Saturday, May 2, 2009

প্রেস জোকস


[গণমাধ্যমে প্রায়ই মজার মজার কিছু সত্যি ঘটনা ঘটে। এ সব কখনো কখনো প্রচলিত হাস্য কৌতুককে হার মানিয়ে দেয়। আবার এসব প্রেস জোকসের নেপথ্যে থাকে কষ্টকর সাংবাদিকতা পেশাটির অনেক অব্যক্ত কথা। এমনই কিছু বাস্তব ঘটনা নিয়ে এই 'প্রেস জোকস' পর্ব। রীতিমত প্রাপ্তমনস্কদের জন্য রচনা।]
ট্যাক্স ফ্রি
বিখ্যাত ফটো সাংবাদিক মোহাম্মাদ আলম (কিছুদিন আগে প্রয়াত) ভাইয়ের ঘটনা। ১৯৭২-৭৩ সালে আলম ভাই ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত আলোকচিত্রী। পানপ্রিয় আলম ভাই প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর সাথে মস্কো সফর শেষে দেশে ফেরার সময় সাথে নিয়ে এসেছেন এক বোতল রাশান ভোদকা। তো তেজগাঁ বিমানবন্দরের কাস্টমস কর্মকর্তারা কিছুতেই তাকে ছাড়বেন না। তারা ভোদকার জন্য ট্যাক্স দাবি করে বসলেন। এদিকে আলম ভাই কর্পদশুন্য।



তিনি যতই মুক্তিযোদ্ধা ফটোসাংবাদিক হন বা প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত ফটোসাংবাদিক হন, কাস্টমস কর্মকর্তারা নাছোড় বান্দা। আলম ভাই কিছুতেই তার কোনো ক্ষমতা ফলাতে না পেরে

শেষে সবার সামনে বিমানবন্দরের লাউঞ্জেই ভোদকার বোতলে মুখ দিয়ে একটানে বোতল খালি করে ফেললেন। তারপর ঢেঁকুর তুলে ঢাকাইয়া উচ্চারণে বললেন, এইবার কী যাইতে পারমু? পেটের ভিতর ভুদকা থাকলে তো আর ট্যাক্স দেওন লাগবো না, না কী?

চট্টগ্রামে কেজি অচল
এরশাদ আমলের কথা। দৈনিক সংবাদের সিনিয়র রিপোর্টার জাফর ভাইকে সম্পাদক কেজি মুস্তফা ঢাকা থেকে হঠাৎ করেই বদলী করলেন চট্টগ্রাম অফিসে।

জাফর ভাই তো মহা বিরক্ত। তিনি এটিকে পানিশমেন্ট পোস্টিং হিসেবে মনে করলেন। একে তার সব নিউজ-সোর্স ঢাকায়; তার ওপর তিনি চট্টগ্রাম শহরটিকে ভালো করে চেনেন না, চাটগাঁইয়া ভাষাও বোঝেন না। যা-ই হোক, তিনি খবর নিয়ে জানলেন, কেজি ভাই রোববারে সাপ্তাহিক ছুটি কাটান। আর ওইদিনই তিনি চট্টগ্রাম থেকে একটি বিশেষ রিপোর্ট পাঠালেন, শিরোনাম 'চট্টগ্রামে কেজি অচল'।

ঘটনা হচ্ছে, মন-সের মাপের পরিবর্তে এরশাদ সরকার তখন সারাদেশে মেট্রিক পদ্ধতির কেজি-লিটার ইত্যাদি চালু করলেও চট্টগ্রামের হাট-বাজারে তখনো প্রাচীন পরিমাপ পদ্ধতি চলছে। এই নিয়ে ছিলো সেই খবর।

বার্তা সম্পাদক সেটি সরল মনে প্রথম পাতায় ছেপে দিলেন। পরদিন সকালে সম্পাদক কেজি ভাই কাগজ দেখে অফিসে এসে হাজির। গম্ভীর ভাবে এখানে-সেখানে পায়চারী করছেন। রাগে-দু:খে কিছু বলতেও পারছেন না। পরে বার্তা সম্পাদকের টেবিলে এসে ওই খবরটি আঙুল দিয়ে চিহ্নিত করে বললেন, এহ! এটা কোনো খবর হলো? এটি প্রথম পাতায় না দিলেও তো চলতো!

একটি অভিনব পদত্যাগ
গণমাধ্যম কর্মী মাত্রই জানেন, কর্মস্থল বদল করলে আগের অফিস বকেয়া বেতন-ভাতা দিতে চায় না। এমন কী বকেয়া টাকা আদায়ে মামলা করে বছরের পর বছর ঘুরেও পাওনা টাকা আদায় করা যায় না।

তো ১৯৯৯-২০০০ সালের ঘটনা। দৈনিক সংবাদের একেবারে পড়তি অবস্থা। ইত্তেফাক, জনকন্ঠ, ভোরের কাগজ, প্রথম আলোর তখন বাজার ভালো। আর সংবাদে চার-পাঁচ মাস করে সাংবাদিকদের বেতন বকেয়া পড়েছে; ওভার টাইমসহ অন্যান্য বিল তো আছেই।

এই সময় দৈনিক যুগান্তর প্রকাশ হবে। সংবাদের চট্টগ্রামের সাংবাদিক সবুজ ভাই যুগান্তরে ভালো বেতনে কাজ পেয়েছেন (এখন তিনি যুগান্তরের চট্টগ্রাম অফিসের বুরো চিফ ও বিশেষ সংবাদদাতা)। তো তিনি জানতেন, সংবাদ থেকে পদত্যাগ করলে বকেয়া বেতন-ভাতাসহ চার-পাঁচ লাখ টাকা তার লোকসান হবে। তিনি চিন্তিত হয়ে পড়লেন, কী করা যায়?

সবুজ ভাই পরামর্শ করার জন্য ফোন করলেন ওনার সেকশন চিফ, মফস্বল সম্পদক কার্তীক দা’কে। কার্তীকদা তাকে বললেন, সবুজ, তুমি নতুন কাগজে ভাল বেতনে কাজ পেয়েছো, এটি তো খুবই খুশীর খবর। তোমাকে আন্তরিক অভিনন্দন। কিন্তু হুট করে চাকরি ছাড়লে তো তুমি সংবাদ থেকে বকেয়া টাকা-পয়সা কিছুই পাবে না। তাই আমি যেভাবে বলি, সেভাবে পদত্যাগপত্র জমা দাও।

সবুজ ভাই কার্তীকদার পরামর্শে একটি অভিনব পদত্যাগ পত্র ঢাকার অফিসে এক কপি ফ্যাক্সে পাঠালেন; আরেক কপি দিলেন কুরিয়ারে।


তিনি যা লিখেছিলেন, তা অনেকটা এ রকম:

বরাবর, সম্পাদক, দৈনিক সংবাদ, ঢাকা।বিষয়: পদত্যাগ পত্র।
জনাব,
বিনীত নিবেদন এই যে, ব্যক্তিগত কারণে আমি সংবাদ থেকে পদত্যাগ করছি। যেদিন থেকে আমার যাবতীয় পাওনা-দেওনা মিটিয়ে দেয়া হবে, সেদিন থেকে আমার পদত্যাগ পত্র কার্যকর হবে।
নিবেদক...

ইত্যাদি।


এরপর তিনি সংবাদে চট্টগ্রাম থেকে নিউজ পাঠানো বন্ধ রাখলেন। একের পর এক সংবাদে চট্টগ্রামের নিউজ মিস হতে থাকলো। বার্তা সম্পাদক উপায় না দেখে ঢাকা থেকে টেলিফোনে ধরলেন সবুজ ভাইকে, কী সবুজ, চট্টগ্রাম থেকে নিউজ পাঠাচ্ছো না কেনো?

সবুজ ভাইয়ের সরল উত্তর, দেখুন, আমি তো পদত্যাগ করেছি; তাই এখন নিউজ দিচ্ছি না। এখন আমার পদত্যাগপত্র আপনারা কী ভাবে কার্যকর করবেন, সেটি আপনাদের বিষয়।

বার্তা সম্পাদক, সবুজ ভাইয়ের পদত্যাগপত্র নিয়ে সম্পাদক-প্রকাশকের টেবিলে দৌড়ালেন। এর পর প্রকাশক আহমেদুল কবির ভাই (প্রয়াত বিশিষ্ট সাংবাদিক) ফোন করলেন সবুজ ভাইকে, বাবা, তুমি আজ রাতের ট্রেনেই ঢাকায় এসো। তোমার গাড়ি ভাড়া আমরা দেবো। তোমার সঙ্গে সামনা-সামনি কথা আছে।

বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ-সাংবাদিকের কথায় সবুজ ভাই ঢাকা এলে, কবির ভাই তাকে বুঝিয়ে বললেন, বাবা, এভাবে পদত্যাগ করলে তো আমাদের বিপদ; তুমি এটি ফিরিয়ে নিয়ে একটি সাধারণ পদত্যাগ পত্র জমা দাও। আমরা তোমার টাকা একবারে না হোক, কয়েক দফায় পরিশোধ করবো।

সবুজ ভাই, তা-ই করলে সংবাদ কর্তপক্ষ আস্তে আস্তে তার সমস্ত বকেয়া পরিশোধ করে।

রাজু ভাই বৃত্তান্ত
রাজু ভাই তখন সংবাদের স্টার রিপের্টার। মাথা একটু গরম হলেও তিনি লোক ভালো, আর সাংবাদিক হিসেবে তুখোড় তো বটেই।

রাজু ভাইয়ের একটি বদ অভ্যাস হলো, যেখানে-সেখানে মুখের মধ্যে গুল নেয়া (আমরা বলি, গুল মারা)। একদিন আমরা তখনকার ক্ষুদে সাংবাদিক কয়েকজন রাজু ভাইকে ধরলাম; তাকে বুঝিয়ে বললাম, রাজু ভাই, আপনি এখন সাংবাদিক নেতা। পাঁচতাঁরা হোটেল বা মন্ত্রীর এয়ারকুলার লাগানো ঝাঁ চকচকে অফিসে বসে আপনার গুল মারা এখন বেমানান। আপনাকে এই রিকশা-ওয়ালাদের নেশা ছাড়তে হবে।

রাজু ভাই পড়লেন বিপদে। বললেন, কী করি তোরা বলতো? অনেক বছরের পুরনো নেশা।...

আমি বুদ্ধি দিলাম, আপনি বেনসন সিগারেট খাওয়া ধরুন। দুটাই তো তামাক, আপনার নিকোটিনের চাহিদাও মিটবে, আবার স্মার্ট-নেসও থাকবে।

রাজু ভাই চা খাওয়ার পর সিগারেট খাওয়া অভ্যাস করলেন।

অনেকদিন পর রিপোর্টার্স ইউনিটির অফিসে গিয়ে দেখি রাজু ভাই, চা খেয়ে একটা পান মুখে দিলেন। এরপর আয়েশ করে একটা সিগারেট ধরালেন। আমি তো অবাক, রাজু ভাই, আপনি পান খাওয়া ধরলেন কবে?

আর বলিস না, সিগারেট ধরার পর দেখলাম চা খেয়ে একটা পান মুখে দিয়ে সিগারেট ধরালে দারুন লাগে। সেই থেকে পান খাওয়াটাও শুরু করলাম।

আমি জিজ্ঞাসা করলাম, আর আপনার গুল মারা?
রাজু ভাই মাথা চুলকে বললেন, হেঁ হেঁ....সেটাও ছাড়তে পারিনি রে।

অর্থাৎ রাজু ভাই তখন গুল মারা, চা, পান ও সিগারেট--এই চারটি নেশাই সমান তালে চালাচ্ছেন!...

আবারো রাজু ভাই বৃত্তান্ত

রাজু ভাই একদিন হুট করে সংবাদ ছেড়ে দিলেন। যোগ দিলেন 'মাতৃভূমি' নামে একটি নতুন দৈনিকে চিফ রিপোর্টার হিসেবে। ২০০০-২০০১ সালের ঘটনা। সংবাদের মতো এটি প্রাচীন দৈনিকে চাকরি ছেড়ে স্বল্প পুঁজির কাগজে যোগ দেয়ার ঘটনায় আমরা ক্ষুদে সাংবাদিকরা বেশ অবাক হই।

তো একদিন রাজু ভাইকে আমি রিপোর্টার্স ইউনিটির অফিসে ধরে বসি, আপনি হুট করে সংবাদ ছেড়ে দিলেন কেনো? সেখানে তো আপনি বেশ ভালো অবস্থানেই ছিলেন!

রাজু ভাই দাঁত খিঁচিয়ে বললেন, শোন বিপ্লব, আহমেদুল কবির একজন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ। সিলেটে তার খুব সুন্দর চা বাগান আছে। সেখানে আরো সুন্দর একটি বাংলো আছে। সেই বাংলোতে একটি অ্যালসেশিয়ান কুত্তা আছে। আবার আহমেদুল কবিরের সংবাদ নামে একটি পত্রিকাও আছে। সেখানেও তার আরেকটি অ্যালসেশিয়ান কুত্তা আছে। সেটি হচ্ছে চিফ রিপোর্টার অমুক। এই কুত্তার সঙ্গে আর যা-ই হোক সাংবাদিকতা করা যায় না; বড় জোর ঘেউ ঘেউ করা যায়!!

মতি চৌ কাণ্ড
১৯৯৩-৯৪ সালের কথা সাংবাদিক মতিউর চৌধুরী একটি দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক হলেন। তখন সংবাদপত্রে বানানরীতি নিয়ে নানা পরীক্ষা-নীরিক্ষা চলছে। একেক বাংলা দৈনিক একেক ধরণের বানানরীতি দিয়ে নিজেদের স্বকীয়তা ঘোষণা করতে চাইছে। এইসব নিয়ে চলছে, যাচ্ছে-তাই কাণ্ড।

মতি চৌধুরী ভাই একদিন বার্তা বিভাগে ঘোষণা দিলেন, এখন থেকে দৈনিকটিতে কোনো দীঘ-ঈ (ী) চলবে না। সব বানান হ্রস্ব-ই (ি) দিয়ে লিখতে হবে। এটিই নাকী আধুনিক বানানরীতি।

তো সাংবাদিকরা ওইদিন বিদ্যাসাগর-রবীন্দ্রনাথ/সংসদ-বাংলা একাডেমী ভুলে যেতে বাধ্য হলেন। সবাই দীর্ঘদিনের অভ্যাস দীর্ঘ-ঈ বাদ দিয়ে সব বানানে হ্রস্ব-ই দিতে থাকলেন। এমনকী সেদিন প্রিন্টার্স লাইনে সম্পাদকের নাম মতিউর রহমান 'চৌধুরী'র বদলে ছাপা হলো মতিউর রহমান 'চৌধুরি'!!

পরদিন সকালে মতি চৌধুরী ভাই কাগজ দেখে ছুটে এলেন অফিসে। জরুরী বৈঠক ডাকলেন সব বিভাগকে সঙ্গে নিয়ে। সেখানে বললেন, ইয়ে মানে, আমার মনে হয়, প্রচলিত বাংলা বানানরীতি এখনই বদলানো ঠিক হবে না। এ নিয়ে আমাদের আরো ভাবনার অবকাশ আছে--ইত্যাদি।...

আমাদের তাজ ভাইদুর্ধর্ষ ক্রাইম রিপোর্টার আমিনুর রহমান তাজ ভাইকে চেনেন না, এমন সাংবাদিক বুঝি কমই আছেন। চাকরী জীবনের শুরুতে ক্ষুদে ক্রাইম রিপের্টার হিসেবে দৈনিক আজকের কাগজে তাজ ভাইয়ের কাছে রিপোর্টিং শেখার সুযোগ হয়েছিলো (তাজ ভাই এখন দৈনিক আমাদের সময়ে)। তাজ ভাইয়ের মজার মজার অনেক ঘটনা নিয়ে অনেকদিন আগে একবার সচলে লিখেছিলাম। যারা সেটি পড়েননি, তাদের জন্য চুম্বক-অংশটি আবারো বয়ান করছি।

১৯৯৪-৯৫ সালের কথা। বিএনপি সরকারের সময় আওয়ামী লীগ প্রায় ২৪/৪৮/৭২ ঘন্টার, এমন কী লাগাতার হরতাল ডাকতো। আর হরতাল হলেই আমরা যারা ক্রাইম-রিপোর্টার তাদের তথ্য সংগ্রহের জন্য বাস্ততা বাড়তো। এই হয়তো খবর পেলাম, অমুকখানে বোমা ফেটেছে, কী অমুক জায়গায় গাড়ি পোড়ানো হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে আমরা তাজা খবর সংগ্রহ করার জন্য 'সংবাদপত্র' ব্যানার লাগানো বেবী ট্যাক্সি নিয়ে ছুটতাম সেখানে। আর বরাবরই তাজ ভাইয়ের সঙ্গে হরতালের ডিউটি আমার খুব পছন্দ ছিলো। এর কারণ হচ্ছে: তার সঙ্গে থাকলে হাতে-কলমে কাজ শেখা যাবে; তাছাড়া তাজ ভাইয়ের সান্নিধ্যে থাকলে চা-সিগারেট, এমন কী দুপুরের খাবার, বিকালের নাস্তা --ইত্যাদি ছিলো ফ্রি। সিনিয়র হওয়ার সুবাদে সব খরচ উনি একাই বহন করতেন।

তো এক হরতালের ভোরে অফিসের বেবী ট্যাক্সি নিয়ে তাজ ভাইয়ের বাসায় গিয়াছি। ওনাকে বাসা থেকে তুলে এক সঙ্গে ডিউটিতে বের হবো।

একতলার বাসার নীচে এসে অনেকক্ষণ কলিং বেল বাজালাম, ‘তাজ ভাই, তাজ ভাই’ বলে ডাকাডাকি করলাম; কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ নাই।

খেয়াল করে দেখি, সদর দরজা সামান্য খোলা। উঁকি মেরেই সরে আসি, খাটের ওপর ভাবী খোলা পিঠে পেছন ফিরে শুয়ে আছেন, পরনে শুধু পেটিকোট।

এদিকে ডিউডিতে যাওয়ার দেরি হচ্ছে দেখে কিছুক্ষণ পরে আবার হাঁকডাক শুরু করলাম। এইবার চোখ ডলতে ডলতে তাজ ভাই নিজেই বের হলেন। খালি গা, পরনে পেটিকোট!

তাজ ভাই, এ কী অবস্থা?
আর বলিস না। কাল অফিস থেকে অনেক রাতে বাসায় ফিরেছি। বৌ - বাচ্চা সবাই গভীর ঘুমে দেখে কাউকে আর ডাকিনি। কিন্তু কিছুতেই লুঙ্গি খুঁজে পেলাম না। শেষে তোর ভাবীর একটা পেটিকোট পরে শুয়ে পড়েছি!...


রাশান কৌতুকভ
এবার একটি রুশ দেশীয় প্রেস জোকস। সোভিয়েত বিপ্লবের পর 'প্রাভদা' রাতারাতি বিশ্বের সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিকগুলোর মধ্যে একটি হয়ে দাঁড়ালো। স্ট্যালিন শাসনের অবসান হওয়ার পর ক্রশ্চেভের শাসন চলছে। তো ক্রশ্চেভ একদিন একটি শুয়োরের খামার পরিদর্শন করলেন।

ওইদিন রাতে প্রাভদার বার্তা সম্পাদক এ বিষয়ক একটি লিড ছবির ক্যাপশন নিয়ে পড়লেন বিপাকে। একেকবার একটি ক্যাপশন দিচ্ছেন, কোনোটিই মন মতো হচ্ছে না। কেউ একজন ক্যাপশন প্রস্তাব করলেন, শুয়োরের খামারে কমরেড ক্রশ্চেভ। নাহ ...হলো না। এটি বাদ পড়লো। আরেকজন প্রস্তাব করলেন, শুয়োরদের সঙ্গে হাস্যজ্জল কমরেড ক্রশ্চেভ। নাহ্...এটিও বাদ গেলো।

যা-ই হোক। অনেক গবেষণার পর বার্তা সম্পাদক ওই ছবির একটি যুতসই ক্যাপশন দিয়ে পত্রিকা প্রকাশ করলেন। আর সেই ক্যাপশনটি ছিলো:


কমরেড ক্রশ্চেভ, বাম দিক থেকে তৃতীয় (ক্রস চিহ্নিত)।


আমি বাংলার, বাংলা আমার

১৯৯৩-৯৪ সালের কথা। দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকার চিত্রশিল্পী সেনবাবু পান-প্রিয়তার জন্য বিখ্যাত। পকেটে ৫০ টাকা থাকলে উনি বাংলা, ৫০০ টাকা থাকলে কেরু আর ৫,০০০ টাকা থাকলে ফরেন লিকার টানতেন। আমাদের এই দাদাটি অবশ্য প্রতিদিন পান করতেন না; সপ্তাহে শুধু দুদিন তিনি মদ খেতেন; যেদিন বৃষ্টি হতো, আর যেদিন বৃষ্টি না হতো।

আর খুব মুডে থাকলে উনি গুনগুন করে গান করতেন, আমি বাংলার, বাংলা আমার, ওতোপ্রোত মেশামেশি, আমি বাংলা ভালবাসি।...

আমরা ক্ষুদে সাংবাদিকরা তখন একটু মুচকি হেসে বলতাম, হ’ দাদা, কবিয়াল রমেশ শীল এই গানটি আপনার জন্যেই লিখেছিলেন!

সে সময় মোবাইল টেলিফোনের এতো চল হয়নি; অ্যানালগ ল্যান্ড ফোনই ভরসা। একদিন সন্ধ্যার পর কী কাজে যেনো ফোন করেছি, বাংলাবাজার পত্রিকায়। বন্ধু-বান্ধব কাউকে না পেয়ে সেনবাবুকে খুঁজলাম।

ওপাশে ফোন কে ধরেছিলেন, জানি না। রসিকজন বললেন, দাদা তো এখন ‘বাংলাবাজারে’ নেই। ওনাকে এখন পাওয়া যাবে ‘বাংলার বাজারে’!

আবারো সেনবাবু সমাচার
এক গ্রীষ্মে আমরা কয়েকজন ক্ষুদে সাংবাদিক সেনবাবুর সঙ্গে পান করতে বসেছি। ফরেন লিকার, পান-অনুপান, কোনোটারই অভাব নেই।

তো মদ গিলতে গিলতে অনেক রাত হলো। দাদাবাবু এক সময় মাতাল হয়ে পড়লেন। হঠাৎ শুরু হলো তার অঝোর ধারায় কান্না। আমরা কিছুতেই তার কান্না থামাতে পারি না।

আমরা সেনবাবুর চোখে-মুখে পানি ছিটিয়ে আদুরে গলায় জানতে চাই, কী হয়েছে দাদা, আমাদের বলুন।

দাদা ভেউ ভেউ করে কাঁদতে কাঁদতে বললেন, আর বলিস না, কাল রাতে আমি কাঁঠাল খাইসিলাম।....এইটুকু বলে আবার তার ভ্যাঁএএএএএ শুরু হলো।....

তারপর? কাঁঠাল খেয়েছেন তো কী হয়েছে? এ নিয়ে কান্নার কী হলো?
দাদা আবারো কাঁদতে কাঁদতে বললেন, আর বলিস না, কাঁঠাল একটা জাতীয় ফল; আর আমি কী না এইটা বইসা বইসা খাইলাম!...

প্রিজন্স সমীপে
এক-এগারোর পরে রাজনৈতিক রথি-মহারথিরা গণহারে গ্রেফতার হতে শুরু করেছেন। তাদের মধ্যে দুই নেত্রী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী হাসিনা-খালেদাও আছেন। আর এই দুই নেত্রীকে রাখা হয়েছে শেরে বাংলা নগরের বিশেষ কারাগারে।

তো প্রায় প্রতিদিনই তাদের মামলা ও জেলখানার বন্দি জীবনের নানা দিক নিয়ে কারা উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি-প্রিজন্স) মেজর শামসুল হায়দার সিদ্দিকী সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন।

সেদিনও প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ২০-২৫ জন সাংবাদিক মেজর সিদ্দিকীকে ঘিরে ধরেছেন। ব্রিফিং চলছে...সবাই মন দিয়ে নোট নিচ্ছেন, বক্তব্য রেকর্ড করছেন। ব্রিফিং শেষে ২৪ ঘন্টার এক টিভি চ্যানেলের এক ক্ষুদে সাংবাদিক হঠাৎ মেজর সিদ্দিকীর পুরো নাম জানতে চাইলেন।

উনি একটু থতমত খেলেন। কারণ ততদিনে তিনি মিডিয়ায় খুব পরিচিত একটি নাম। তবু অমায়িক একটি হাসি দিয়ে তিনি বলেলেন, আমি মেজর শামসুল হায়দার সিদ্দিকী, ডিআইজি-প্রিজন্স।

ওই সাংবাদিকের পরের প্রশ্ন, মেজর শামসুল হায়দার সিদ্দিকী তো আপনার নাম; তো ‘প্রিজন্স’ কী আপনার ডাক নাম?

বুঝুন অবস্থা!

আমি সাংবাদিক!
কয়েক বছর আগের কথা। কাওরান বাজারের একটি শীর্ষ দৈনিক পত্রিকার একজন সিনিয়র রিপোর্টার। খুব খ্যাতনামা সাংবাদিক হলেও চালচলনে উনি খুব সাদাসিদে।

একদিন অফিস যাওয়ার জন্য তিনি প্রেসক্লাব থেকে লোকাল বাসে উঠলেন। সামনের কয়েকটি আসন ফাঁকা থাকলেও তিনি একেবারে পেছনের একটি সিটে গিয়ে বসলেন।

একটু পরে ওই একই অফিসের পিয়ন কালাম মিয়াও উঠলো একই বাসে; সে-ও অফিসে যাচ্ছে। কালাম মিয়া বসেছে সামনের দিকের একটি সিটে। সে অবশ্য ওই রিপোর্টারকে খেয়াল করেনি।

একটু পরে বাস ছাড়তে না ছাড়তেই ওপাশ থেকে আসতে শুরু করলো একটি বিশাল মিছিল। তো কালাম মিয়া লাফিয়ে উঠে ড্রাইভারকে বললো, এই ড্রাইভার, জলদি গাড়ি থামাও। আমি অমুক পত্রিকার সাংবাদিক। এটা কিসের মিছিল, তা আমাকে জানতে হবে!

ড্রাইভার বাস থামালেন। শীর্ষ পত্রিকার নাম শুনে ভরা-বাসের যাত্রীরা সকলে সশ্রদ্ধায় উঁকি-ঝুঁকি মেরে দেখতে শুরু করলেন পিয়ন কালামকে। আর কালামও খুব স্মার্টলি পকেট থেকে একটি নোট প্যাড ও বল পয়েন্ট বের করে জানালা দিয়ে মিছিলটি দেখে নিয়ে কী যেনো টোকাটুকি করলো। এর পর সে বেশ ডাঁটের সঙ্গে বললো, এই ড্রাউভার! গাড়ি চালাও!

এদিকে ওই সিনিয়র রিপোর্টার তো লজ্জায় পারলে সিটের নীচে মাথা লুকান।...

সাংবাদিক না ছাই!
১৯৭২-৭৩ সালের কথা। সদ্য স্বাধীন হওয়া দেশে দৈনিক 'পাকিস্তান অবজার্ভার’ নাম বদলে হয়েছে ‘বাংলাদেশ অবজার্ভার’। সে সময় এটি খুবই নামকরা একটি ইংরেজী কাগজ। আর ভাষাশৈলীও ছিলো চমৎকার। মধ্যবিত্ত বাবা-মা বাসায় অবজার্ভার রাখতেন, যেনো ছেলে-মেয়েরা পত্রিকাটি পড়ে কিছু ইংরেজী শেখে।

সে সময় অফিস-আদালতে কম্পিউটার চালু হয়নি। কাজ-কর্মে টাইপরাইটারই ছিলো ভরসা। দৈনিক পত্রিকায় সাংবাদিকরাও সংবাদটি প্রথমে টাইপরাইটারে লিখতেন। পরে এটি সম্পাদনার পর ছাপা হতো প্রেসে।

তো অবজার্ভারের এক সাংবাদিক বিয়ে করবেন; পাত্রী পক্ষ এক সন্ধ্যায় গোপনে অবজার্ভার অফিসে গিয়ে সাংবাদিকের কাজ-কর্ম দেখেও গেলেন। তারপর তারা আর বিয়েতে কোনোভাবেই রাজী নয়।

পাত্র কাম সাংবাদিক দেখা করলেন মেয়ের বাবার সঙ্গে। মেয়ের বাবা তো মুখ খিঁচিয়ে উঠলেন, আমরা তোমার অফিসে গোপনে খোঁজ নিয়েছি। তুমি সাংবাদিক না ছাই; তুমি তো সেখানে টাইপিস্ট!

সাংবাদিকের বিয়ের তিন বছরসাংবাদিকদের প্রায়ই কাজ সেরে বাসায় ফিরতে ফিরতে গভীর রাত হয়ে যায়। কখনো কখনো ভোররাত।

তো মিডিয়া পাড়ায় সদ্য বিবাহিত সাংবাদিকদের নিয়ে একটি গল্প খুব চালু আছে। গল্পটি এ রকম:

বিবাহিত সাংবাদিক নাকী বিয়ের প্রথম বছরে অনেক রাতে বাসায় ফিরে দেখে টেবিলে ঢাকা দেয়া ভাত গরম; আর বউও গরম।

বিয়ের দ্বিতীয় বছরে তারা অনেক রাতে বাসায় ফিরে দেখে টেবিলের ভাত গরম; কিন্তু বউ ঠাণ্ডা।

বিয়ের তৃতীয় বছরে সাংবাদিক গভীর রাতে বাসায় ফিরে দেখে টেবিলের ভাত ঠাণ্ডা; আর বউও ঠাণ্ডা!!

ইত্তেফাকীয় সমাচার

পাকিস্তান আমলের কথা। পুনর্গঠিত দৈনিক ইত্তেফাকের দায়িত্ব নিয়েছেন ডাকসাঁইটের সাংবাদিক মানিক মিয়া। মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর পরিবর্তে কাগজটির মাস্ট হেডের নীচে প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তাঁর নামই ছাপা হচ্ছে।

তো মানিক মিয়া ছিলেন খুব রাশভাড়ি লোক। সে সময় তো সাংবাদপত্রে এতো নিয়োগনীতির বালাই ছিলো না। আর মানিক মিয়া কারো ওপর ক্ষেপে গেলে কথায় কথায় তার চাকরী নট করে দিতেন।

একদিন সকালে তিনি ইত্তেফাকের অফিসে মন দিয়ে একটি গুরুতর সম্পাদকীয় দেখছেন। খুবই স্পর্শকাতর লেখা...একটু এদিক-সেদিক হলে আইয়ুব খানের রোষানলে পড়তে হবে--এমন অবস্থা।

এ সময় তার খাস পিয়ন ছালাম মিয়া তাকে চা দিতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে পড়লো টেবিলের ওপর। মানিক মিয়ার লেখা-টেখা সব চায়ে সয়লাব; তার দামী স্যুটেও লেগেছে চায়ের দাগ।

তিনি ঠাণ্ডা গলায় বললেন, ছালাম! তোর চাকরী নট!..

সে দিন পিয়ন ছালাম মিয়া মন খারাপ করে বাড়ি ফেরে। পরে বউয়ের সঙ্গে পরামর্শ করে এক ফন্দী আঁটে।

পরদিন সকালে মানিক মিয়া ইত্তেফাক অফিসে ঢুকতে গিয়ে দেখেন সিঁড়ির ওপর পিয়ন ছালাম মিয়া, তার বউ-পোলাপানসহ বসে আছে।

মানিক মিয়া আবারো ঠাণ্ডা গলায় বলেন, ছালাম! এসব কী?

ছালাম একটু মাথা চুলকে বলে, স্যার, আপনি ইত্তেফাকে চাকরী দিসেন, সেই বেতনের টাকায় বিয়া করছি, বউ-পুলাপান হইছে। এখন আপনি চাকরী 'নট' কইরা দিছেন। আমি না হয় আর ইত্তেফাকে নাই, কিন্তু আমার বউ-পুলাপান--এরা তো ইত্তেফাকের সম্পত্তি। আপনি এদের বুইঝা লন, এহন থেইকা আপনিই এদের খাওয়াইবেন, পরাইবেন, পালবেন!

মানিক মিয়া একটু থমকে যান। পরে মুচকি হেসে ছালামকে বলেন, শিগগির একটা রিকশা ডেকে এদের তোর বাসায় পাঠিয়ে দে। আর এখন থেকে আবার কাজে লেগে যা!



চিত্তেফাক

১৯৭৩-৭৪ সালের কথা। বঙ্গবন্ধু সর্বহারা পার্টির সশস্ত্র তৎপরতায় অতিষ্ট। এমন সময় ইত্তেফাকে একটি নিউজ ছাপা হলো, সর্বহারা প্রধান সিরাজ সিকদার দলীয় কোন্দলে নিহত।’

সঙ্গে সঙ্গে এর প্রতিবাদে সে সময় দেওয়াল লিখন হয়:
"এক খবরের মধ্যে ঢোকায়, হাজার রকম মিথ্যে-ফাঁক,সিআইএ গুজব রটায়, খবর ছড়ায় ইত্তেফাক!"

খোমাখাতা
মিডিয়া পাড়ায় 'আবুল কিসিমের' সাংবাদিক নেহাত কম নেই। এদেরই একজন সাংবাদিক সাজ্জাদ ভাই। কনফার্ম ব্যাচেলর সাজ্জাদ ভাই আবার প্রযুক্তি-প্রতিবন্ধীও বটে।

তো সম্প্রতি এক ক্ষুদে সাংবাদিক তাকে কম্পিউটার-ইন্টারনেট সম্পর্কে জ্ঞান দিয়েছে। আর ফেসবুকে খুলে দিয়েছে সাজ্জাদ ভাইয়ের একটি অ্যাকাউন্ট।

সাজ্জাদ ভাইয়ের ধারণা, ফেসবুক ওনার নিজেস্ব সম্পত্তি; এখানে উনি কী করলেন, কেউ বোধহয় তা টের পাবে না!

একদিন তার খোমা খাতায় আমরা কয়েকজন ক্ষুদে সাংবাদিক উঁকি মেরে দেখি, তার বন্ধু তালিকায় যোগ হয়েছে ১১ জন। এদের মধ্যে মেয়ের সংখ্যা ১০ জন, আর মাত্র একজন ছেলে সাংবাদিক রয়েছেন। বালিকাদের মধ্যে আবার কয়েকজন নারী-সাংবাদিকও আছেন।

আরো কিছুদিন পরে আমরা আবার তার খোমা খাতায় উঁকি মারি। দেখি সাজ্জাদ ভাই সাহসী হয়ে উঠেছেন। এক বালিকা সাংবাদিকের দেয়ালে 'চিকা' মেরেছেন:


ওগো সুইটি, তুমি কখন অনলাইনে থাকো? আমি তোমার সঙ্গে চ্যাট করতে চাই!


কিছুদিন পরে দেখা গেলো, সাজ্জাদ ভাইয়ের দেয়ালে তার একমাত্র ছেলে সাংবাদিক বন্ধু পাল্টা 'চিকা' মেরেছে:


সাজ্জাদ ভাই, আপনি দেখি আমার মতোই ভোদাই!

নাটকের 'পাট' প্রসঙ্গে
২০০০-২০০১ সালের কথা। আরেক আবুল সাংবাদিক ছানি একেবারে কাঠ-বেকার। তার সারাদিনের রুটিন ওয়ার্ক-- সেগুন বাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির ক্যান্টিনে বসে গুলতানি মারা, আর ক্যান্টিনে বাকীতে চা-সিগারেট, দুপুরের ভাত, বিকালের নাস্তা সারা।

সে সময় জসিম নামে আরেক সাংবাদিক পেশা পরিবর্তন করে ইটিভি ও বিটিভির জন্য প্যাকেজ নাটক বানানো শুরু করলো। আর রাতারাতি ওর নাটকগুলোও খুব হিট করলো; জসিম হয়ে উঠলো শো-বিজ অঙ্গণের একটি দামী নক্ষত্র।

তো রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বসে আড্ডাবাজী করতে করতে আর টিভিতে জসিমের নাটকগুলো দেখে ছানির ধারণা হলো, সে-ও নাটকে নাম লেখাবে। অভিনয় করে রাতারাতি বিখ্যাত হবে; আর তখন শো-বিজই হবে তার পেশা।

এক সকালে সে জসিমকে মোবাইলে ফোন করলো, দোস্ত, আমারে তুমার নাটকে একটা 'পাট' (পার্ট বা রোল) দেও। আমি একটু নিজেরে টিবিতে দেখাইয়া বিখ্যাত হইতে চাই।

জসিম যতোই তাকে বোঝায় যে, অভিনয় একটি শিল্প, এর জন্য রীতিমত প্রশিক্ষণ থাকা চাই; থাকা চাই চর্চ্চা ও মেধা, ছানি ততোই নাছোড়বান্দা, না দোস্ত, আমারে যে কোনো একটা 'পাট' দেও...ডায়লাগ না থাকলেও চইলবো, যে কোনো একটা ছোট-খাট 'পাট'।

এরপর তার চললো প্রতিদিনই তার টেলিফোনে ঘ্যানঘ্যান...জসিম শেষমেষ ছানির অত্যাচারে একেবারে অতিষ্ট। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ালো, ছানির নম্বর দেখলে জসিম আর টেলিফোন ধরে না। শেষে ছানি জসিমের শ্যুটিং স্পটে গিয়ে হাজির হতে লাগলো।

অনেক ভেবেচিন্তে জসিম নিজেই একদিন ছানিকে টেলিফোন করলো, দোস্ত তুমার জন্য একটা 'পাট' রাখছি। তুমি রাজি থাকলে বলো।

ছানি তো খুশিতে আটখানা, কী 'পাট' দোস্ত?

তেমন কঠিন কিছু না। এই নায়িকার বান্ধবীর একটা 'পাট'। ডায়লগ নাই। তুমারে ক্যামেরায় দুই-তিনবার ভালো কইরা দেখাইবো।
তাই বইলা মাইয়ার 'পাট'?

দেখো দোস্ত, পড়শু দিনই সকালে আমার গাজিপুরে শ্যুটিং। যে মাইয়াটার নায়িকার বান্ধবীর 'পাট' করার কথা ছিলো, সে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ছে। আর অভিনয়টা এমন কিছু না, নায়িকার হঠাৎ মন খুব খারাপ। সে শালবনের ভেতর লেকের পাড়ে উদাস হইয়া বইসা আছে। পাশে তার বান্ধবী, মানে শাড়ি-চুরি-উইগ-লিপস্টিক পইরা তুমি। ...

ছানি একটু আমতা আমতা করতে শুরু করলে জসিম তাকে বুঝিয়ে বলে, দেখো দোস্ত, তুমার ফিগার ভালো, এমন চমৎকার মেকাপ দিমু যে কেউ ধরতেই পারবো না, তুমি পোলা না মাইয়া। আর তাছাড়া আগের দিনে তো যাত্রা-নাটক-সিনেমায় ছেলেরাই মেয়েদের 'পাট' করতো। এতে এতো লজ্জার কিছু নাই। ... তুমি চিন্তা কইরা দেখো, নাটক তো হিট হইবোই; তারপর তুমি হইলা নায়িকার বান্ধবী। একবার যদি তুমারে নায়িকার মনে ধরে...। অবশ্য তুমি রাজী না হইলে অন্য কথা; আমারে বিকল্প খুঁজতে হইবো।

এ পর্যায়ে ছানি চিৎকার দিয়ে ওঠে, দোস্ত, আমি রাজী! পড়শু সকালে আমি তুমার শ্যুটিং স্পটে আইতাছি!

এরপর ছানি আর নিজেকে সামলাতে পারে না। রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সাংবাদিকদের আড্ডায় জনে জনে বলে বেড়ায় তার এই 'সুখবর'। আমরা যারাই খবরটি শুনি, তারাই মুচকি হাসি, কিন্তু কেউ তাকে গোমর ফাঁস করি না।

রিপোর্টার্স ইউনিটিতে 'সুখবর'টি প্রচার শেষে ছানি প্রেসক্লাবে গিয়ে জনে জনে একই খবর প্রচার করে বেড়ায়। এক বেরসিক সিনিয়র সাংবাদিক তাকে গোমরটি ফাঁস করে দিলে ছানি তো রেগে একেবারে আগুন।

সে তখনই ফোন করে জসিমকে। কিন্তু কিছুতেই তাকে আর টেলিফোনে পায় না। কারণ জসিম ততক্ষণে মোবাইল ফোনের সিম পাল্টে ফেলেছে।...

আমাদের সালেহ ভাই
বিএনপি সরকারের আমল। বর্ষিয়ান ছড়াকার-সাংবাদিক সালেহ ভাই কখোনো বিদেশে যাননি। বিএনপি সরকারের সঙ্গে তার সখ্যতার সুযোগে সালেহ ভাই একদিন তখনকার সাংস্কৃতিক মন্ত্রীর কাছে গিয়ে বললেন, শুনেছি আপনি নাকী একটি সাংস্কৃতিক দলকে জাপান পাঠাচ্ছেন। এই দলে আমাকেও নেন। আমি একটু জাপান ঘুরে দেখতে চাই।

মন্ত্রী বললেন, কিন্তু সালেহ সাহেব এই টিমে সবাই তো মেয়ে; আমি তো আপনাকে এই টিমে বিদেশে পাঠাতে পারি না।

সালেহ ভাই মাথা চুলকে বলেন, ইয়ে, অভয় দিলে বলি, আসলে ৬০ বছর বয়স হলে ছেলে-আর মেয়ের মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকে না!

আবারো সালেহ ভাই
বিএনপি সরকারের সময়। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব হলেন পুরনো সাংবাদিক মোজাম্মেল ভাই। মোজাম্মেল ভাই আবার পান-প্রিয়তার জন্য বিখ্যাত।

তো সালেহ ভাই একদিন মোজাম্মেল ভাইকে নিয়ে একটি ছড়া লিখলেন, সেখানে আবার এরকম একটি পংতি আছে:

খেল দেখো ভাই, খেল,
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব
এখন মাতাল মোজাম্মেল!

তো মোজাম্মেল ভাই এ কথা শুনে মহাক্ষিপ্ত। সালেহ ভাইকে এক চোট দেখে নেয়ার জন্য প্রায়ই তিনি প্রেস ক্লাবে ফোন করে জানতে চান, সালেহ ভাই সেখানে এসেছেন কী না। কিন্তু অনেকদিন সালেহ ভাইয়ের কোনো খবর নেই।

একদিন সকালে মোজাম্মেল ভাই প্রেসক্লাবে ফোন করে জানলেন, সালেহ ভাই সেখানে এসেছেন। তরিঘরি করে তিনি প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে গাড়ি নিয়ে এলেন প্রেসক্লাবে। দেখেন সালেহ ভাই এক জমাট আড্ডায় ব্যস্ত।

মোজাম্মেল ভাই সবার সামনে ওনাকে ধরে বসলেন, আপনি নাকী আমকে নিয়ে ছড়া লিখেছন?
সালেহ ভাই নির্লিপ্ত গলায় বললেন, হুমম...লিখেছি, তো কী হয়েছে? তাছাড়া এটা লেখকের ব্যক্তি স্বাধীনতা। আমি কী নিয়ে ছড়া লিখবো, না লিখবো, সে কৈফিয়ত আমি কাউকে দেবো না!

দেখুন, আমিও কিন্তু আপনাকে নিয়ে এ রকম ছড়া লিখতে পারি।
আপনি পারলে লিখুন না; আপনাকে বাধা দিচ্ছে কে?
আমি এই মুহূর্তেই আপনাকে নিয়ে ছড়া লিখতে পারি।
আচ্ছা লিখুন তো দেখি!
শোনেন তাহলে:

ওরে আমার সালেহবিএনপি হলি হালে,তোরে পোঁছে কোন ?লে!...

__
পাদটিকা: আরো বড়ো পরিসরে "প্রেস জোকস" বইটি ২০১০ সালে একুশের বইমেলায় প্রকাশ করেছে "শুদ্ধস্বর"। ঘরে বসেই বইটি পাওয়া যাবে বিক্রয় ডটকম থেকে। দাম পড়বে ১১০ টাকা। চসৎকার অলংকরণসহ এর প্রচ্ছদ করেছেন সুমন। 

No comments:

Post a Comment