প্রাক-কথন, ক: উভ
প্রাক-কখন, খ:একটি গুরুতর হত্যা মামলার এজহার
___________
০১. তুমি অফিসকে বরাবরই গ্রাম বলে জেনে এসেছ।
না, শষ্য-শ্যামলা সুজলা-সুফলা গ্রাম বা এ সব গ্রামের সহজ-সরল মানুষের কথা হচ্ছে না। এখানে বলা হচ্ছে, শরৎচন্দ্র চট্টপাধ্যায় কথিত নানান গল্পকথায় যে গ্রাম্য জীবনের কুটিল মানুষের জটিল জীবন-কথা ফুটে উঠেছে, তারই কথা।
এখন মিডিয়া পাড়ায়, অফিসে অফিসে ঢুকে পড়েছে এই সব গ্রাম্যতা, আর ভিলেজ পলেটিক্স। একেকটি বড় মিডিয়া হাউজ মানেই তোমার ভাষায়, একেকটি বড় গ্রাম।
এখানেও গ্রাম্য জমিদার, জোতদার, উমেদার, নটি, নর্তকী, পাইক, বরকন্দাজ, পেয়াদা --সবই আছে। আছে বাগান বাড়ি, জলসা ঘর, হাওয়া ঘর, রঙিলা দালান-- এমন কি আছেন রাজলক্ষীর মতো মক্ষীরানীও।
আর নিজস্ব ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখতে গ্রামের বড় বড় মাথারা নানান কূট-কাচালি চালেন। তাদের মোসাহেবরা শব্দলাঠি নিয়ে প্রায়শই আবির্ভূত হন লাঠিয়ালের ভূমিকায়। আবার কখনো হানা দেয় ঠগি বাহিনী। তখন মেধা নয়, শক্তিমত্তা, অর্থবিত্ত এবং ঘড়াভর্তি তৈলকেই মহাপ্রভু বলে ভ্রম হয়।
০২. অফিস নিয়ে গ্রাম সম্পর্কিত তোমার ওইসব ধ্যান-ধারণা অবশ্য অনেকদিন ধরে একটু একটু করে তোমার ভেতর মূর্ত হয়েছে। আর ব্লগবারান্দায় হোসাইন তার ব্যানারে লিখেছিলেন-- পাগলা হোসাইনের বস্তিবাস।
এসব দেখে তুমি ভাবিত হও। আরে তাই তো! এখন অফিস মানেই তোমার মনে হয় এই রকম বস্তিবাস। অর্থাৎ খানিকটা গ্রাম, খানিকটা শহর। গ্রাম্য কূটনামী+শহুরে পাকনামী।...
বস্তিতে যেমন বিজলি বাতি, ওয়াসার কলের লাইন থাকে, আবার একই সঙ্গে থাকে গ্রামীণ জীবনের লাউয়ের মাচা, এক চিলতে উঠান-- অফিস ভবনও এখন তোমার কাছে একেকটি বস্তি। এখানে বস্তি জীবনের সবটুকু নোংরামি, প্যাঁচপ্যাঁচে কাদা, অন্ধকার, হীনমন্যতা, মাদক, দেহ ব্যবসা ইত্যাদি মিলেমিশে কি চমৎকার আবহই না তৈরি করছে!
এখন যত বড় মিডিয়া হাউজ...সেখানে ততটাই বিজলি বাতির ঝলকানি আর বস্তির যা কিছু ইতরামি, তার সবই একসঙ্গে এসে অপবিন্যাস্ত হয়েছে নিপুনভাবে-- এমনটাই আজকাল তুমি ভাবতে শিখেছো।
তুমি সহজেই তুলনা দিতে পারো এসব, এক সময় খুব কাছ থেকে কিছুটা দেখা টিটিপাড়ার রেল লাইন-বস্তি। আর দমিনেক লা পিয়েরের ‘আনন্দনগর’ এ বলা অন্য এক নরক জীবনের সঙ্গে। সেই যে রিকশাওয়ালার জীবন জীম্মি করতে করতে বস্তির শেঠ-বাহিনী জীম্মি করে ফেললো তার কি কোমল কিশোরীটিকেও!
০৩. তুমি এক সময় ভাবতে, তথ্য-সাংবাদিকতার দারুণ সব উৎকর্ষতার কথা। ভাবতে স্টার রিপোর্টার মার্ক টালি, সুবীর ভৌমিক, আতাউস সামাদ, আর সাইমন ড্রিং! আর এখন?
এখন শুধুই লাইট, ক্যামেরা, অ্যাকশন! প্যাকেজ, প্যানেল, ফুটেজ, উভ, ইন-ভিশন আর উভ+সিংক!
টিকে থাকাও তো এক যোগ্যতা হে! স্ট্রাগল ফর সার্ভাইভ-- অস্তিত্ববাদের সংগ্রাম! আমি আছি, ইহা অপেক্ষা সত্যি নাই।
কিন্তু দেখো, তুমি ভদ্র, উচ্চস্বরে কথা বলো না, তুমি অহিংস; অর্থাৎ তুমি বেশ খানিকটা ঊন, যোগ্যতায় খাটো, প্রণয় বা পাথর ছোঁড়াছুড়ির খেলায় তুমি অনেকটা পথ পিছিয়ে আছো বটে!
না হে ...সেই শৈশবে সাবেক নকশালাইট পিতা আজিজ মেহেরের কথা শুনে এতো বছর ধরে প্রতি সকালে দাঁত ব্রাশ করার সময় তোমাকে যে এতোটা সেল্যুট দিয়ে এসেছি, এখন আমি সব কিছু একেবারে ফিরিয়ে নিচ্ছি। তারচেয়ে তুমি বরং মরো, তুমি কচু খাও। হে ভগবান, একটা পিলে যাক পেটে ওর ঢুকে!...
__
ছবি: আলেক্সান্দ্রভ, আন্তর্জাল।
প্রাক-কখন, খ:একটি গুরুতর হত্যা মামলার এজহার
___________
০১. তুমি অফিসকে বরাবরই গ্রাম বলে জেনে এসেছ।
না, শষ্য-শ্যামলা সুজলা-সুফলা গ্রাম বা এ সব গ্রামের সহজ-সরল মানুষের কথা হচ্ছে না। এখানে বলা হচ্ছে, শরৎচন্দ্র চট্টপাধ্যায় কথিত নানান গল্পকথায় যে গ্রাম্য জীবনের কুটিল মানুষের জটিল জীবন-কথা ফুটে উঠেছে, তারই কথা।
এখন মিডিয়া পাড়ায়, অফিসে অফিসে ঢুকে পড়েছে এই সব গ্রাম্যতা, আর ভিলেজ পলেটিক্স। একেকটি বড় মিডিয়া হাউজ মানেই তোমার ভাষায়, একেকটি বড় গ্রাম।
এখানেও গ্রাম্য জমিদার, জোতদার, উমেদার, নটি, নর্তকী, পাইক, বরকন্দাজ, পেয়াদা --সবই আছে। আছে বাগান বাড়ি, জলসা ঘর, হাওয়া ঘর, রঙিলা দালান-- এমন কি আছেন রাজলক্ষীর মতো মক্ষীরানীও।
আর নিজস্ব ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখতে গ্রামের বড় বড় মাথারা নানান কূট-কাচালি চালেন। তাদের মোসাহেবরা শব্দলাঠি নিয়ে প্রায়শই আবির্ভূত হন লাঠিয়ালের ভূমিকায়। আবার কখনো হানা দেয় ঠগি বাহিনী। তখন মেধা নয়, শক্তিমত্তা, অর্থবিত্ত এবং ঘড়াভর্তি তৈলকেই মহাপ্রভু বলে ভ্রম হয়।
০২. অফিস নিয়ে গ্রাম সম্পর্কিত তোমার ওইসব ধ্যান-ধারণা অবশ্য অনেকদিন ধরে একটু একটু করে তোমার ভেতর মূর্ত হয়েছে। আর ব্লগবারান্দায় হোসাইন তার ব্যানারে লিখেছিলেন-- পাগলা হোসাইনের বস্তিবাস।
এসব দেখে তুমি ভাবিত হও। আরে তাই তো! এখন অফিস মানেই তোমার মনে হয় এই রকম বস্তিবাস। অর্থাৎ খানিকটা গ্রাম, খানিকটা শহর। গ্রাম্য কূটনামী+শহুরে পাকনামী।...
বস্তিতে যেমন বিজলি বাতি, ওয়াসার কলের লাইন থাকে, আবার একই সঙ্গে থাকে গ্রামীণ জীবনের লাউয়ের মাচা, এক চিলতে উঠান-- অফিস ভবনও এখন তোমার কাছে একেকটি বস্তি। এখানে বস্তি জীবনের সবটুকু নোংরামি, প্যাঁচপ্যাঁচে কাদা, অন্ধকার, হীনমন্যতা, মাদক, দেহ ব্যবসা ইত্যাদি মিলেমিশে কি চমৎকার আবহই না তৈরি করছে!
এখন যত বড় মিডিয়া হাউজ...সেখানে ততটাই বিজলি বাতির ঝলকানি আর বস্তির যা কিছু ইতরামি, তার সবই একসঙ্গে এসে অপবিন্যাস্ত হয়েছে নিপুনভাবে-- এমনটাই আজকাল তুমি ভাবতে শিখেছো।
তুমি সহজেই তুলনা দিতে পারো এসব, এক সময় খুব কাছ থেকে কিছুটা দেখা টিটিপাড়ার রেল লাইন-বস্তি। আর দমিনেক লা পিয়েরের ‘আনন্দনগর’ এ বলা অন্য এক নরক জীবনের সঙ্গে। সেই যে রিকশাওয়ালার জীবন জীম্মি করতে করতে বস্তির শেঠ-বাহিনী জীম্মি করে ফেললো তার কি কোমল কিশোরীটিকেও!
০৩. তুমি এক সময় ভাবতে, তথ্য-সাংবাদিকতার দারুণ সব উৎকর্ষতার কথা। ভাবতে স্টার রিপোর্টার মার্ক টালি, সুবীর ভৌমিক, আতাউস সামাদ, আর সাইমন ড্রিং! আর এখন?
এখন শুধুই লাইট, ক্যামেরা, অ্যাকশন! প্যাকেজ, প্যানেল, ফুটেজ, উভ, ইন-ভিশন আর উভ+সিংক!
টিকে থাকাও তো এক যোগ্যতা হে! স্ট্রাগল ফর সার্ভাইভ-- অস্তিত্ববাদের সংগ্রাম! আমি আছি, ইহা অপেক্ষা সত্যি নাই।
কিন্তু দেখো, তুমি ভদ্র, উচ্চস্বরে কথা বলো না, তুমি অহিংস; অর্থাৎ তুমি বেশ খানিকটা ঊন, যোগ্যতায় খাটো, প্রণয় বা পাথর ছোঁড়াছুড়ির খেলায় তুমি অনেকটা পথ পিছিয়ে আছো বটে!
না হে ...সেই শৈশবে সাবেক নকশালাইট পিতা আজিজ মেহেরের কথা শুনে এতো বছর ধরে প্রতি সকালে দাঁত ব্রাশ করার সময় তোমাকে যে এতোটা সেল্যুট দিয়ে এসেছি, এখন আমি সব কিছু একেবারে ফিরিয়ে নিচ্ছি। তারচেয়ে তুমি বরং মরো, তুমি কচু খাও। হে ভগবান, একটা পিলে যাক পেটে ওর ঢুকে!...
__
ছবি: আলেক্সান্দ্রভ, আন্তর্জাল।
No comments:
Post a Comment