বিপ্লব রহমান, রাঙামাটি: পার্বত্য শান্তিচুক্তির বিরোধিতাকে কেন্দ্র করে পার্বত্যাঞ্চলে প্রায় দুদশক ধরে নানা তৎপরতা চালাচ্ছে ইউপিডিএফ (ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট) নামক পাহাড়িদের বিদ্রোহী গ্রুপ। অভিযোগ উঠেছে, শান্তিচুক্তি পক্ষীয় জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় (সন্তু) লারমার নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতির বিরুদ্ধে এ গ্রুপটির সশন্ত্র তৎপরতা রয়েছে। দুই দশকের পার্বত্য রাজনীতিতে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে ইউপিডিএফ’কে ঘিরে।
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত প্রায় দুদশকে সন্তু লারমার গাড়ির বহরে কয়েক দফায় হামলা, মুক্তিপণের দাবিতে রাঙামাটির দুর্গম পাহাড়ে এক মাস ধরে তিন বিদেশিকে অপহরণ, জনসংহতি সমিতির ৬২ নেতা-সমর্থককে তিন মাস ধরে অপহরণ, চুক্তির পক্ষে-বিপক্ষের সশস্ত্র সংঘাতসহ নানা ঘটনায় ‘পুর্ণ শ্বায়ত্ত্বশাসনপন্থী’ বলে পরিচিত ইউপিডিএফ বরাবরই রয়েছে পার্বত্য রাজনীতির আলোচনার কেন্দ্রে। এসব কারণে শান্তিচুক্তিতে (১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর) জনসংহতি সমিতির সাবেক গেরিলার গ্রুপ শান্তিবাহিনী অস্ত্র সমর্পন করলেও দুদশক ধরেই রক্ত ঝরছে পাহাড়ে। নানা সময়ে ইউপিডিএফ’র বিরুদ্ধে উঠেছে হত্যা, গুম খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসের বিস্তর অভিযোগ।
অন্যদিকে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পেজে ইউপিডিএফ’র দাবি, চলতি বছর ছয় মাসে তাদের ছয় জন খুন হয়েছেন প্রতিপক্ষের হাতে। আর নিরাপত্তা বাহিনীর গ্রেফতার করেছে ৬৯ নেতাকর্মীকে। সব রকম সন্ত্রাসের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততার কথাও অস্বীকার করে আসছে গ্রুপটি।
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত প্রায় দুদশকে সন্তু লারমার গাড়ির বহরে কয়েক দফায় হামলা, মুক্তিপণের দাবিতে রাঙামাটির দুর্গম পাহাড়ে এক মাস ধরে তিন বিদেশিকে অপহরণ, জনসংহতি সমিতির ৬২ নেতা-সমর্থককে তিন মাস ধরে অপহরণ, চুক্তির পক্ষে-বিপক্ষের সশস্ত্র সংঘাতসহ নানা ঘটনায় ‘পুর্ণ শ্বায়ত্ত্বশাসনপন্থী’ বলে পরিচিত ইউপিডিএফ বরাবরই রয়েছে পার্বত্য রাজনীতির আলোচনার কেন্দ্রে। এসব কারণে শান্তিচুক্তিতে (১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর) জনসংহতি সমিতির সাবেক গেরিলার গ্রুপ শান্তিবাহিনী অস্ত্র সমর্পন করলেও দুদশক ধরেই রক্ত ঝরছে পাহাড়ে। নানা সময়ে ইউপিডিএফ’র বিরুদ্ধে উঠেছে হত্যা, গুম খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসের বিস্তর অভিযোগ।
অন্যদিকে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পেজে ইউপিডিএফ’র দাবি, চলতি বছর ছয় মাসে তাদের ছয় জন খুন হয়েছেন প্রতিপক্ষের হাতে। আর নিরাপত্তা বাহিনীর গ্রেফতার করেছে ৬৯ নেতাকর্মীকে। সব রকম সন্ত্রাসের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততার কথাও অস্বীকার করে আসছে গ্রুপটি।
দলছুট নেতা ও ‘মাওরুম’ নামক ছোট কাগজ সম্পাদক দীপায়ন খীসা নিউজনেক্সটবিডি ডটকমকে বলেন, ‘মতাদর্শিক বিরোধিতার কারণেই আমরা সংগঠন ছেড়েছি। কারণ শুধু সন্তু লারমা ও শান্তিচুক্তির বিরোধিতা একটি দলের আদর্শ হতে পারে না। এ ছাড়া পাহাড়ে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার কথা বললেও প্রতিষ্ঠার পর গত ১৭ বছরে ইউপিডিএফ এর কোনো তত্ত্বগত রূপরেখাই দিতে পারেনি।’
দীপায়ন খীসা আরো বলেন, ‘প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে গ্রুপটি নানা সশস্ত্র কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। ইউপিডিএফ কর্মীরা ২০০১ সালে নানিয়ারচরের দুর্গম পাহাড়ে এক কোটি টাকা মুক্তিপণের দাবিতে এক মাস ধরে তিন বিদেশিকে কিভাবে অপহরণ করে রাখে, তা দলছুট নেতা অনিল চাকমা গোর্কি মাওরুম পত্রিকায় লিখে ফাঁস করেছেন। ২০১৩ সালেও ইউপিডিএফ কর্মীরা জনসংহতি সমিতির ৬২ নেতা-কর্মীকে অপহরণ করে। টেলিটক কর্মী, গায়ক টিনটিন চাকমাসহ আরো অনেক অপহরণ, গুম খুন, মুক্তিপণ ও চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত ইউপিডিএফ।’
গত বছর ২ ডিসেম্বর শান্তিচুক্তির ১৬ তম বর্ষপূর্তির আগে জনসংহতি সমিতির সভাপতি সন্তু লারমা চুক্তি বাস্তবায়নের অন্যতম বাধা হিসেবে ইউপিডিএফ’কে চিহ্নিত করে পার্বত্য রাজনীতিতে তাদের নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবি জানান।
ঢাকায় এক মতবিনিময় সভায় সাবেক গেরিলা নেতা অভিযোগ করে বলেন, ‘পার্বত্যাঞ্চলে একটি বিশেষ মহলের মদদে ইউপিডিএফের জন্ম। তাদের অত্যাচারের মাত্রা চলে গেছে চরম পর্যায়ে। সরকার যেহেতু তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না, তাই সাধারণ জনগণ তাদের দমনে অস্ত্র তুলে নিতে বাধ্য হয়েছে। তবে শান্তিচুক্তি পক্ষীয় এই সশস্ত্র গ্রুপটির সঙ্গে জনসংহতি সমিতির কোনো সম্পর্ক নেই।’
ইউপিডিএফ’র মুখপাত্র নিরন চাকমা তাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত সন্ত্রাসের সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। নিউজনেক্সটবিডি ডটকমকে তিনি বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগণ অধিকার বঞ্চিত। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ইউপিডিএফ পাহাড়ি জনগণের জাতিগত অধিকার প্রতিষ্ঠায় গণতান্ত্রিক সংগ্রাম করছে। সরকারের পক্ষ থেকে বরাবরই এ গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে সন্ত্রাস হিসেবে চিহ্নিত করে বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’
তাদের বিরুদ্ধে জনসংহতি সমিতির উত্থাপিত সন্ত্রাসের অভিযোগকে ‘মনগড়া ও চক্রান্ত’ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
নিরন চাকমা বলেন, ‘সরকারের সুবিধাভোগী ও ষড়যন্ত্রকারীরাও বিভিন্ন সময়ে ইউপিডিএফ’কে সন্ত্রাসী হিসেবে প্রচার করে আসছে। এ সবই সরকারের পক্ষ হয়ে প্রতিক্রিয়াশীলরা এ রকম নানা অভিযোগ করছে। পাহাড়ের গণতান্ত্রিক আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে এরকম অভিযোগ আগে থেকেই ছিল, এখনো আছে।’
শক্তিমত্তার প্রদর্শনী
পাহাড়ের একাধিক সূত্র জানায়, বিভিন্ন সময়ে পাহাড়ে শক্তিমত্তার পরিচয় দিয়েছে শান্তিচুক্তি বিরোধী ইউপিডিএফ। ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি রাঙামাটি থেকে খাগড়াছড়ি যাওয়ার পথে একদল সন্ত্রাসী আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান সন্তু লারমা ও চাকমা রাজা ব্যারিস্টার দেবাশিষ রায়ের গাড়ির বহর লক্ষ্য করে গুলি ও ইটপাটকেল ছোড়ে। তিন দফা হামলায় সন্তু লারমা ও রাজা দেবাশিষ রায়ের গাড়ির কাচ ভেঙে যায়। তারা দুজন অক্ষত থাকলেও চারজন ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকর্মী এতে আহত হন।
এর আগে ১৯৯৮ সালের ২৪ মে আঞ্চলিক পরিষদ গঠন হলে এর অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে খাগড়াছড়ি থেকে রাঙামাটি যাওয়ার পথে বেতছড়ি নামক ওই একই স্থানে সন্তু লারমার গাড়ির বহরে প্রথমবারের মতো সশস্ত্র হামলা হয়। সেবারও অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পান সন্তু লারমা।
দুটি হামলার জন্যই সাবেক গেরিলা নেতা সন্তু লারমা ইউপিডিএফকে দায়ী করেন। তখন থেকেই তিনি ‘সন্ত্রাসী গ্রুপ’ হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রামে ইউপিডিএফ’কে নিষিদ্ধ ঘোষণার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ইউপিডিএফ’র কর্মীরা ২০০১ সালে নানিয়ারচরের দুর্গম পাহাড়ে এক কোটি টাকা মুক্তিপণের দাবিতে এক মাস ধরে তিন বিদেশিকে অপহরণ করে রাখে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ অপহরণের নেতৃত্বদানকারী ও ইউপিডিএফ’র দলছুট নেতা অনিল চাকমা গোর্কি বছর ছয়েক আগে ‘মাওরুম’ নামক পত্রিকায় অপহরণ ঘটনার আদ্যপান্ত লেখেন। অপহরণের সঙ্গে জড়িত আরেক নেতা অভিলাষ চাকমাও ছিলেন সে সময় ইউপিডিএফ’র দলছুট। তারা দুজনই ওই অপহরণের জন্য সরকারের সাধারণ ক্ষমা পেয়েছিলেন। কিন্তু এরপর পরই গোর্কি ও অভিলাষ গুম খুন হন। ধারণা করা হয়, গোপন তথ্য ফাঁস করার দায়ে ইউপিডিএফ তাদের হত্যা করেছে।
এদিকে, ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ছিল রাঙামাটি সদরে জনসংহতি সমিতির ৪১তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠান। এতে যোগ দিয়ে নৌকা করে বাঘাইছড়িতে গ্রামের বাড়ি ফেরার পথে ১৬ ফেব্রুয়ারি কাপ্তাই হ্রদে অপহৃত হন ৬২ জনসংহতি সমিতির নেতা-কর্মী।
প্রায় চারমাস ধরে মুক্তিপণ দিয়ে দীঘিনালা এলাকা থেকে একে একে ছাড়া পান তারা। মুক্তিপ্রাপ্তরা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, শুধুমাত্র শান্তিচুক্তির পক্ষীয় জনসংহতি সমিতির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণেই ইউপিডিএফ তাদের অপহরণ করেছিল।
খবরে প্রকাশ, ওই অপহরণটি ছিল এ দেশের অপরাধ জগতের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অপহরণের ঘটনা।
একই বছর ইউপিডিএফ টেলিটকের তিনজন কর্মী এবং গত বছর নানিয়ারচরে গায়ক টিনটিন চাকমাকে অপহরণ করে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ দুটি ঘটনায় নিরাপত্তা বাহিনী অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করে জিম্মীদের।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০০১ ও ২০০৮ সালের দুটি সংসদ নির্বাচনে ইউপিডিএফ ‘তীর-ধনুক’ প্রতীক নিয়ে জনসংহতি সমিতির বিপক্ষে প্রার্থীতা দেয়। ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনেও ইউপিডিএফ সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবান আসনে ‘হাতি’ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন।
শান্তিচুক্তির বিরোধিতা করতে গিয়ে গত একযুগে পাহাড়ে চুক্তির সমর্থকদের ওপর সশস্ত্র হামলা, অপহরণ, গুম, খুন, চাঁদাবাজিসহ নানা সন্ত্রাসী তৎপরতার অভিযোগ উঠেছে ইউপিডিএফ’র বিরুদ্ধে। এ দীর্ঘ সময়ে দ্বন্দ্ব-সংঘাতে নিহত হয়েছেন দেড় শতাধিক, অপহৃত হয়েছেন তিন শতাধিক, আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে অসংখ্য।
গত বছর ভারতের মিজোরামে অবৈধ অস্ত্র-শস্ত্র কিনতে গিয়ে ইউপিডিএফ’র ছয় জন নেতা-কর্মী সেদেশে আটক হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। সে সময় মিজোরামের স্থানীয় কাগজে ছবিসহ প্রকাশিত খবর উদ্ধৃত করে ঢাকা থেকে প্রকাশিত একটি শীর্ষ স্থানীয় জাতীয় দৈনিক সংবাদটি প্রচার করে। তবে সে সময় ইউপিডিএফ দাবি করে, গ্রেফতারকৃতরা কেউই তাদের নেতা-কর্মী নয় ।
নিঃসঙ্গ ইউপিডিএফ
পাহাড়ের একাধিক সূত্র জানায়, ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের পরপরই পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের (পিসিপি) একটি অংশ চুক্তির বিরোধিতা শুরু করে। পিসিপির সাবেক নেতা প্রসিত খীসা ও সঞ্জয় চাকমা এ অংশটির নেতৃত্ব দেন বলে তখন সেটি চুক্তিবিরোধী প্রসিত-সঞ্জয় গ্রুপ নামে পরিচিতি পায়।
দীপায়ন খীসা আরো বলেন, ‘প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে গ্রুপটি নানা সশস্ত্র কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। ইউপিডিএফ কর্মীরা ২০০১ সালে নানিয়ারচরের দুর্গম পাহাড়ে এক কোটি টাকা মুক্তিপণের দাবিতে এক মাস ধরে তিন বিদেশিকে কিভাবে অপহরণ করে রাখে, তা দলছুট নেতা অনিল চাকমা গোর্কি মাওরুম পত্রিকায় লিখে ফাঁস করেছেন। ২০১৩ সালেও ইউপিডিএফ কর্মীরা জনসংহতি সমিতির ৬২ নেতা-কর্মীকে অপহরণ করে। টেলিটক কর্মী, গায়ক টিনটিন চাকমাসহ আরো অনেক অপহরণ, গুম খুন, মুক্তিপণ ও চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত ইউপিডিএফ।’
গত বছর ২ ডিসেম্বর শান্তিচুক্তির ১৬ তম বর্ষপূর্তির আগে জনসংহতি সমিতির সভাপতি সন্তু লারমা চুক্তি বাস্তবায়নের অন্যতম বাধা হিসেবে ইউপিডিএফ’কে চিহ্নিত করে পার্বত্য রাজনীতিতে তাদের নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবি জানান।
ঢাকায় এক মতবিনিময় সভায় সাবেক গেরিলা নেতা অভিযোগ করে বলেন, ‘পার্বত্যাঞ্চলে একটি বিশেষ মহলের মদদে ইউপিডিএফের জন্ম। তাদের অত্যাচারের মাত্রা চলে গেছে চরম পর্যায়ে। সরকার যেহেতু তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না, তাই সাধারণ জনগণ তাদের দমনে অস্ত্র তুলে নিতে বাধ্য হয়েছে। তবে শান্তিচুক্তি পক্ষীয় এই সশস্ত্র গ্রুপটির সঙ্গে জনসংহতি সমিতির কোনো সম্পর্ক নেই।’
ইউপিডিএফ’র মুখপাত্র নিরন চাকমা তাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত সন্ত্রাসের সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। নিউজনেক্সটবিডি ডটকমকে তিনি বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগণ অধিকার বঞ্চিত। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ইউপিডিএফ পাহাড়ি জনগণের জাতিগত অধিকার প্রতিষ্ঠায় গণতান্ত্রিক সংগ্রাম করছে। সরকারের পক্ষ থেকে বরাবরই এ গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে সন্ত্রাস হিসেবে চিহ্নিত করে বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’
তাদের বিরুদ্ধে জনসংহতি সমিতির উত্থাপিত সন্ত্রাসের অভিযোগকে ‘মনগড়া ও চক্রান্ত’ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
নিরন চাকমা বলেন, ‘সরকারের সুবিধাভোগী ও ষড়যন্ত্রকারীরাও বিভিন্ন সময়ে ইউপিডিএফ’কে সন্ত্রাসী হিসেবে প্রচার করে আসছে। এ সবই সরকারের পক্ষ হয়ে প্রতিক্রিয়াশীলরা এ রকম নানা অভিযোগ করছে। পাহাড়ের গণতান্ত্রিক আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে এরকম অভিযোগ আগে থেকেই ছিল, এখনো আছে।’
শক্তিমত্তার প্রদর্শনী
পাহাড়ের একাধিক সূত্র জানায়, বিভিন্ন সময়ে পাহাড়ে শক্তিমত্তার পরিচয় দিয়েছে শান্তিচুক্তি বিরোধী ইউপিডিএফ। ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি রাঙামাটি থেকে খাগড়াছড়ি যাওয়ার পথে একদল সন্ত্রাসী আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান সন্তু লারমা ও চাকমা রাজা ব্যারিস্টার দেবাশিষ রায়ের গাড়ির বহর লক্ষ্য করে গুলি ও ইটপাটকেল ছোড়ে। তিন দফা হামলায় সন্তু লারমা ও রাজা দেবাশিষ রায়ের গাড়ির কাচ ভেঙে যায়। তারা দুজন অক্ষত থাকলেও চারজন ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকর্মী এতে আহত হন।
এর আগে ১৯৯৮ সালের ২৪ মে আঞ্চলিক পরিষদ গঠন হলে এর অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে খাগড়াছড়ি থেকে রাঙামাটি যাওয়ার পথে বেতছড়ি নামক ওই একই স্থানে সন্তু লারমার গাড়ির বহরে প্রথমবারের মতো সশস্ত্র হামলা হয়। সেবারও অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পান সন্তু লারমা।
দুটি হামলার জন্যই সাবেক গেরিলা নেতা সন্তু লারমা ইউপিডিএফকে দায়ী করেন। তখন থেকেই তিনি ‘সন্ত্রাসী গ্রুপ’ হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রামে ইউপিডিএফ’কে নিষিদ্ধ ঘোষণার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ইউপিডিএফ’র কর্মীরা ২০০১ সালে নানিয়ারচরের দুর্গম পাহাড়ে এক কোটি টাকা মুক্তিপণের দাবিতে এক মাস ধরে তিন বিদেশিকে অপহরণ করে রাখে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ অপহরণের নেতৃত্বদানকারী ও ইউপিডিএফ’র দলছুট নেতা অনিল চাকমা গোর্কি বছর ছয়েক আগে ‘মাওরুম’ নামক পত্রিকায় অপহরণ ঘটনার আদ্যপান্ত লেখেন। অপহরণের সঙ্গে জড়িত আরেক নেতা অভিলাষ চাকমাও ছিলেন সে সময় ইউপিডিএফ’র দলছুট। তারা দুজনই ওই অপহরণের জন্য সরকারের সাধারণ ক্ষমা পেয়েছিলেন। কিন্তু এরপর পরই গোর্কি ও অভিলাষ গুম খুন হন। ধারণা করা হয়, গোপন তথ্য ফাঁস করার দায়ে ইউপিডিএফ তাদের হত্যা করেছে।
এদিকে, ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ছিল রাঙামাটি সদরে জনসংহতি সমিতির ৪১তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠান। এতে যোগ দিয়ে নৌকা করে বাঘাইছড়িতে গ্রামের বাড়ি ফেরার পথে ১৬ ফেব্রুয়ারি কাপ্তাই হ্রদে অপহৃত হন ৬২ জনসংহতি সমিতির নেতা-কর্মী।
প্রায় চারমাস ধরে মুক্তিপণ দিয়ে দীঘিনালা এলাকা থেকে একে একে ছাড়া পান তারা। মুক্তিপ্রাপ্তরা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, শুধুমাত্র শান্তিচুক্তির পক্ষীয় জনসংহতি সমিতির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণেই ইউপিডিএফ তাদের অপহরণ করেছিল।
খবরে প্রকাশ, ওই অপহরণটি ছিল এ দেশের অপরাধ জগতের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অপহরণের ঘটনা।
একই বছর ইউপিডিএফ টেলিটকের তিনজন কর্মী এবং গত বছর নানিয়ারচরে গায়ক টিনটিন চাকমাকে অপহরণ করে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ দুটি ঘটনায় নিরাপত্তা বাহিনী অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করে জিম্মীদের।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০০১ ও ২০০৮ সালের দুটি সংসদ নির্বাচনে ইউপিডিএফ ‘তীর-ধনুক’ প্রতীক নিয়ে জনসংহতি সমিতির বিপক্ষে প্রার্থীতা দেয়। ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনেও ইউপিডিএফ সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবান আসনে ‘হাতি’ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন।
শান্তিচুক্তির বিরোধিতা করতে গিয়ে গত একযুগে পাহাড়ে চুক্তির সমর্থকদের ওপর সশস্ত্র হামলা, অপহরণ, গুম, খুন, চাঁদাবাজিসহ নানা সন্ত্রাসী তৎপরতার অভিযোগ উঠেছে ইউপিডিএফ’র বিরুদ্ধে। এ দীর্ঘ সময়ে দ্বন্দ্ব-সংঘাতে নিহত হয়েছেন দেড় শতাধিক, অপহৃত হয়েছেন তিন শতাধিক, আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে অসংখ্য।
গত বছর ভারতের মিজোরামে অবৈধ অস্ত্র-শস্ত্র কিনতে গিয়ে ইউপিডিএফ’র ছয় জন নেতা-কর্মী সেদেশে আটক হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। সে সময় মিজোরামের স্থানীয় কাগজে ছবিসহ প্রকাশিত খবর উদ্ধৃত করে ঢাকা থেকে প্রকাশিত একটি শীর্ষ স্থানীয় জাতীয় দৈনিক সংবাদটি প্রচার করে। তবে সে সময় ইউপিডিএফ দাবি করে, গ্রেফতারকৃতরা কেউই তাদের নেতা-কর্মী নয় ।
নিঃসঙ্গ ইউপিডিএফ
পাহাড়ের একাধিক সূত্র জানায়, ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের পরপরই পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের (পিসিপি) একটি অংশ চুক্তির বিরোধিতা শুরু করে। পিসিপির সাবেক নেতা প্রসিত খীসা ও সঞ্জয় চাকমা এ অংশটির নেতৃত্ব দেন বলে তখন সেটি চুক্তিবিরোধী প্রসিত-সঞ্জয় গ্রুপ নামে পরিচিতি পায়।
১৯৯৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি খাগড়াছড়ি স্টেডিয়ামে গেরিলা গ্রুপ শান্তিবাহিনীর অস্ত্র সমর্পণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে কড়া নিরাপত্তার ভেতর গ্রুপটির কর্মীরা প্রথমবারের মতো ‘পুর্ণ স্বায়ত্তশাসন’ দাবি করে ব্যানার প্রদর্শন করে। এটিই ছিল তাদের প্রথম প্রকাশ্য কর্মসূচি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৯৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর গ্রুপটি ঢাকায় এক বৈঠকে সাংগঠনিকভাবে আত্নপ্রকাশ করে ‘ইউপিডিএফ’ নামে। প্রসিত বিকাশ খীসার নেতৃত্বে গ্রুপটির প্রথম আহ্বায়ক কমিটিতে ছিলেন সঞ্জয় চাকমা, রবি শংকর চাকমা, দীপ্তি শংকর চাকমা ও ধ্রুব জ্যোতি চাকমা।
তবে মতবিরোধের কারনে বছর চারেকের মধ্যে গ্রুপটির শীর্ষস্থানীয় নেতা সঞ্জয় চাকমা, দীপ্তি শংকর চাকমা, বাবুল চাকমা, দীপায়ন খীসা, অভিলাষ চাকমা, অনিল চাকমা গোর্কিসহ বেশ কয়েকজন পুরনো নেতা দল ত্যাগ করেন।
সঞ্জয় চাকমা, দীপ্তি শংকর চাকমা, বাবুল চাকমা পাড়ি জমিয়েছেন বিদেশে। তিন বিদেশী অহরণের সঙ্গে জড়িত ইউপিডিএফ’র দলছুট নেতা অনিল চাকমা গোর্কি ও অভিলাষ চাকমা হয়েছেন গুম খুন। ইউপিডিএফ’র অন্যতম সংগঠক দীপায়ন খীসা দলবদল করে এখন জনসংহতি সমিতির রাজনীতির কেন্দ্রীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।
ইউপিডিএফ’র বর্তমান সভাপতি হিসেবে প্রসিত খীসা ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রবি শংকর চাকমা দায়িত্ব পালন করছেন। ঢাকা থেকেই নেতারা টেলিফোনে নিয়ন্ত্রণ করেন পাহাড়ের রাজনীতি। কয়েক বছর আগে শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের তিন তলায় গ্রুপটির সমর্থিত ‘হিল লিটারেচার ফোরাম’র অফিসও ছিল।
শান্তিচুক্তির পক্ষে-বিপক্ষের সংঘাতের এক পর্যায়ে ২০০৬ সালের ৫ জানুয়ারি ইউপিডিএফ’র তথ্য বিভাগের এক বিবৃতিতে চার মাসের জন্য জনসংহতি সমিতির প্রতি ‘সাধারণ ক্ষমা’ ঘোষণা করা হয়। সে সময় সমিতির কথিত অবৈধ অস্ত্র-শস্ত্র ইউপিডিএফ’র কাছে জমা দেয়ার আহ্বানও জানানো হয় বিবৃতিতে।
___
নিউজনেক্সটবিডি ডটকম/বিআর/আতে - See more at: http://bangla.newsnextbd.com/article178777.nnbd/#sthash.orJgkSQr.dpuf
অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৯৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর গ্রুপটি ঢাকায় এক বৈঠকে সাংগঠনিকভাবে আত্নপ্রকাশ করে ‘ইউপিডিএফ’ নামে। প্রসিত বিকাশ খীসার নেতৃত্বে গ্রুপটির প্রথম আহ্বায়ক কমিটিতে ছিলেন সঞ্জয় চাকমা, রবি শংকর চাকমা, দীপ্তি শংকর চাকমা ও ধ্রুব জ্যোতি চাকমা।
তবে মতবিরোধের কারনে বছর চারেকের মধ্যে গ্রুপটির শীর্ষস্থানীয় নেতা সঞ্জয় চাকমা, দীপ্তি শংকর চাকমা, বাবুল চাকমা, দীপায়ন খীসা, অভিলাষ চাকমা, অনিল চাকমা গোর্কিসহ বেশ কয়েকজন পুরনো নেতা দল ত্যাগ করেন।
সঞ্জয় চাকমা, দীপ্তি শংকর চাকমা, বাবুল চাকমা পাড়ি জমিয়েছেন বিদেশে। তিন বিদেশী অহরণের সঙ্গে জড়িত ইউপিডিএফ’র দলছুট নেতা অনিল চাকমা গোর্কি ও অভিলাষ চাকমা হয়েছেন গুম খুন। ইউপিডিএফ’র অন্যতম সংগঠক দীপায়ন খীসা দলবদল করে এখন জনসংহতি সমিতির রাজনীতির কেন্দ্রীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।
ইউপিডিএফ’র বর্তমান সভাপতি হিসেবে প্রসিত খীসা ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রবি শংকর চাকমা দায়িত্ব পালন করছেন। ঢাকা থেকেই নেতারা টেলিফোনে নিয়ন্ত্রণ করেন পাহাড়ের রাজনীতি। কয়েক বছর আগে শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের তিন তলায় গ্রুপটির সমর্থিত ‘হিল লিটারেচার ফোরাম’র অফিসও ছিল।
শান্তিচুক্তির পক্ষে-বিপক্ষের সংঘাতের এক পর্যায়ে ২০০৬ সালের ৫ জানুয়ারি ইউপিডিএফ’র তথ্য বিভাগের এক বিবৃতিতে চার মাসের জন্য জনসংহতি সমিতির প্রতি ‘সাধারণ ক্ষমা’ ঘোষণা করা হয়। সে সময় সমিতির কথিত অবৈধ অস্ত্র-শস্ত্র ইউপিডিএফ’র কাছে জমা দেয়ার আহ্বানও জানানো হয় বিবৃতিতে।
___
নিউজনেক্সটবিডি ডটকম/বিআর/আতে - See more at: http://bangla.newsnextbd.com/article178777.nnbd/#sthash.orJgkSQr.dpuf
No comments:
Post a Comment