ঢাকা, পরে দেশের আরো কয়েকটি এলাকায় শুরু হলো ছাত্র-জনতা বিক্ষোভ। আপনার হুকুমে ‘দেশ প্রেমিক সেনা বাহিনী’ ভিডিওর ছবি দেখে ছাত্র-শিক্ষক গ্রেফতারই করে ক্ষান্ত হলো না; পাক সেনার কায়দায় গভীর রাতে ঢাবি ও রাবি শিক্ষকদের বাসায় হানা দিয়ে চোখ বেঁধে তাদের অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হলো।
পরে বিবিসিসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বিষয়টি ফাঁস হলে আবার রাষ্ট্রপতি রাতারাতি তাদের মামলা প্রত্যাহার করে ক্ষমাও ঘোষণা করেন! সত্যিই এমন উদারপনা সুমহানদেরই মানায় বটে।
আপনি ভারতের সেনা প্রধানের কাছ থেকে লাল গালিচা সম্বর্ধনা নিয়েছিলেন; সেটি তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। আমরা চমকিত হয়েছি তাঁর দেয়া ছয়টি ঘোড়াসহ আপনার গর্বিত মুখ দেখে। তখন অবশ্য চায়ের আড্ডায় নিন্দুকেরা বলেছিলো, আপনি নাকী ‘সিক্স হর্স পাওয়ার’ দ্বারা পরিচালিত হচ্ছিলেন।
‘ওন ব্র্যান্ড অব ডেমোক্র্যাসির’ প্রবক্তা মি. জেনারেল, ‘সেনা সমর্থিত অস্বাভাবিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের’ সময় গণমাধ্যম ভোগ করেছে ‘ফ্রিডম অব ডিপ্রেশন’। টিভি চ্যানেলগুলোর টক-শোগুলোর সরাসরি সম্প্রচার ছিলো বন্ধ। এমন কী শুনতে পাই, কোন টক শো'তে কোন কোন অতিথি কী বিষয়ে বক্তব্য রাখবেন, তা-ও নাকী উত্তর পাড়া থেকে নির্ধারণ করা হতো। আর পত্রিকাগুলোতে সামান্য হুমকি-ধামকি দিয়ে পাঠানো হতো আদুরে সব শাহী ফরমান! তাসনিম খলিল, কার্টুনিস্ট আরিফ -- এরা তো এ সবেরই বাই-প্রডাক্ট, তাই না?
আদিবাসী নেতা চলেশ রিছিল নিরাপত্তা হেফাজতে পিটুনি খেয়ে মরেছিলেন। সেদিক থেকে এক-এগারো পর গ্রেফতার হওয়া পাহাড়ি নেতা রাংলাই ম্রো বা সত্যবীর দেওয়ান অনেক সৌভাগ্যবান বটে। তাঁরা মিথ্যে মামলায় গ্রেফতার হয়ে সেনা পিটুনিতে হাত-পা ভাঙলেও অন্তত প্রাণে তো বেঁচে আছেন!
অন্যদিকে, ছবিসহ নির্ভুল ভোটার তালিকা ও জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি, একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু সংসদ নির্বাচন, বিডিআর বিদ্রোহের যৌক্তিক অবসান, এই বিদ্রোহকে ঘিরে সেনা কর্তাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের আংশিক তথ্য-চিত্র ইউটিউবে ফাঁস হওয়ার দায়ে এ দেশে ইউটিউব সাময়িকভাবে ব্যান করা, দুর্নীতি বিরোধী দেশব্যাপী রোড-শো এবং 'সাদা মানুষের' সন্ধানলাভ -- ইত্যাদির সাফল্য আমি আপনাকেই দিতে চাই।
মি. জেনারেল, এই সব বহুবিধ কারণে বিদায় বেলায় আমি আপনার করমর্দন করতে চাই। আপনি এক সামান্য অক্ষরজীবী ব্লাডি সিভিলিয়ানের উষ্ণ অভিনন্দন গ্রহণ করুন!
---
ছবি : বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী [লিংক]
No comments:
Post a Comment