উন্নয়ন, উন্নয়ন, উন্নয়ন
না ছাই,
রামপালে কাপ্তাই লেকের
কান্না শুনতে পাই...
চলেছে লং মার্চ। ২৪ সেপ্টেম্বর সকাল ১১টায় প্রেসক্লাবে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে শুরু হলো ছাত্র-জনতার বিশাল বহরের রামপাল অভিমুখে যাত্রা। সুন্দরবন রক্ষার দৃঢ় প্রত্যয় সকলের চোখে-মুখে। মাথার ওপরে গনগনে সূর্য। খর রোদ, ভ্যাপসা গরম।
লং মার্চের পুরো যাত্রা পথের তথ্য সংবাদ কাভারের জন্য আমি চলেছি বহরের সঙ্গে। প্রেসক্লাবে একে-তাকে ফোন, খোঁজাখুজি করেও মিডিয়ার গাড়িটি খুঁজে পাইনি। পরে জেনেছি, লং মার্চের মিডিয়া টিমের গাড়িটি শ্যামলীতে আটকা পড়েছে।
আমার তখন দিশেহারা অবস্থা। দু-দুটি ভাড়ি ব্যাগ নিয়ে আগুন গরমের ভেতর আমার পক্ষে হেঁটে যাওয়া সম্ভব নয়। তথ্য সংবাদ সংগ্রহ ও লেখার জন্য শাররীক সুস্থ্যতা এবং বেশ খানিকটা মস্তিস্কের শীতলতা একান্ত জরুরি। কারণ লেখালেখির কাজটি পরিশ্রমের।
আমার ব্যাগ দুটির ওজনও বেশ। একটিতে আট-দশদিনের কাপড়-চোপড় [৪০০ কিমি দীর্ঘ ৫ দিনের লং মার্চ শেষে সুন্দরবন দেখার ইচ্ছে]; আরেকটিতে আমার নেটবুক ও টুকিটাকি। বুদ্ধি করে জাতীয় কমিটির একটি ব্যানার লাগানো পিক-আপে কাপড়ের ব্যাগটি তুলে দেই। সেটিতে স্বেচ্ছাসেবী বেশ কয়েকজন মাইক লাগিয়ে অবিরাম শ্লোগান দিচ্ছেন। সেখানের পরিচিত একটি মুখ আমাকে সাহস জোগায়। নাম বিস্তৃত মেয়েটি বলে, ভাইয়া, আপনি চিন্তা করবেন না। যখনই চাইবেন, তখনই আপনার ব্যাগ পেয়ে যাবেন।
প্রেসক্লাব থেকে লং মার্চের যাত্রা শুরু হয়ে যায়। বিভৎস তাপদাহ উপেক্ষা করে ছাত্র-জনতার বিশাল মিছিল ঢাকার পথে এগিয়ে চলেছে। অবিরাম শ্লোগান: চলো রে চলো/ লং মার্চ, লং মার্চ/ ঢাকা থেকে সুন্দরবন/ লং মার্চ, লং মার্চ...ইত্যাদি। এরই মধ্যে ঘেমেনেয়ে একাকার। মিছিল শাহবাগ হয়ে এলিফ্যান্ট রোড হয়ে সায়েন্স ল্যাবরেটরি পৌঁছালে আমি একটি অগ্রবর্তী বাহিনীকে পাই। তারা ‘উদীচী’র ব্যানারে ছাদ খোলা একটি পিক আপ ভ্যানে লং মার্চের সমর্থনে গান গাইতে গাইতে চলেছে। আমি পিক আপটিতে ওঠার জন্য মরিয়া হয়ে ছুট লাগাই। কোন কারণে গাড়িটির গতি খানিকটা মন্থর হলে সেটি আমার জন্য সহায়ক হয়। গাড়ির কাছাকাছি পৌঁছাতেই সেখান থেকে সাংস্কৃতিক দলের কর্মীরা হাত বাড়িয়ে আমাকে টেনে তোলেন। ...
অপরিচিত একদল ছেলে-মেয়ের মধ্যে এসে পড়ায় নিজেকে খানিকটা রবাহুত বলে মনে হয়। গুটিশুটি মেরে এক কোনে বসে পড়ি। ব্যাগ থেকে একটি টুপি বের করে মাথা বাঁচানোর চেষ্টা করি। লোহার পাটাতন আগুনের মতো গরম হয়ে উঠেছে ততোক্ষণে। পুরো শরীর ঘামে ভিজে একসা। ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে ছোট্ট একটি চুমুক দিতে না দিতেই আশেপাশের ছেলেমেয়েরা হাত বাড়ায়। মুহূর্তেই পুরো বোতল খালি। লং মার্চের বহর ততোক্ষণে আসদ গেট পৌঁছেছে। বহরের একটি অংশ ততোক্ষণে মানিক মিয়া এভিনিউ ধরে যাত্রা শুরু করেছে। আরেকটি অংশ আমাদের পিক আপটিকে অনুসরণ করে।
আমার জড়তা পিক আপ ভ্যানের গানের দলটিই কাটাতে সাহায্য করে। একে একে কচি মুখগুলো আমার সঙ্গে পরিচিত হয়ে। সিরাজগঞ্জের স্মরণ নামে একটি ছেলের কথা মনে পড়ছে। এসএসসি পড়ুয়া ছেলেটির গানের পাশাপাশি নাটকের ঝোঁক। বাড়িতে নাটকের ওয়ার্কশপের নাম করে বেরিয়ে পড়েছে লং মার্চের বহরে। দলনেত্রী প্রীতির কথায় জানা গেল, এটি তার পঞ্চম লং মার্চ। মাঝ বয়সী বাসদের একজন সার্বক্ষণিক কর্মী বললেন, জাতীয় কমিটির সাত-সাতটি লং মার্চে চট্টগ্রাম থেকে এসে যোগ দিয়েছেন তিনি। পুরো যাত্রা পথে নানান রাজনৈতিক কথা, আলাপচারিতায় তিনি যথেষ্ট সঙ্গ দিয়েছেন আমাকে। নোটপত্র ঘেঁটেও তার নামটি কিছুতেই উদ্ধার করতে পারছি না বলে তার কাছে মনে মনে ক্ষমা প্রার্থণা করা ছাড়া উপায়কি।
আমি বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করি, গুমট গরম, পানি শুন্যতা, ছোট্ট পিক আপে গাদাগাদি করে ওঠা একদল সাংস্কৃতিক কর্মী -- তাদের কোন কিছু নিয়ে কোন অভিযোগ নেই। তারা প্রত্যেকেই হাসি-ঠাট্টা করতে করতে যুথবদ্ধতায় গেয়ে চলেন একের পর এক সদ্য লেখা গান। কেউ ঢোল, কেউ বা হারমোনিয়াম বা বাঁশিতে সঙ্গত করেন। মাঝে মাঝে শ্লোগানও দেয় দলটি। কোথাও ভীড় দেখলে তারা পিক আপটি থামিয়ে লিফলেট বিলি করেন। মাইকে বর্ণনা করেন লং মার্চের যৌক্তিকতা।
এরই মাঝে বন্ধু বরেষু, গণ সংহতির জোনায়েদ সাকী, ফিরোজ আহমেদ, আবুল হাসান রুবেলসহ বেশ কয়েকজন টেলিফোনে আমার খোঁজ খবর নেন। বলা ভালো, তাদের উৎসাহেই আমার লং মার্চের বহরে যোগ দেওয়া। শ্রদ্ধেয় আনু মুহাম্মদ ভাই তো বটেই। ...
‘উদীচী’র গানের দলটি আমাকে প্রেরণা জোগায়। মনে পড়ে যায়, ২৫ বছর আগে আমিও আগুন ঝরা দিনগুলোতে লিড শ্লোগানার হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছি নব্বইয়ের ছাত্র-গণ অভ্যুত্থানে। সে এক রূপকথার দিন। আমার ভেতর থেকে একে একে গরম ইত্যাদি নিয়ে অভিযোগসমূহে উবে যেতে থাকে। নিজেকে বোঝাই, বিপ্লব তোমার নাম। জেলখানা থেকে সাবেক নকশাল নেতা পিতা আজিজ মেহের রেখেছেন এই নাম। তুমি পারবে, পারবেই। ...
গাড়িটি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় পৌঁছাতেই আমি টুক করে নেমে পড়ি। আমার জানা ছিল, সেখানে খাবার বিরতি। অর্থাৎ বেশ খানিকটা অবসর। আমি একটি ট্যাপ থেকে হাতমুখ ধুয়ে পানির বোতলটি আবার ভরে নিয়ে ওরস্যালাইন গুলে খাই। খানিকটা বিশ্রামের পর ব্যাগ থেকে নেটবুক টেনে নিয়ে নিশব্দে অভ্যস্ত হাতে দ্রুত টাইপ করতে থাকি। অনলাইন ভার্সনের জন্য একটি তাজা খবর মেইল করি।
এরপর ভীড়ের ভেতর এলোমেলো ঘুরতে ঘুরতে আবিস্কার করি সাংবাদিক সহকর্মী মলয় সাহাকে। পুরো যাত্রাপথে মলয় দা’ই হয়ে ওঠে আমার সিনিয়র বন্ধু ও সহচর।...
__
ছবি: লেখক।
–
সংযুক্ত: ঢাকা-রামপাল লং মার্চ নিয়ে এই লেখকের কয়েকটি প্রতিবেদন পড়া যাবে নীচের লিংকগুলোতে।
‘সুন্দরবন ঘোষণা’য় শেষ হলো লংমার্চ ১১ অক্টোবরের মধ্যে প্রকল্প বাতিল, নইলে প্রতিরোধ ..
fb.me/1QXnlQTP6
fb.me/1QXnlQTP6
পিছু হটল প্রশাসন, লংমার্চ রামপাল যাচ্ছে সুন্দরবন রক্ষার স্বার্থে রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ… fb.me/1nIb3ShJE
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র: লংমার্চ রামপালে ঢুকতে দেবে না প্রশাসন
… fb.me/1xg1A24aE
… fb.me/1xg1A24aE
LongMarch reached at Jessor; #SaveSundarban #SaveBangladesh fb.me/6pg0B4VdQ
রামপাল অভিমুখী লংমার্চকে পথে পথে সংবর্ধনা আ. লীগের পাল্টা কর্মসূচি সংঘর্ষের আশঙ্কা …
fb.me/1IEBzJdl2
fb.me/1IEBzJdl2
সুন্দরবন আমাদের বাঁচায়। আসুন, সুন্দরবন রক্ষা করে আমরা তার ঋণ শোধ করি।…
fb.me/Kn9nkm8Q
fb.me/Kn9nkm8Q
No comments:
Post a Comment