পার্বত্য বিশ্লেষকরা বলছেন, ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের পর সরকারের সদিচ্ছার অভাবে বহু পাহাড়ি এবং সেখানে দীর্ঘদিন বসবাসকারী অনেক বাঙালির জমির আইনি অধিকার এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। সংকটের অন্যতম কারণ এটিই। শান্তিচুক্তি স্বারের পর জমির বিরোধকে কেন্দ্র করে এ পর্যন্ত অন্তত ১৬টি সহিংস ঘটনা ঘটেছে। এতে ুদ্রজাতি গোষ্ঠির পাহাড়িরাই তিগ্রস্থ হয়েছেন বেশী। নিহত হয়েছে অন্তত ১০ পাহাড়ি; ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছে ২০ পাহাড়ি নারী ও শিশু। সহিংসতায় পাহাড়ি-বাঙালির সহস্রাধিক ঘরবাড়ি হয়েছে ভস্মিভূত। আহত ও লুটপাটের ঘটনাও ঘটেছে অনেক।
অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে শান্তিচুক্তির ৭৭টি ধারার মধ্যে ৫৫টি ধারা বাস্তবায়নের কথা বলা হলেও বিশ্লেষকরা একে ‘ধোঁকাবাজি’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাদের মতে, পাহাড়ে শান্তি ও উন্নয়ন এখনো দৃশ্যমান নয়। শান্তিচুক্তির কোনো সুফল পাহাড়ি-বাঙালির ঘরে পৌঁছেনি। একটি বিশেষ মহলের ছত্রচ্ছায়ায় সেখানে জনজীবন ক্রমেই নিস্পেষিত হচ্ছে। মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠিকে আস্কারা দিয়ে সেখানে পরিকল্পিতভাবে অশান্তি জিইয়ে রাখা হয়েছে। শান্তিচুক্তির প্রশ্নে পাহাড়িদের অভ্যন্তরীণ ভাতৃঘাতি সংঘাতও এরই অংশ। চুক্তি অনুযায়ী, বরাবরই অকার্যকর করে রাখা হয়েছে স্থানীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ। প্রতিষ্ঠার ২৪ বছরেও নির্বাচন না হওয়ায় এসব পরিষদ যেমন জনপ্রতিনিধিত্ব করছে না, তেমনি এসব সংস্থার জবাবদিহিতাও নেই। স্থায়ী বাসিন্দাদের নিয়ে করা ভোটার তালিকায় পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদ নির্বাচনেও উদ্যোগ নেই।
ভূমি কমিশন হিমাগারে
পাহাড়ের স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, শান্তিচুক্তির ৪ নম্বর শর্তানুযায়ী, একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে চেয়ারম্যান করে ১৯৯৯ সালের ৩ জুন গঠন করা হয় ৯ সদস্যের পার্বত্য ভূমি কমিশন। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- চাকমা, বোমাং ও মং সার্কেল চিফ (রাজা), পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান অথবা তাঁর একজন প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার অথবা একজন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার এবং বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের তিন চেয়ারম্যান।
কিন্তু কমিশন এখনো আইনি সীমাবদ্ধতা, অর্থ ও লোকবল সংকটই কাটিয়ে উঠতে পারেনি। দফায় দফায় কমিশনের কাঠামোর রদবদল হয়েছে মাত্র। শান্তিচুক্তির সঙ্গে বিরোধাতœক বলে এ সংক্রান্ত একটি সঠিক আইন এখনো কার্যকর হয়নি। প্রতিষ্ঠার ১৪ বছরেও পার্বত্য ভূমি কমিশন পাহাড়ে একটিও জায়গা-জমির বিরোধ নিস্পত্তিই করতে পারেনি।
ভূমি-সংঘাতে বিপর্যস্ত পাহাড়
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভূমির বিরোধ দিন দিন বাড়তে থাকায় পাহাড়ি-বাঙালি সংঘাতও বাড়ছে। চলতি বছর ৩ আগষ্ট খাগড়াছড়ির মাটিরাঙার তাইন্দং ইউনিয়নে পাহাড়িদের ২৬টি ঘর-বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। আতঙ্কিত ৪৫০টি পরিবার ঘরবাড়ি ছাড়া হয়ে ফেনি নদী সংলগ্ন ভারত সীমান্তে আশ্রয় নেয়। ভয়-ভীতি ও নিরব সন্ত্রাসের মুখে সম্প্রতি বান্দরবানের নাইংছড়ির বাদুরঝিড়ি এলাকার ৩১টি চাক পরিবার এবং একই থানার বাইশাড়ি এলাকার সাতটি মারমা পরিবার উচ্ছেদ হয়। পরে তারা প্রশাসনিক সহায়তায় নিজ নিজ এলাকাতে ফিরলেও ঘটনার সুরাহা এখনো হয়নি।
এর আগে ২০১২ সালের ১২-১৩ সেপ্টেম্বর রাঙামাটি সদরে আইন-শৃঙ্খলা রাকারী বাহিনীর উপস্থিতিতেই সন্ত্রাসীরা পাহাড়িদের ১১টি দোকানপাট ও বাড়িঘরে প্রকাশ্যে ভাঙচুর চালায়। এ ঘটনায় আহত হয় ১১৭ পাহাড়ি। ২০১১ সালের ১৪ ডিসেম্বর জমির বিরোধকে কেন্দ্র করে বাঘাইছড়ি-দীঘিনালায় হামলায় একজন পাহাড়ি নিহত ও ১০ আহত হয়। একই বছর ১৭ এপ্রিল রামগড়-মানিকছড়ির হামলায় দুজন পাহাড়ি খুন ও ২৫ জন আহত এবং পাহাড়িদের ১১১টি ঘরবাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে।
২০১১ সালে লংগদুতে পাহাড়িদের ২৭টি ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ২০১০ সালের ২৫ ফেব্র“য়ারি খাগড়াছড়িতে আগুন দেওয়া হয় ৬১টি ঘরবাড়িতে। একই বছর ২৫ জানুয়ারি বাঘাইছড়ির বাঘাইহাটে নতুন করে বসতি স্থাপনকারী বাঙালিদের সহিংসতার জের ধরে পরদিন সেখানে বাঙালিদের সাতটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। ওই বছর ১৯-২০ ফেব্র“য়ারি বাঘাইহাটে হামলায় দুজন পাহাড়ি খুন, ২৫ জন আহত এবং ৪৩৭টি ঘরবাড়ি ভস্মীভূত হয়। সহিংসতার জের ধরে সে সময় খাগড়াছড়ি সদরে খুন হয় এক বাঙালি। পুড়িয়ে দেওয়া হয় পাহাড়িদের বেশ কিছু ঘরবাড়ি।
এছাড়া জমির বিরোধকে কেন্দ্র করে ২০০৮ সালের ২০ এপ্রিল অজ্ঞাতপরিচয় সন্ত্রাসীরা বাঘাইছড়ির গঙ্গারামমুখের বাঘাইহাট নার্সারি এলাকায় সাতটি গ্রামে আগুন দিয়ে ১৩২টি বাড়ি পুড়িয়ে দেয়। এতে ধ্বংস হয় বাঙালিদের ৭৯টি এবং পাহাড়িদের ৫৩টি ঘরবাড়ি। ২০০৬ সালের ৩ এপ্রিল মাইসছড়িতে প্রায় ১০০ পাহাড়ির বাড়িঘর তছনছ ও লুটপাট হয়। ২০০৩ সালের ২৬ আগস্ট মহালছড়িতে সংঘাতে নিহত হয় দুজন পাহাড়ি; ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির শিকার হয় ১০ পাহাড়ি নারী। আহত হয় প্রায় ৫০ জন। ২০০৩ সালের ১৯ এপ্রিল ভুয়াছড়া, ২০০২ সালের ১০ অক্টোবর রাজভিলা, ২০০১ সালের ১৮ মে বোয়ালখালী ও মেরুং, একই বছর ২৫ জুন রামগড়, ১৯৯৯ সালের ১৬ অক্টোবর বাবুছড়া, ১৯৯৯ সালের ৪ এপ্রিল বাঘাইহাটে সহিংসতা হয়েছে। এর মধ্যে বাবুছড়ার সহিংসতায় তিন পাহাড়ি নিহত হয়। ধর্ষিত হয় এক পাহাড়ি নারী। গত বছর ৯ মে রাঙামাটির লংগদুতে কিশোরী সুজাতা চাকমা ধর্ষণ ও খুন হওয়ার ঘটনায় ােভে ফেটে পড়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম।
প্রশাসনিক আশ্বাসে দীর্ঘ অবিশ্বাস
গত ১৬ বছর ধরেই সরকারগুলোর পক্ষ থেকে বরাবরই শান্তিচুক্তির অধিকাংশ ধারা বাস্তবায়নের কথা বলা হচ্ছে। প্রশাসনিক ভাষ্যমতে, শান্তিচুক্তির পুরোপুরি বাস্তবায়ন একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার বিষয়। পর্যায়ক্রমে এর বাদবাকী ধারাগুলোও বাস্তবায়ন করা হবে। সবশেষ এ বছরের ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খাগড়াছড়ির সমাবেশে বলেছেন, শান্তিচুক্তির ৭৭টি ধারার মধ্যে ৫৫টি এরইমধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে। বাকিগুলোও বাস্তবায়নের পথে। আগামীদিনে মতায় এলে ভূমি বিরোধ নিস্পত্তি কমিশন আইন সংশোধন করে পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি সমস্যা চিরতরে দূর করা হবে। সমাবেশ থেকে প্রধানমন্ত্রী ‘চুক্তি বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতা রায় আগামী নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট’ দেওয়ার আহ্বান জানান।
অন্যদিকে, পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় (সন্তু) লারমা ‘ভূমি আগ্রাসন ও জুম্ম (পাহাড়ি) জাতি বিলুপ্তির ষড়যন্ত্র প্রতিরোধ’ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ার সুযোগে পাহাড়ে এখনো চুক্তি লঙ্ঘন করে প্রশাসন কর্তৃক অস্থানীয় ও বহিরাগতদের কাছে জুম্মদের জুম ভূমি ইজারা দেওয়া, নানা অজুহাতে জুম্মদের তাদের চিয়ারত জায়গা-জমি থেকে উচ্ছেদ করার ষড়যন্ত্রমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করাসহ চুক্তিপরিপন্থী নানা কার্যক্রম হাতে নেয়া ইত্যাদি অব্যাহত রয়েছে। এসব হীন কর্মকাণ্ডে তথাকথিত সমঅধিকার আন্দোলন, পার্বত্য যুব ফ্রন্ট, পার্বত্য নাগরিক পরিষদ, বাঙালি ছাত্র পরিষদ ইত্যাদি ভূঁইফোড় সাম্প্রদায়িক সংগঠনগুলোকে প্রত্যভাবে মদদ দিয়ে চলেছে প্রশাসন এবং নিরাপত্তা বাহিনীর একাংশ। পাহাড়ে ভূমি আগ্রাসন হচ্ছে জুম্ম জাতি বিলুপ্তির ষড়যন্ত্রেরই অংশ।
গত ০১ ডিসেম্বর রবিবার রাঙামাটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাবেক গেরিলা নেতা সন্তু লারমা এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার দু-দু‘টি মেয়াদে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।
১৬ বছরেও চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণ হিসেবে সন্তু লারমা আরো বলেন, প্রথমত, চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারের আন্তরিকতা ও সদিচ্ছার অভাব এবং নীতি-নির্ধারকদের উগ্র জাতীয়তাবাদী, অগণতান্ত্রিক ও সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি, দ্বিতীয়ত, ‘উপজাতীয় অধ্যুষিত অঞ্চলের’ বৈশিষ্ট্য সংরণের পরিবর্তে পার্বত্য চট্টগ্রামকে মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে পরিণত করার ষড়যন্ত্র, তৃতীয়ত, বৈরী ভাবাপন্ন ও চুক্তি বিরোধী আমলাতন্ত্র, প্রশাসনিক ও আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থাপনা, চতুর্থত, পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা কর্তৃত্ব ও পাঁচ লাধিক সেটেলার বাঙালিদের মাধ্যমে হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলকরণ এবং সর্বোপরি, চুক্তি বিরোধী ইউপিডিএফ-এর অব্যাহত সশস্ত্র সন্ত্রাস এবং জাতীয় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেকার স্থানীয় জুম্ম নেতৃত্বের লেজুড়বৃত্তি ও দালালিপনা।
বিশিষ্ট পার্বত্য বিশ্লেষক ও চাকমা রাজা ব্যরিস্টার দেবাশীষ রায় শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ার প্রধান অন্তরায় হিসেবে ভূমি সমস্যার সমাধানের উদ্যোগহীনতাকে চিহ্নিত করেন।
এই লেখকের সঙ্গে আলাপকালে চাকমা রাজা বলেন, ১৯৯৭ সালে চুক্তি স্বারের পর থেকে কিছু ব্যতিক্রমী ঘটনা ছাড়া পার্বত্যাঞ্চলে এখনো পাহাড়ি জনগণকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। শুধু তাই-ই নয়, দিন দিন পরিস্থিতি আরো অবনতির দিকে যাচ্ছে। কোনো কোনো েেত্র সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীও এসব উচ্ছেদের সঙ্গে জড়িত। পার্বত্য ভূমি কমিশন আইন-২০০১ বাস্তবায়িত না হওয়া এর অন্যতম কারণ। সৈয়দ সাজেদা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন এ সংক্রান্ত একটি কমিটিও গঠিত হয়েছিল। পার্বত্য ভূমি কমিশনকে সক্রিয় করতে আইনের একটি খসড়াও তৈরি হয়েছিলো। কিন্তু সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্রের একাংশ (লবিস্ট গ্রুপ) একে এখন হিমাগারে পাঠিয়েছে। ব্যরিস্টার দেবাশীষ অভিযোগ করে বলেন, উপরন্তু সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয় ১৯৯৭ সালের চুক্তির মূল চেতনার পরিপন্থী কাজ করে চলেছে।
এছাড়া তিনি শান্তিচুক্তি পুরোপুরি বাস্তবায়নে ভারত প্রত্যাগত ও পার্বাঞ্চলের অভ্যন্তরীণ পাহাড়ি শরণার্থী পুনর্বাসন, পার্বত্য চট্টগ্রামকে বেসামরিকীকরণ, পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদ ও জেলা পরিষদসমূহকে সক্রিয় করা, পাহাড়িদের জন্য ন্যায় বিচার, সুশাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, আঞ্চলিক দলগুলোর ভাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধ– ইত্যাদি বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।
পার্বত্য নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান এই লেখককে বলেন, সরকারগুলোর সদিচ্ছার অভাবে শান্তিচুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো বাস্তবায়িত হয়ইনি, উপরন্তু পার্বত্যাঞ্চলে ‘স্থায়ী শান্তি এবং উন্নয়নে পাহাড়িদের অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠা’ — এই মূল চেতনাটিই নষ্ট করে ফেলা হয়েছে।
তিনি বলেন, এ কারণে ভূমি কমিশনের পাশাপাশি চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটি ও শরণার্থী পুনর্বাসন বিষয়ক টাস্কফোর্স কখনোই পুরোদমে সক্রিয় হয়নি। পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন জেলা পরিষদ নির্বাচনও দেওয়া হচ্ছে না। ২৪ বছর ধরে তিনটি জেলা পরিষদ পরিচালিত হচ্ছে সরকারগুলোর পছন্দের ব্যক্তি দিয়ে। স্থানীয় এসব প্রতিষ্ঠানে জনপ্রতিনিধিত্ব নেই; জবাবদিহিতাও নেই। সব মিলিয়ে শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের কোনো সুফল পাহাড়ি-বাঙালির ঘরে এখনো পৌঁছেনি। দিন দিন জটিলতর হচ্ছে পার্বত্য সমস্যা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভূমির বিরোধ দিন দিন বাড়তে থাকায় পাহাড়ি-বাঙালি সংঘাতও বাড়ছে। চলতি বছর ৩ আগষ্ট খাগড়াছড়ির মাটিরাঙার তাইন্দং ইউনিয়নে পাহাড়িদের ২৬টি ঘর-বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। আতঙ্কিত ৪৫০টি পরিবার ঘরবাড়ি ছাড়া হয়ে ফেনি নদী সংলগ্ন ভারত সীমান্তে আশ্রয় নেয়। ভয়-ভীতি ও নিরব সন্ত্রাসের মুখে সম্প্রতি বান্দরবানের নাইংছড়ির বাদুরঝিড়ি এলাকার ৩১টি চাক পরিবার এবং একই থানার বাইশাড়ি এলাকার সাতটি মারমা পরিবার উচ্ছেদ হয়। পরে তারা প্রশাসনিক সহায়তায় নিজ নিজ এলাকাতে ফিরলেও ঘটনার সুরাহা এখনো হয়নি।
এর আগে ২০১২ সালের ১২-১৩ সেপ্টেম্বর রাঙামাটি সদরে আইন-শৃঙ্খলা রাকারী বাহিনীর উপস্থিতিতেই সন্ত্রাসীরা পাহাড়িদের ১১টি দোকানপাট ও বাড়িঘরে প্রকাশ্যে ভাঙচুর চালায়। এ ঘটনায় আহত হয় ১১৭ পাহাড়ি। ২০১১ সালের ১৪ ডিসেম্বর জমির বিরোধকে কেন্দ্র করে বাঘাইছড়ি-দীঘিনালায় হামলায় একজন পাহাড়ি নিহত ও ১০ আহত হয়। একই বছর ১৭ এপ্রিল রামগড়-মানিকছড়ির হামলায় দুজন পাহাড়ি খুন ও ২৫ জন আহত এবং পাহাড়িদের ১১১টি ঘরবাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে।
২০১১ সালে লংগদুতে পাহাড়িদের ২৭টি ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ২০১০ সালের ২৫ ফেব্র“য়ারি খাগড়াছড়িতে আগুন দেওয়া হয় ৬১টি ঘরবাড়িতে। একই বছর ২৫ জানুয়ারি বাঘাইছড়ির বাঘাইহাটে নতুন করে বসতি স্থাপনকারী বাঙালিদের সহিংসতার জের ধরে পরদিন সেখানে বাঙালিদের সাতটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। ওই বছর ১৯-২০ ফেব্র“য়ারি বাঘাইহাটে হামলায় দুজন পাহাড়ি খুন, ২৫ জন আহত এবং ৪৩৭টি ঘরবাড়ি ভস্মীভূত হয়। সহিংসতার জের ধরে সে সময় খাগড়াছড়ি সদরে খুন হয় এক বাঙালি। পুড়িয়ে দেওয়া হয় পাহাড়িদের বেশ কিছু ঘরবাড়ি।
এছাড়া জমির বিরোধকে কেন্দ্র করে ২০০৮ সালের ২০ এপ্রিল অজ্ঞাতপরিচয় সন্ত্রাসীরা বাঘাইছড়ির গঙ্গারামমুখের বাঘাইহাট নার্সারি এলাকায় সাতটি গ্রামে আগুন দিয়ে ১৩২টি বাড়ি পুড়িয়ে দেয়। এতে ধ্বংস হয় বাঙালিদের ৭৯টি এবং পাহাড়িদের ৫৩টি ঘরবাড়ি। ২০০৬ সালের ৩ এপ্রিল মাইসছড়িতে প্রায় ১০০ পাহাড়ির বাড়িঘর তছনছ ও লুটপাট হয়। ২০০৩ সালের ২৬ আগস্ট মহালছড়িতে সংঘাতে নিহত হয় দুজন পাহাড়ি; ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির শিকার হয় ১০ পাহাড়ি নারী। আহত হয় প্রায় ৫০ জন। ২০০৩ সালের ১৯ এপ্রিল ভুয়াছড়া, ২০০২ সালের ১০ অক্টোবর রাজভিলা, ২০০১ সালের ১৮ মে বোয়ালখালী ও মেরুং, একই বছর ২৫ জুন রামগড়, ১৯৯৯ সালের ১৬ অক্টোবর বাবুছড়া, ১৯৯৯ সালের ৪ এপ্রিল বাঘাইহাটে সহিংসতা হয়েছে। এর মধ্যে বাবুছড়ার সহিংসতায় তিন পাহাড়ি নিহত হয়। ধর্ষিত হয় এক পাহাড়ি নারী। গত বছর ৯ মে রাঙামাটির লংগদুতে কিশোরী সুজাতা চাকমা ধর্ষণ ও খুন হওয়ার ঘটনায় ােভে ফেটে পড়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম।
প্রশাসনিক আশ্বাসে দীর্ঘ অবিশ্বাস
গত ১৬ বছর ধরেই সরকারগুলোর পক্ষ থেকে বরাবরই শান্তিচুক্তির অধিকাংশ ধারা বাস্তবায়নের কথা বলা হচ্ছে। প্রশাসনিক ভাষ্যমতে, শান্তিচুক্তির পুরোপুরি বাস্তবায়ন একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার বিষয়। পর্যায়ক্রমে এর বাদবাকী ধারাগুলোও বাস্তবায়ন করা হবে। সবশেষ এ বছরের ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খাগড়াছড়ির সমাবেশে বলেছেন, শান্তিচুক্তির ৭৭টি ধারার মধ্যে ৫৫টি এরইমধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে। বাকিগুলোও বাস্তবায়নের পথে। আগামীদিনে মতায় এলে ভূমি বিরোধ নিস্পত্তি কমিশন আইন সংশোধন করে পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি সমস্যা চিরতরে দূর করা হবে। সমাবেশ থেকে প্রধানমন্ত্রী ‘চুক্তি বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতা রায় আগামী নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট’ দেওয়ার আহ্বান জানান।
অন্যদিকে, পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় (সন্তু) লারমা ‘ভূমি আগ্রাসন ও জুম্ম (পাহাড়ি) জাতি বিলুপ্তির ষড়যন্ত্র প্রতিরোধ’ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ার সুযোগে পাহাড়ে এখনো চুক্তি লঙ্ঘন করে প্রশাসন কর্তৃক অস্থানীয় ও বহিরাগতদের কাছে জুম্মদের জুম ভূমি ইজারা দেওয়া, নানা অজুহাতে জুম্মদের তাদের চিয়ারত জায়গা-জমি থেকে উচ্ছেদ করার ষড়যন্ত্রমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করাসহ চুক্তিপরিপন্থী নানা কার্যক্রম হাতে নেয়া ইত্যাদি অব্যাহত রয়েছে। এসব হীন কর্মকাণ্ডে তথাকথিত সমঅধিকার আন্দোলন, পার্বত্য যুব ফ্রন্ট, পার্বত্য নাগরিক পরিষদ, বাঙালি ছাত্র পরিষদ ইত্যাদি ভূঁইফোড় সাম্প্রদায়িক সংগঠনগুলোকে প্রত্যভাবে মদদ দিয়ে চলেছে প্রশাসন এবং নিরাপত্তা বাহিনীর একাংশ। পাহাড়ে ভূমি আগ্রাসন হচ্ছে জুম্ম জাতি বিলুপ্তির ষড়যন্ত্রেরই অংশ।
গত ০১ ডিসেম্বর রবিবার রাঙামাটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাবেক গেরিলা নেতা সন্তু লারমা এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার দু-দু‘টি মেয়াদে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।
১৬ বছরেও চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণ হিসেবে সন্তু লারমা আরো বলেন, প্রথমত, চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারের আন্তরিকতা ও সদিচ্ছার অভাব এবং নীতি-নির্ধারকদের উগ্র জাতীয়তাবাদী, অগণতান্ত্রিক ও সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি, দ্বিতীয়ত, ‘উপজাতীয় অধ্যুষিত অঞ্চলের’ বৈশিষ্ট্য সংরণের পরিবর্তে পার্বত্য চট্টগ্রামকে মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে পরিণত করার ষড়যন্ত্র, তৃতীয়ত, বৈরী ভাবাপন্ন ও চুক্তি বিরোধী আমলাতন্ত্র, প্রশাসনিক ও আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থাপনা, চতুর্থত, পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা কর্তৃত্ব ও পাঁচ লাধিক সেটেলার বাঙালিদের মাধ্যমে হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলকরণ এবং সর্বোপরি, চুক্তি বিরোধী ইউপিডিএফ-এর অব্যাহত সশস্ত্র সন্ত্রাস এবং জাতীয় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেকার স্থানীয় জুম্ম নেতৃত্বের লেজুড়বৃত্তি ও দালালিপনা।
বিশিষ্ট পার্বত্য বিশ্লেষক ও চাকমা রাজা ব্যরিস্টার দেবাশীষ রায় শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ার প্রধান অন্তরায় হিসেবে ভূমি সমস্যার সমাধানের উদ্যোগহীনতাকে চিহ্নিত করেন।
এই লেখকের সঙ্গে আলাপকালে চাকমা রাজা বলেন, ১৯৯৭ সালে চুক্তি স্বারের পর থেকে কিছু ব্যতিক্রমী ঘটনা ছাড়া পার্বত্যাঞ্চলে এখনো পাহাড়ি জনগণকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। শুধু তাই-ই নয়, দিন দিন পরিস্থিতি আরো অবনতির দিকে যাচ্ছে। কোনো কোনো েেত্র সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীও এসব উচ্ছেদের সঙ্গে জড়িত। পার্বত্য ভূমি কমিশন আইন-২০০১ বাস্তবায়িত না হওয়া এর অন্যতম কারণ। সৈয়দ সাজেদা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন এ সংক্রান্ত একটি কমিটিও গঠিত হয়েছিল। পার্বত্য ভূমি কমিশনকে সক্রিয় করতে আইনের একটি খসড়াও তৈরি হয়েছিলো। কিন্তু সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্রের একাংশ (লবিস্ট গ্রুপ) একে এখন হিমাগারে পাঠিয়েছে। ব্যরিস্টার দেবাশীষ অভিযোগ করে বলেন, উপরন্তু সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয় ১৯৯৭ সালের চুক্তির মূল চেতনার পরিপন্থী কাজ করে চলেছে।
এছাড়া তিনি শান্তিচুক্তি পুরোপুরি বাস্তবায়নে ভারত প্রত্যাগত ও পার্বাঞ্চলের অভ্যন্তরীণ পাহাড়ি শরণার্থী পুনর্বাসন, পার্বত্য চট্টগ্রামকে বেসামরিকীকরণ, পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদ ও জেলা পরিষদসমূহকে সক্রিয় করা, পাহাড়িদের জন্য ন্যায় বিচার, সুশাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, আঞ্চলিক দলগুলোর ভাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধ– ইত্যাদি বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।
পার্বত্য নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান এই লেখককে বলেন, সরকারগুলোর সদিচ্ছার অভাবে শান্তিচুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো বাস্তবায়িত হয়ইনি, উপরন্তু পার্বত্যাঞ্চলে ‘স্থায়ী শান্তি এবং উন্নয়নে পাহাড়িদের অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠা’ — এই মূল চেতনাটিই নষ্ট করে ফেলা হয়েছে।
তিনি বলেন, এ কারণে ভূমি কমিশনের পাশাপাশি চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটি ও শরণার্থী পুনর্বাসন বিষয়ক টাস্কফোর্স কখনোই পুরোদমে সক্রিয় হয়নি। পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন জেলা পরিষদ নির্বাচনও দেওয়া হচ্ছে না। ২৪ বছর ধরে তিনটি জেলা পরিষদ পরিচালিত হচ্ছে সরকারগুলোর পছন্দের ব্যক্তি দিয়ে। স্থানীয় এসব প্রতিষ্ঠানে জনপ্রতিনিধিত্ব নেই; জবাবদিহিতাও নেই। সব মিলিয়ে শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের কোনো সুফল পাহাড়ি-বাঙালির ঘরে এখনো পৌঁছেনি। দিন দিন জটিলতর হচ্ছে পার্বত্য সমস্যা।
পাদটিকা:
০১. দৃশ্যতই পাহাড়ি-বাঙালি জনসংখ্যার ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার সুবাদে ক্রমেই পাহাড়ে এখন বাঙালি ভোটারের সংখ্যা বাড়ছে। এ কারণেই কোন সরকারই শান্তিচুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো বাস্তবায়ন, তথা এর প্রধান শর্ত ভূমি কমিশনকে সক্রিয় করে সেখানের জায়গা-জমির বিরোধ মেটাতে আগ্রহী নয়। কারণ, এতে ‘ক্ষুব্ধ’ বাঙালি ভোট হারানোর আশংকা আছে;
০২. পাহাড়ের প্রধান কর্তৃত্বকারী সংস্থা সেনা বাহিনীও পার্বত্য সমস্যাকে জিইয়ে রাখতে আগ্রহী। কারণ, শান্তিচুক্তির পক্ষে-বিপক্ষের পাহাড়িদের অন্তর্দলীয় সশস্ত্র সংঘাতের সুযোগে পার্বত্যাঞ্চলে সেনা উপস্থিতির বৈধতা সৃষ্টি হয়;
০৩. ‘আদিবাসী’ অভিধাও সামরিক আমলাতন্ত্রের কারণে সরকার পক্ষ মানতে রাজি নয়। কারণ, জাতিসংঘের সনদ মেনে ‘বাংলাদেশে আদিবাসী আছে’ স্বীকার করার অর্থ হচ্ছে সক্রিয় সেনা উপস্থিতিতে পাহাড়ে আদিবাসীর মানবাধিকার লংঘনের কথা স্বীকার করে নেওয়া। সেক্ষেত্র জাতিসংঘ শান্তি মিশন থেকে বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর বাদ পড়ার আশঙ্কা আছে; উপরন্তু তখন পার্বত্যাঞ্চল সরাসরি জাতিসংঘ শান্তি মিশনের নজরদারির ভেতরে থাকবে — এমন আশংকাও রয়েছে।
০৪. সব মিলিয়ে শান্তিচুক্তি, তথা পার্বত্য চট্টগ্রাম একটি দীর্ঘতর শুভঙ্করের ফাঁকিতে পড়েছে। এ অবস্থায় কারো শুভ কামনা বা দয়া-দক্ষিণায় নয়, বরং সিঁধু-কানহু-বীরসা মুণ্ডা-এমএন লারমা-কল্পনা চাকমা-আলফ্রেড সরেন-পিরেন স্নাল-চলেশ রিছিলের প্রদর্শিত সংগ্রামী পথই এই অচলাবস্থা থেকে মুক্তির একমাত্র পথ। প্রকৃত অর্থে এটিই আদিবাসীর মুক্তির একমাত্র পথ।
০২. পাহাড়ের প্রধান কর্তৃত্বকারী সংস্থা সেনা বাহিনীও পার্বত্য সমস্যাকে জিইয়ে রাখতে আগ্রহী। কারণ, শান্তিচুক্তির পক্ষে-বিপক্ষের পাহাড়িদের অন্তর্দলীয় সশস্ত্র সংঘাতের সুযোগে পার্বত্যাঞ্চলে সেনা উপস্থিতির বৈধতা সৃষ্টি হয়;
০৩. ‘আদিবাসী’ অভিধাও সামরিক আমলাতন্ত্রের কারণে সরকার পক্ষ মানতে রাজি নয়। কারণ, জাতিসংঘের সনদ মেনে ‘বাংলাদেশে আদিবাসী আছে’ স্বীকার করার অর্থ হচ্ছে সক্রিয় সেনা উপস্থিতিতে পাহাড়ে আদিবাসীর মানবাধিকার লংঘনের কথা স্বীকার করে নেওয়া। সেক্ষেত্র জাতিসংঘ শান্তি মিশন থেকে বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর বাদ পড়ার আশঙ্কা আছে; উপরন্তু তখন পার্বত্যাঞ্চল সরাসরি জাতিসংঘ শান্তি মিশনের নজরদারির ভেতরে থাকবে — এমন আশংকাও রয়েছে।
০৪. সব মিলিয়ে শান্তিচুক্তি, তথা পার্বত্য চট্টগ্রাম একটি দীর্ঘতর শুভঙ্করের ফাঁকিতে পড়েছে। এ অবস্থায় কারো শুভ কামনা বা দয়া-দক্ষিণায় নয়, বরং সিঁধু-কানহু-বীরসা মুণ্ডা-এমএন লারমা-কল্পনা চাকমা-আলফ্রেড সরেন-পিরেন স্নাল-চলেশ রিছিলের প্রদর্শিত সংগ্রামী পথই এই অচলাবস্থা থেকে মুক্তির একমাত্র পথ। প্রকৃত অর্থে এটিই আদিবাসীর মুক্তির একমাত্র পথ।
___
সংযুক্ত: ভিডিও ক্লিপিং
‘শান্তিচুক্তি বিরোধী সন্ত্রাসী গ্রুপ ইউপিডিএফ সেনা বাহিনীর সৃষ্টি। তাদের ওপর থেকে সেনা সমর্থন অনেকটা সরে গেছে। এ কারণে তারা এখন চুক্তি বাস্তবায়নের কথা বলছে। …আমরা সরকারকে বার বার বলার পরেও তারা যেহেতু ইউপিডিএফকে দমনে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না, তাই শান্তিচুক্তির বাধা অপসারণে আমরা ২০০০ সাল থেকে ইউপিডিএফ-র বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করেছি’– সন্তু লারমা, সাবেক গেরিলা নেতা, ইন্ডেপেন্ডেন্ট টিভি’কে দেওয়া সাক্ষাতকারে।
সংযুক্ত: ভিডিও ক্লিপিং
‘শান্তিচুক্তি বিরোধী সন্ত্রাসী গ্রুপ ইউপিডিএফ সেনা বাহিনীর সৃষ্টি। তাদের ওপর থেকে সেনা সমর্থন অনেকটা সরে গেছে। এ কারণে তারা এখন চুক্তি বাস্তবায়নের কথা বলছে। …আমরা সরকারকে বার বার বলার পরেও তারা যেহেতু ইউপিডিএফকে দমনে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না, তাই শান্তিচুক্তির বাধা অপসারণে আমরা ২০০০ সাল থেকে ইউপিডিএফ-র বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করেছি’– সন্তু লারমা, সাবেক গেরিলা নেতা, ইন্ডেপেন্ডেন্ট টিভি’কে দেওয়া সাক্ষাতকারে।
No comments:
Post a Comment