Friday, July 24, 2015

হোটেল ইন্টারকনের প্রত্যাবর্তন

বিপ্লব রহমান, ঢাকা: ত্রিশ বছর পর আবার স্বনামে ফিরছে বিশ্বখ্যাত ‘ইন্টার-কন্টিনেন্টাল, ঢাকা’ (সংক্ষেপে- ইন্টারকন, ঢাকা)। দেশের প্রথম পাঁচ তারকা হোটেলটি বাণিজ্যিকভাবে আবারো যাত্রা শুরু করবে আগামী বছর।

বেসরমারিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন বিষয়ক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন নিউজনেক্সটবিডি ডটকম’কে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘বহু বছর পর আবারো হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের যাত্রা এদেশে দেশি-বিদেশি পর্যটককে আকৃষ্ট করবে। বিশ্বব্যাপী রয়েছে হোটেলটির ব্যবসায়িক সুনাম। আশা করছি, হোটেল ইন্টারকনের মাধ্যমে দেশে বিনিয়োগ ও ব্যবসার পথ হবে সুপ্রশস্থ।’ মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন জানান, ‘রূপসী বাংলা’ হোটেল কর্তৃপক্ষের নিজস্ব বিনিয়োগে বছর দেড়েক ধরে শাহবাগের বহুতল ভবনের হোটেলটি সংস্কার করা হবে। আর ২০১৬ সালে আবারো চালু হবে হোটেল ইন্টারকন, ঢাকা। এরই মধ্যে ভবনটি সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। বন্ধ রয়েছে এর সব ধরনের বাণিজ্যিক পরিষেবা।

সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘‌রূপসী বাংলা’ হোটেল কর্তৃপক্ষের মূল মালিকানা বাংলাদেশ সার্ভিসেস লিমিটেডের। ২০১২ সালে ১৯ ফেব্রুয়ারি হোটেল ইন্টারকন কর্তৃপক্ষ এই কোম্পানির সঙ্গে মালিকানা হস্তান্তরের বিষয়ে চুক্তি করেছিল। পুরনো হোটেল ব্যবস্থাপনায় ফিরে যেতে এখন তারা নতুন করে চুক্তি করেছে। হোটেলটি নতুন রূপে সাজাতে এ বছর ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় লাগবে। আর এটি ২০১৬ সাল থেকে যাত্রা শুরু করবে ‘ইন্টার-কন্টিনেন্টাল, ঢাকা’ নামে ।

ভিন্ন একটি সূত্রের খবর, ‘ব্র্যান্ড নেম’ না থাকায় বিশ্বের পর্যটন বাজারে ‘রূপসী বাংলা’ হোটেল খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য পাঁচ তারকা হোটেলের তুলনায় এ হোটেলটির লাভের পাল্লা ছিল অনেকটাই মন্দা।

পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম বিলাসবহুল পাঁচ তারকা মানের হোটেল হিসেবে ইন্টার-কন্টিনেন্টাল, ঢাকা যাত্রা শুরু করে রমনার ১, মিন্টো রোডের ঠিকানায়। এই হোটেলটি বাংলাদেশের নানা ঐতিহাসিক ঘটনার স্বাক্ষী। ১৯৭০ এর জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করলে জাতীয় পরিষদের ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়ে পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে নানা বৈঠক ও আলোচনা এই হোটেলেই হয়েছিল।


এদিকে, হাবিবুল আলম, বীর প্রতীক ‘অপারেশন হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল: হিট অ্যান্ড রান’ নামক স্মৃতিচারণমূলক লেখায় জানাচ্ছেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আন্তর্জাতিক রেডক্রস হোটেল ইন্টারকনকে ‘নিরপেক্ষ অঞ্চল’ ঘোষণা করে। সেখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন বিদেশী কূটনীতিক, সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষক মহল। ২৫ মার্চের গণহত্যার পর পাকিস্তান সামরিক জান্তা দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক বলে প্রচার করছিল। এরই প্রতিবাদে মে মাসের শেষের দিকে মুক্তিবাহিনী হোটেল ইন্টারকনের বল রূমে শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। এ ঘটনাতেই আন্তর্জাতিক মহলে ছড়িয়ে পড়ে মুক্তিযুদ্ধের খবর।

পর্যটন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, স্বাধীনতার পর ১৯৮৬ সালে হোটেল ইন্টারকনের মালিকানা গ্রহণ করে ‘ঢাকা শেরাটন’। আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন শেরাটন হোটেলের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ায় ২০১৩ সালে হোটেলের মালিকানা হস্তান্তর হয় ‘রূপসী বাংলা’ কর্তৃপক্ষের কাছে।

এদিকে, মালিকানা রদবদলের সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের ‘ঢাকা শেরাটন হোটেল’ নামের আনুষ্ঠানিক পেজটিও নাম পরিবর্তন করে প্রথমে ‘রূপসী বাংলা’ ও এখন ‘হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, ঢাকা’ নাম ধারণ করেছে।
____
নিউজনেক্সটবিডি ডটকম/বিআর/এসএ
- See more at: http://bangla.newsnextbd.com/article179317.nnbd/#sthash.X69l0Bm6.dpuf

No comments:

Post a Comment