"এতটা বয়স চলে গেল, তবু কী আশ্চর্য, আজও কি জানলাম,
চড়ুইয়ের ঠোঁটে কেন এত তৃষ্ণা? খড়ের আত্মায় কেন এত অগ্নি, এতটা দহন? গোলাপ নিজেই কেন এত কীট, এত মলিনতা নিয়ে তবুও গোলাপ? "...
খুব ছোট বেলায় একবার দাদুবাড়িতে বেড়াতে গিয়েছি। তখন আমার বয়স কত আর হবে, ধরা যাক, ছয় কি সাত। দাদু বাড়ি হচ্ছে সিরাজগজ্ঞের এক প্রত্যন্ত গ্রামে। তিনি ছিলেন ব্রিটিশের এক জাঁদরেল দারোগা। তার বাড়িটা খুব সুন্দর, একবারে ব্রিটিশ আমলের লাল ইটের খিলান করা একতলা পাকাবাড়ি। বাড়ির সামনে দিগন্তজোড়া সর্ষে ফুলের ক্ষেত।
এক অলস দুপুরে সবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেলাম সেই সর্ষেফুলের ক্ষেতে। জীবনে সেই প্রথম সর্ষে ফুল দেখা। আমি তো একসঙ্গে এতো ফুলের সমারোহ দেখে খুশীতে একেবারে আত্নহারা। আর না চাইতেই হলুদ হলুদ ফুলের রেনু লেগে যাচ্ছে আমার চোখে, মুখে, এমনকি নীল ফানেলের শার্টেও।...
ভাবলাম, কিছু ফুল ছিঁড়ে পকেটে করে নিয়ে যাই, বাড়ির সবাইকে দেখাবো আমার এই মহা আবিস্কার।
হঠাৎ কোথা থেকে যেনো বোমারু বিমানের মতো উড়ে এলো আশ্চর্য সুন্দর ঝাঁক ঝাঁক সোনালী রঙের কিছু পোকা। সেইসব পোকা দেখেও আমি ভীষণ খুশী। আবার ভাবলাম, এসব পোকাও কিছু ধরে নিয়ে যাই, বাসার সবাইকে দেখাবো।
অনায়াসে ধরেও ফেললাম কয়েকটাকে, পকেটে পুরতে থাকি সে সব আবিস্কার।
আসলে সেই সব পোকা ছিলো মৌমাছি ঝাঁক, হুলে যার তীব্র বিষ!
এদিকে একপাশে দাঁড়িয়ে আমার কাণ্ড কারখানা অবাক হয়ে দেখছিলো এক হতদরিদ্র কৃষাণ। সে ছিলো দাদুবাড়ির বাঁধা দিনমজুর, কামলা আর কি।
আমাকে কিন্তু সে ঠিকই চিনেছে, আমি শহর থেকে বেড়াতে আসা এক পুঁচকে, ডাক সাইটের মিজান দারোগার নাতি -- ইত্যাদি ।
সেই কামলা এক দৌড়ে আমাকে মৌমাছির কবল থেকে 'উদ্ধার' করে কোলে করে পৌঁছে দেয় দাদু বাড়ি।
বোকা চাষা অতি ক্ষমতাধর গ্রাম্য জোতদারের একেবারে শেষ উত্তরসূরীকে চিনেছিলো ঠিকই। কিন্তু ব্যাটা খবর রাখেনি হায়, বালক মনের তীব্র উল্লাসের!
ধূসর শৈশবের সেই স্বপ্নমাখা টুকরো স্মৃতির পাজল, এই আমি এখন এত বছর পর আবার জোড়া দিতে বসেছি। জাগতিক বিবিধ কর্দমাক্ত নোংরামি+বিবমিষার বাইরে আমি সমস্ত মনোসংযোগ সংশ্লেষিত করেছি, গ্ল্যাক্সো বেবী মিল্ক, ওভালটিন হট চকলেট, আর ক্রিম ক্র্যাকার বিস্কুটের সৌরভমাখা আনন্দময় দিন ফিরিয়ে আনবো বলে।...
__
ছবি: গোলাপখেকো কচ্ছপ, রয়টার্স।
চড়ুইয়ের ঠোঁটে কেন এত তৃষ্ণা? খড়ের আত্মায় কেন এত অগ্নি, এতটা দহন? গোলাপ নিজেই কেন এত কীট, এত মলিনতা নিয়ে তবুও গোলাপ? "...
খুব ছোট বেলায় একবার দাদুবাড়িতে বেড়াতে গিয়েছি। তখন আমার বয়স কত আর হবে, ধরা যাক, ছয় কি সাত। দাদু বাড়ি হচ্ছে সিরাজগজ্ঞের এক প্রত্যন্ত গ্রামে। তিনি ছিলেন ব্রিটিশের এক জাঁদরেল দারোগা। তার বাড়িটা খুব সুন্দর, একবারে ব্রিটিশ আমলের লাল ইটের খিলান করা একতলা পাকাবাড়ি। বাড়ির সামনে দিগন্তজোড়া সর্ষে ফুলের ক্ষেত।
এক অলস দুপুরে সবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেলাম সেই সর্ষেফুলের ক্ষেতে। জীবনে সেই প্রথম সর্ষে ফুল দেখা। আমি তো একসঙ্গে এতো ফুলের সমারোহ দেখে খুশীতে একেবারে আত্নহারা। আর না চাইতেই হলুদ হলুদ ফুলের রেনু লেগে যাচ্ছে আমার চোখে, মুখে, এমনকি নীল ফানেলের শার্টেও।...
ভাবলাম, কিছু ফুল ছিঁড়ে পকেটে করে নিয়ে যাই, বাড়ির সবাইকে দেখাবো আমার এই মহা আবিস্কার।
হঠাৎ কোথা থেকে যেনো বোমারু বিমানের মতো উড়ে এলো আশ্চর্য সুন্দর ঝাঁক ঝাঁক সোনালী রঙের কিছু পোকা। সেইসব পোকা দেখেও আমি ভীষণ খুশী। আবার ভাবলাম, এসব পোকাও কিছু ধরে নিয়ে যাই, বাসার সবাইকে দেখাবো।
অনায়াসে ধরেও ফেললাম কয়েকটাকে, পকেটে পুরতে থাকি সে সব আবিস্কার।
আসলে সেই সব পোকা ছিলো মৌমাছি ঝাঁক, হুলে যার তীব্র বিষ!
এদিকে একপাশে দাঁড়িয়ে আমার কাণ্ড কারখানা অবাক হয়ে দেখছিলো এক হতদরিদ্র কৃষাণ। সে ছিলো দাদুবাড়ির বাঁধা দিনমজুর, কামলা আর কি।
আমাকে কিন্তু সে ঠিকই চিনেছে, আমি শহর থেকে বেড়াতে আসা এক পুঁচকে, ডাক সাইটের মিজান দারোগার নাতি -- ইত্যাদি ।
সেই কামলা এক দৌড়ে আমাকে মৌমাছির কবল থেকে 'উদ্ধার' করে কোলে করে পৌঁছে দেয় দাদু বাড়ি।
বোকা চাষা অতি ক্ষমতাধর গ্রাম্য জোতদারের একেবারে শেষ উত্তরসূরীকে চিনেছিলো ঠিকই। কিন্তু ব্যাটা খবর রাখেনি হায়, বালক মনের তীব্র উল্লাসের!
ধূসর শৈশবের সেই স্বপ্নমাখা টুকরো স্মৃতির পাজল, এই আমি এখন এত বছর পর আবার জোড়া দিতে বসেছি। জাগতিক বিবিধ কর্দমাক্ত নোংরামি+বিবমিষার বাইরে আমি সমস্ত মনোসংযোগ সংশ্লেষিত করেছি, গ্ল্যাক্সো বেবী মিল্ক, ওভালটিন হট চকলেট, আর ক্রিম ক্র্যাকার বিস্কুটের সৌরভমাখা আনন্দময় দিন ফিরিয়ে আনবো বলে।...
__
ছবি: গোলাপখেকো কচ্ছপ, রয়টার্স।
No comments:
Post a Comment