০১. তীব্র তাপহাদের ভেতর নাগরিক কোলাহলমুক্ত হিম হিম ঠাণ্ডা একটি ঘর। এক দিকের দেয়াল জুড়ে সার সার টেলিভিশন, সব ক'টিতে এক সঙ্গে দেশি-বিদেশি সংবাদ প্রচার হচ্ছে। আরেক দিকে এইচপি কম্পিউটারে মুহূর্তে টাইপ হচ্ছে দারুন সব তাজা খবর।
এরপর নিউজ স্ক্রিপ্টগুলো ঠিকঠাক করে অবিশ্বাস্য দ্রুততায় উভ (আউট অব ভিশন) বা ফুটেজ আর কমেন্ট/বাইটসহ উভ-সিংক বা প্যাকেজ তৈরি করা।...
রানডাউন...ঘড়ির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সংবাদক্রম সাজানো, স্টেশন পলিসি নিয়ে দৌড়ঝাঁপ। একেবারে শেষ সময়ে অন এয়ারে ধরিয়ে দেওয়া তারকা সাংবাদিকের ব্রেকিং বা হার্ট ব্রেকিং নিউজ। ...রান, রান অ্যান্ড রান।...
মাঝে মাঝেই রিপোর্টারদের, প্রতিনিধিদের, সংবাদদাতাদের মুহূর্মুহূ টেলিফোনে ঝনঝন করে কেঁপে ওঠে পুরো নিউজ রুম। প্রধান প্রতিবেদক, বার্তা সম্পাদক, রান ডাউন প্রডিউসার, নিউজ রুম এডিটর ও নিউজ প্রডিউসারের ব্যস্ততা বাড়ে। সংবাদ-প্রসব বেদনায় কাতরায় টিভি স্টেশন। দারুন হট্টোগোলে মাথার শিরা-উপশিরাসমূহ দপদপ করে লাফায়।
বদ্ধ জানালার কাচঁ ভেদ করে বাইরে তাকালে আম্বর শাহ মসজিদ-মাদ্রাসার কেবলই নির্লিপ্ত চাউনি। বাইরের জগতের সঙ্গে যোগাযোগ শুধু তথ্য-স্বার্থ সংশ্লিষ্ট। এমন কি বৃদ্ধ মাতা যখন ঢুকে পড়েন সেল ফোনে, বাবু, ভাত খেয়েছো? অভ্যাস বসে, হ্যাঁ বা না বলেই মুখ ফসকে বেরিয়ে আসে সংবাদ-যন্ত্র মানুষের মুখস্ত বুলি, কোনো খবর আছে?
০২. আচ্ছা, এমনও তো হয়, লেখাই যার জীবন, তিনি এক সময় লিখতে ভুলে গেলেন!
মানে, তিনি চাইছেন যে তিনি কিছু লিখবেন। গভীর রাতে পিঁপড়ের মতো সার বেধে যে সব কালো হরফ শরীর বেয়ে পিলপিল করে উঠে আসে, যে সব কথামালা স্বপ্নের ভেতর ঘুনপোকার মতো কুটকুট করে কেটে চলে করটির খোল, তাই তিনি এক সুন্দর সকালে বিন্যাস্ত করবেন তার নিজের নিজস্ব ডিজিটাল-খেরোখাতায়। কিন্তু কিছুক্ষণ কি-বোর্ড নিয়ে খুটখাট করে তিনি অবাক হয়ে দেখলেন, নাহ! কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। সবকিছু আউট অব ভিশন, উভ!
শুনতে পাই, কবি হেলাল হাফিজ নাকি উনসত্তরেই জীবনের শ্রেষ্ঠ কবিতাটি লিখে ফেলেছিলেন-- কোনো কোনো প্রেম আছে, প্রেমিককে খুনি হতে হয়...এখন যৌবন যার, যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়!
এরপর আট+নয়ের দশকে কিছু খুচরো কবিতা মকশ করার কি দারুন প্রয়াস! তসলিমার প্রেমে লিখলেন, ভালবেসে নাম রেখেছি তনা, তাই কি তুমি তুলেছিলে অমন বিষের ফনা? অথবা, আমার মতোন ক'জনার আর হৃদয় হয়েছে নষ্ট, ক'জনা আর দিতে পারে, এমন হৃষ্ট-পুষ্ট কষ্ট?...লাল কষ্ট, নীল কষ্ট, পাথর চাপা ঘাসের কষ্ট, হরেক রকম কষ্ট আছে, কষ্ট নেবে? কষ্ট।...
আমাদের এই কবিবর নাকি অনেকদিন কিছু লিখতে পারছেন না। এক সময় বলপয়েন্ট-নিউজপ্রিন্ট, পরে টাইপ রাইটার, ইলেক্ট্রনিক্স টাইপরাইটার, আর এখন কম্পিউটার। খুটখাটই সার, কিন্তু তেমন লেখা আর হলো কোথায়? অক্ষরের জগত, কথামালার জগত, ছন্দের জগত-- এখন বুঝি ধোঁয়াশাই বিস্তর, আউট অব ভিশন...দীর্ঘতম রাইটার্স ব্লক।
০৩. সেই কোন আমলে রামকৃষ্ণবাবু বাহ্যজ্ঞান শূন্য হয়ে বলেছিলেন, এসেছিস যখন, একটা দাগ রেখে যা!
আর করপোরেট বিজ্ঞাপন শেখাচ্ছে ভিন্ন বুলি: দাগ থেকে যদি দারুন কিছু হয়, মন্দ কী! সার্ফ এক্সেল! দাগ থেকেই দারুন কিছু!...
অর্থাৎ কি না, শেষে দাগাদাগিই সার, হে প্রিয় খেরোখাতা। ওই যে রব বাউল কালীগঙ্গার পারে গেয়েছিলেন সাঁইজীর গান:
__
ছবি: গোল্ডেন মাস্ক, আন্তর্জাল।
এরপর নিউজ স্ক্রিপ্টগুলো ঠিকঠাক করে অবিশ্বাস্য দ্রুততায় উভ (আউট অব ভিশন) বা ফুটেজ আর কমেন্ট/বাইটসহ উভ-সিংক বা প্যাকেজ তৈরি করা।...
রানডাউন...ঘড়ির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সংবাদক্রম সাজানো, স্টেশন পলিসি নিয়ে দৌড়ঝাঁপ। একেবারে শেষ সময়ে অন এয়ারে ধরিয়ে দেওয়া তারকা সাংবাদিকের ব্রেকিং বা হার্ট ব্রেকিং নিউজ। ...রান, রান অ্যান্ড রান।...
মাঝে মাঝেই রিপোর্টারদের, প্রতিনিধিদের, সংবাদদাতাদের মুহূর্মুহূ টেলিফোনে ঝনঝন করে কেঁপে ওঠে পুরো নিউজ রুম। প্রধান প্রতিবেদক, বার্তা সম্পাদক, রান ডাউন প্রডিউসার, নিউজ রুম এডিটর ও নিউজ প্রডিউসারের ব্যস্ততা বাড়ে। সংবাদ-প্রসব বেদনায় কাতরায় টিভি স্টেশন। দারুন হট্টোগোলে মাথার শিরা-উপশিরাসমূহ দপদপ করে লাফায়।
বদ্ধ জানালার কাচঁ ভেদ করে বাইরে তাকালে আম্বর শাহ মসজিদ-মাদ্রাসার কেবলই নির্লিপ্ত চাউনি। বাইরের জগতের সঙ্গে যোগাযোগ শুধু তথ্য-স্বার্থ সংশ্লিষ্ট। এমন কি বৃদ্ধ মাতা যখন ঢুকে পড়েন সেল ফোনে, বাবু, ভাত খেয়েছো? অভ্যাস বসে, হ্যাঁ বা না বলেই মুখ ফসকে বেরিয়ে আসে সংবাদ-যন্ত্র মানুষের মুখস্ত বুলি, কোনো খবর আছে?
০২. আচ্ছা, এমনও তো হয়, লেখাই যার জীবন, তিনি এক সময় লিখতে ভুলে গেলেন!
মানে, তিনি চাইছেন যে তিনি কিছু লিখবেন। গভীর রাতে পিঁপড়ের মতো সার বেধে যে সব কালো হরফ শরীর বেয়ে পিলপিল করে উঠে আসে, যে সব কথামালা স্বপ্নের ভেতর ঘুনপোকার মতো কুটকুট করে কেটে চলে করটির খোল, তাই তিনি এক সুন্দর সকালে বিন্যাস্ত করবেন তার নিজের নিজস্ব ডিজিটাল-খেরোখাতায়। কিন্তু কিছুক্ষণ কি-বোর্ড নিয়ে খুটখাট করে তিনি অবাক হয়ে দেখলেন, নাহ! কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। সবকিছু আউট অব ভিশন, উভ!
শুনতে পাই, কবি হেলাল হাফিজ নাকি উনসত্তরেই জীবনের শ্রেষ্ঠ কবিতাটি লিখে ফেলেছিলেন-- কোনো কোনো প্রেম আছে, প্রেমিককে খুনি হতে হয়...এখন যৌবন যার, যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়!
এরপর আট+নয়ের দশকে কিছু খুচরো কবিতা মকশ করার কি দারুন প্রয়াস! তসলিমার প্রেমে লিখলেন, ভালবেসে নাম রেখেছি তনা, তাই কি তুমি তুলেছিলে অমন বিষের ফনা? অথবা, আমার মতোন ক'জনার আর হৃদয় হয়েছে নষ্ট, ক'জনা আর দিতে পারে, এমন হৃষ্ট-পুষ্ট কষ্ট?...লাল কষ্ট, নীল কষ্ট, পাথর চাপা ঘাসের কষ্ট, হরেক রকম কষ্ট আছে, কষ্ট নেবে? কষ্ট।...
আমাদের এই কবিবর নাকি অনেকদিন কিছু লিখতে পারছেন না। এক সময় বলপয়েন্ট-নিউজপ্রিন্ট, পরে টাইপ রাইটার, ইলেক্ট্রনিক্স টাইপরাইটার, আর এখন কম্পিউটার। খুটখাটই সার, কিন্তু তেমন লেখা আর হলো কোথায়? অক্ষরের জগত, কথামালার জগত, ছন্দের জগত-- এখন বুঝি ধোঁয়াশাই বিস্তর, আউট অব ভিশন...দীর্ঘতম রাইটার্স ব্লক।
০৩. সেই কোন আমলে রামকৃষ্ণবাবু বাহ্যজ্ঞান শূন্য হয়ে বলেছিলেন, এসেছিস যখন, একটা দাগ রেখে যা!
আর করপোরেট বিজ্ঞাপন শেখাচ্ছে ভিন্ন বুলি: দাগ থেকে যদি দারুন কিছু হয়, মন্দ কী! সার্ফ এক্সেল! দাগ থেকেই দারুন কিছু!...
অর্থাৎ কি না, শেষে দাগাদাগিই সার, হে প্রিয় খেরোখাতা। ওই যে রব বাউল কালীগঙ্গার পারে গেয়েছিলেন সাঁইজীর গান:
কেহ বলা-কওয়া করে,
মাছ ধরতে সেই সাগরে
যেথা নদীটির হয় তিনধারা...
মাছ ধরতে গেলাম সেই সাগরে,
ওঠে শুধু শামুকের ভাড়া
আন্দাজী মোর চাঁদমারা
কই হলো মোর মাছ ধরা?
চিরদিন ধাপ খেলিয়া
হইলাম আমি বল হারা
(পারে) কই হলো মোর মাছ ধরা?অর্থাৎ কি না, ব্লগরব্লগর সার, সারৎসার।...
__
ছবি: গোল্ডেন মাস্ক, আন্তর্জাল।
No comments:
Post a Comment