বাংলাদেশের পাহাড়ি জনপদে কোনো সুখবর নিয়ে আসেনি ২০১৭ সাল। বরং এটি ছিল সব ধরনের শোষণ-নিপীড়নের শিকার আদিবাসী পাহাড়িদের জন্য তীব্র বঞ্চনার আরো একটি বছর।
কল্পনা চাকমা থেকে রমেল চাকমা
১৯৯৬ সালের ১২ জুন রাঙামাটির বাঘাইছড়ির নিউ লাইল্যাঘোনা থেকে অপহৃত হন হিল উইমেন্স ফেডারেশন নেত্রী কল্পনা চাকমা। এরপর গত ২১ বছরে কাচালং, মাইনি, চেঙ্গী, শঙখ, মাতামুহির অনেক জল গড়িয়েছে। কল্পনা চাকমা অপহরণ মামলার শুনানীর তারিখের পর তারিখ পড়েছে। কিন্তু অভিযুক্ত লেফটেনেন্ট ফেরদৌস ও তার তিন সহযোগি ভিডিপি সদস্যদের কেশাগ্রও স্পর্শ করতে পারেনি আইন-শৃংখলা বাহিনী। পাহাড় ও সমতলের তীব্র প্রতিবাদকেও আমলে নেয়নি সরকার।
অন্যদিকে, ২০১৭ সালের ৫ এপ্রিল সকালে রাঙামাটির নান্যাচরে সেনাবাহিনী কর্তৃক আটক ও অমানুষিক নির্যাতনে গুরুতর আহত নান্যাচর কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী রমেল চাকমা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৯ এপ্রিল দুপুরে মারা যান। তিনি ছিলেন নান্যাচর উপজেলার পূর্ব হাতিমারা গ্রামের কান্তি চাকমার ছেলে। তিনি ডানচোখে দেখতে পেতেন না। সেনা নজরদারি ও পুলিশের পাহারায় দু’সপ্তাহ ধরে রমেল ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পড়ে তার লাশটিও পরিবারের কাছে হস্তান্তর না করে সেনা হেফাজতে পুড়িয়ে দেওয়া হয় বলে পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়।
এ ঘটনায় পাহাড় ও সমতলে আদিবাসীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের জন্ম দেয়। মূল ধারার গণমাধ্যমে রমেল “হত্যাকাণ্ড” সংবাদ সেভাবে না এলেও সামাজিক মাধ্যম ও মুক্তমনাসহ বিভিন্ন ব্লগে এর তীব্র প্রতিবাদ গড়ে ওঠে। লক্ষ্যনীয়, এবারো খুব সফলতার সঙ্গেই অভিযুক্ত সেনা সদস্যরা থেকে যান ধরাছোঁয়ার বাইরে।
এটি আর কিছুই নয়, গত চার দশক ধরে সেনা-সেটেলার চক্রপার্বত্য চট্টগ্রামে যে নয়া উপনিবেশ গড়ে তুলেছে, এরই প্রত্যক্ষ ফল এসব অবিচার। লংগদু সহিংসতায় এটি প্রমানিত হয় আরো ভিন্নমাত্রায়।
আমার প্রতিবাদের ভাষা
২০১৭ সালের ১ জুন যুবলীগ নেতা নয়নের লাশ পাওয়া যায় খাগড়াছড়ির দীঘিনালায়। তার বাড়ি পাশের রাঙামাটি জেলার লংগদুতে। নয়ন পেশায় ভাড়ায় মটর সাইকেল চালক ছিলেন। পরদিন ২ জুন সেনা, পুলিশ ও ইউএনওর উপস্থিতিতে নয়নের লাশ নিয়ে মিছিল বের করে বাঙালি সেটেলাররা। মিছিলটি ছিল যথেষ্টই উস্কানিমূলক। এর কালো ব্যানারে নয়ন হত্যার জন্য“উপজাতীয় সন্ত্রাসী”দের দায়ী করা হয়েছিল, শুধু “সন্ত্রাসীদের” নয়। ওই মিছিল থেকেই লংগদুর চারটি পাহাড়ি গ্রামে আগুন ধরিয়ে দিয়ে দুইশতাধিক বসতঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়। নিঃস্ব করে দেওয়া হয়, আদিবাসী পাহাড়িদের। নৃসংশতা এমনই যে আশ্রয়হীন পাহাড়িরা এখনো আশেপাশের গ্রামে ও স্কুল ঘরে আশ্রয় নিয়েছেন। নিজেদের পোড়া ভিটায় এখনো ফিরতে পারেননি অনেকেই।
এ ঘটনায় পাহাড়িরা তো বটেই, শুভবুদ্ধির সব মানুষ তীব্র প্রতিবাদে ফেটে পড়েন। পাহাড় ও সমতলে লংগদু ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য তোলা হয় ত্রাণ সাহায্য।
স্মরণে রাখা ভাল, ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর শান্তিচুক্তি সাক্ষরের আগে পাহাড়ি জনপদে অন্তত ১৩টি গণহত্যা হয়েছে। এরমধ্যে ১৯৮৯ সালের ৪ মে লংগদুর গণহত্যা অন্যতম। এবার লংগদু সহিংসতার মতো সেবারও সেনা-সেটেলার যৌথায়নে খুন, জখম,লুঠপাঠ আর আগুন দেওয়া হয়েছে পাহাড়ি গ্রামে। সেনা বাহিনীর গুলি আর সেটেলারদের দায়ের আঘাতে সাবেক কাউন্সিলর অনিল বিকাশ চাকমাসহ খুন হন অন্তত ৪০ জন নিরীহ পাহাড়ি নারী-পুরুষ। লংগদু গণহত্যার প্রতিবাদে ২০ মে গঠিত হয় পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)।এই গণহত্যার ঘটনায় বিক্ষুব্ধ নারী নেত্রী কবিতা চাকমা (এখন অস্ট্রেলিয়ায় প্রবাসী) লিখেছিলেন সেই বিখ্যাত কবিতা, “জ্বলি ন উধিম কিত্তেই?”
এমনিভাবে, শান্তিচুক্তির আগে ও পরে সেনা-সেটেলার যৌথায়নে পাহাড়ে আগুন জ্বলছেই।
কল্পনা চাকমা থেকে রমেল চাকমা
১৯৯৬ সালের ১২ জুন রাঙামাটির বাঘাইছড়ির নিউ লাইল্যাঘোনা থেকে অপহৃত হন হিল উইমেন্স ফেডারেশন নেত্রী কল্পনা চাকমা। এরপর গত ২১ বছরে কাচালং, মাইনি, চেঙ্গী, শঙখ, মাতামুহির অনেক জল গড়িয়েছে। কল্পনা চাকমা অপহরণ মামলার শুনানীর তারিখের পর তারিখ পড়েছে। কিন্তু অভিযুক্ত লেফটেনেন্ট ফেরদৌস ও তার তিন সহযোগি ভিডিপি সদস্যদের কেশাগ্রও স্পর্শ করতে পারেনি আইন-শৃংখলা বাহিনী। পাহাড় ও সমতলের তীব্র প্রতিবাদকেও আমলে নেয়নি সরকার।
অন্যদিকে, ২০১৭ সালের ৫ এপ্রিল সকালে রাঙামাটির নান্যাচরে সেনাবাহিনী কর্তৃক আটক ও অমানুষিক নির্যাতনে গুরুতর আহত নান্যাচর কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী রমেল চাকমা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৯ এপ্রিল দুপুরে মারা যান। তিনি ছিলেন নান্যাচর উপজেলার পূর্ব হাতিমারা গ্রামের কান্তি চাকমার ছেলে। তিনি ডানচোখে দেখতে পেতেন না। সেনা নজরদারি ও পুলিশের পাহারায় দু’সপ্তাহ ধরে রমেল ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পড়ে তার লাশটিও পরিবারের কাছে হস্তান্তর না করে সেনা হেফাজতে পুড়িয়ে দেওয়া হয় বলে পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়।
এ ঘটনায় পাহাড় ও সমতলে আদিবাসীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের জন্ম দেয়। মূল ধারার গণমাধ্যমে রমেল “হত্যাকাণ্ড” সংবাদ সেভাবে না এলেও সামাজিক মাধ্যম ও মুক্তমনাসহ বিভিন্ন ব্লগে এর তীব্র প্রতিবাদ গড়ে ওঠে। লক্ষ্যনীয়, এবারো খুব সফলতার সঙ্গেই অভিযুক্ত সেনা সদস্যরা থেকে যান ধরাছোঁয়ার বাইরে।
এটি আর কিছুই নয়, গত চার দশক ধরে সেনা-সেটেলার চক্রপার্বত্য চট্টগ্রামে যে নয়া উপনিবেশ গড়ে তুলেছে, এরই প্রত্যক্ষ ফল এসব অবিচার। লংগদু সহিংসতায় এটি প্রমানিত হয় আরো ভিন্নমাত্রায়।
আমার প্রতিবাদের ভাষা
২০১৭ সালের ১ জুন যুবলীগ নেতা নয়নের লাশ পাওয়া যায় খাগড়াছড়ির দীঘিনালায়। তার বাড়ি পাশের রাঙামাটি জেলার লংগদুতে। নয়ন পেশায় ভাড়ায় মটর সাইকেল চালক ছিলেন। পরদিন ২ জুন সেনা, পুলিশ ও ইউএনওর উপস্থিতিতে নয়নের লাশ নিয়ে মিছিল বের করে বাঙালি সেটেলাররা। মিছিলটি ছিল যথেষ্টই উস্কানিমূলক। এর কালো ব্যানারে নয়ন হত্যার জন্য“উপজাতীয় সন্ত্রাসী”দের দায়ী করা হয়েছিল, শুধু “সন্ত্রাসীদের” নয়। ওই মিছিল থেকেই লংগদুর চারটি পাহাড়ি গ্রামে আগুন ধরিয়ে দিয়ে দুইশতাধিক বসতঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়। নিঃস্ব করে দেওয়া হয়, আদিবাসী পাহাড়িদের। নৃসংশতা এমনই যে আশ্রয়হীন পাহাড়িরা এখনো আশেপাশের গ্রামে ও স্কুল ঘরে আশ্রয় নিয়েছেন। নিজেদের পোড়া ভিটায় এখনো ফিরতে পারেননি অনেকেই।
এ ঘটনায় পাহাড়িরা তো বটেই, শুভবুদ্ধির সব মানুষ তীব্র প্রতিবাদে ফেটে পড়েন। পাহাড় ও সমতলে লংগদু ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য তোলা হয় ত্রাণ সাহায্য।
স্মরণে রাখা ভাল, ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর শান্তিচুক্তি সাক্ষরের আগে পাহাড়ি জনপদে অন্তত ১৩টি গণহত্যা হয়েছে। এরমধ্যে ১৯৮৯ সালের ৪ মে লংগদুর গণহত্যা অন্যতম। এবার লংগদু সহিংসতার মতো সেবারও সেনা-সেটেলার যৌথায়নে খুন, জখম,লুঠপাঠ আর আগুন দেওয়া হয়েছে পাহাড়ি গ্রামে। সেনা বাহিনীর গুলি আর সেটেলারদের দায়ের আঘাতে সাবেক কাউন্সিলর অনিল বিকাশ চাকমাসহ খুন হন অন্তত ৪০ জন নিরীহ পাহাড়ি নারী-পুরুষ। লংগদু গণহত্যার প্রতিবাদে ২০ মে গঠিত হয় পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)।এই গণহত্যার ঘটনায় বিক্ষুব্ধ নারী নেত্রী কবিতা চাকমা (এখন অস্ট্রেলিয়ায় প্রবাসী) লিখেছিলেন সেই বিখ্যাত কবিতা, “জ্বলি ন উধিম কিত্তেই?”
এমনিভাবে, শান্তিচুক্তির আগে ও পরে সেনা-সেটেলার যৌথায়নে পাহাড়ে আগুন জ্বলছেই।
নিশুতি রাতে পাহাড়ে প্রলয়
অতিবর্ষণের ফলে ২০১৭ সালের ১২-১৩ জুন রাতে শুরু হয় একের পর এক পাহাড় ধসের যজ্ঞ। খবরে প্রকাশ, ১৪ জুন পর্যন্ত রাঙামাটিতে পাহাড়ধসে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ১০৫ জনে। সব মিলিয়ে বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলায় পাহাড়ধসে মারা যান ১৪০ জন। এই সিরিজ পাহাড় ধসে লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়ে পর্যটন নগরী রাঙামাটি। রাস্তাঘাট ও ব্রিজ-কালভার্ট পড়ে, উপড়ে পড়ে বিদ্যুত ও টেলিফোনের টাওয়ার, ক্ষতিগ্রস্ত হয় অসংখ্য ভবন, ঘরবাড়ি ও বিভিন্ন স্থাপনা। ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে অসংখ্য গাছপালা তো রয়েছেই। এসব ক্ষয়ক্ষতির ধকল এখনো সামলে উঠতে পারেননি সাধারণ মানুষ।
বহু বছর ধরে পাহাড়ে বেআইনী বসতি গড়ে তোলা, দেদারছে পাহাড় ও গাছ উজাড়, অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কেটে রাস্তাঘাট নির্মাণ, এরই প্রাকৃতিক প্রতিশোধ এই পাহাড় ধস। প্রকৃতিকে রক্ষা না করলে এমন মানবসৃষ্ট দুর্যোগ হতেই থাকবে, এমনটিই পরিবেশবিদদের অভিমত।
উন্নয়ন, উন্নয়ন, উন্নয়ন না ছাই!
পার্বত্য শান্তিচুক্তির ২০ বছরপূর্তির (২ ডিসেম্বর) দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক ভিডিও কনফারেন্সে দাবি করেছেন, শান্তিচুক্তির ৭২টি ধারার মধ্যে ৪৫ ধারা বাস্তবায়িত হয়েছে, ১৫টি আংশিক বাস্তবায়িত হয়েছে, বাকী ধারাগুলোও সরকার বাস্তবায়িত করবে।
অন্যদিকে, চাকমা রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় ওইদিন রাতেই একটি টিভি টকশোতে বলেছেন, বাজার সর্দার কত টাকার বাজার করেছেন, কি কি বাজার করেছেন, সেটি মূখ্য নয়। মুখ্য হচ্ছে এসব বাজার সদাই করার কারণে আমার যে মৌলিক চাহিদা ভাত,মাছ, শুটকি, সব্জি ইত্যাদি খেতে পারছি কি না। অর্থাৎ শান্তিচুক্তি মৌলিক শর্তগুলো পূরণ না হওয়ায় তার সুফল সাধারণ পাহাড়ি-বাঙালির ঘরে পৌঁছে নি।
এছাড়া ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় এক ফেসবুক নোটে জানাচ্ছেন, শান্তিচুক্তির অন্যতম শর্ত মেনে স্থানীয় শাসন ব্যবস্থা তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাচন বিধিমালা প্রনয়ণের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় গত ১৩ বছরে অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসকে ১৭টি তাগাদাপত্র দিয়েছে। বিস্ময়কর এই যে, অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস এ সংক্রান্ত কোনো পত্রেরই উত্তর দেয়নি!
এসব ঘটনাতেই শান্তিচুক্তির প্রধান বিষয়গুলো বাস্তবায়নে সরকারের তীব্র অনীহা ও কথামালার রাজনীতি স্পষ্ট হচ্ছে। আর এ-ও স্পষ্ট, কোনো সরকারই আর ভূমি কমিশন কার্যকরকরাসহ শান্তিচুক্তির মৌলিক শর্ত বাস্তবায়ন করবে না। আশাবাদ ও মানবন্ধন-সেমিনারের মতো কর্মসূচিতেও সরকারের টনক নড়বে না। এ জন্য চাই প্রচণ্ড প্রতিবাদ, বিপুল গণবিস্ফোরণ। অন্তত অতীত আন্দোলনের ইতিহাস আগামীদিনের এমন আন্দোলনেরই ডাক দিয়ে যায়। ...
---
অতিবর্ষণের ফলে ২০১৭ সালের ১২-১৩ জুন রাতে শুরু হয় একের পর এক পাহাড় ধসের যজ্ঞ। খবরে প্রকাশ, ১৪ জুন পর্যন্ত রাঙামাটিতে পাহাড়ধসে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ১০৫ জনে। সব মিলিয়ে বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলায় পাহাড়ধসে মারা যান ১৪০ জন। এই সিরিজ পাহাড় ধসে লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়ে পর্যটন নগরী রাঙামাটি। রাস্তাঘাট ও ব্রিজ-কালভার্ট পড়ে, উপড়ে পড়ে বিদ্যুত ও টেলিফোনের টাওয়ার, ক্ষতিগ্রস্ত হয় অসংখ্য ভবন, ঘরবাড়ি ও বিভিন্ন স্থাপনা। ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে অসংখ্য গাছপালা তো রয়েছেই। এসব ক্ষয়ক্ষতির ধকল এখনো সামলে উঠতে পারেননি সাধারণ মানুষ।
বহু বছর ধরে পাহাড়ে বেআইনী বসতি গড়ে তোলা, দেদারছে পাহাড় ও গাছ উজাড়, অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কেটে রাস্তাঘাট নির্মাণ, এরই প্রাকৃতিক প্রতিশোধ এই পাহাড় ধস। প্রকৃতিকে রক্ষা না করলে এমন মানবসৃষ্ট দুর্যোগ হতেই থাকবে, এমনটিই পরিবেশবিদদের অভিমত।
উন্নয়ন, উন্নয়ন, উন্নয়ন না ছাই!
পার্বত্য শান্তিচুক্তির ২০ বছরপূর্তির (২ ডিসেম্বর) দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক ভিডিও কনফারেন্সে দাবি করেছেন, শান্তিচুক্তির ৭২টি ধারার মধ্যে ৪৫ ধারা বাস্তবায়িত হয়েছে, ১৫টি আংশিক বাস্তবায়িত হয়েছে, বাকী ধারাগুলোও সরকার বাস্তবায়িত করবে।
অন্যদিকে, চাকমা রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় ওইদিন রাতেই একটি টিভি টকশোতে বলেছেন, বাজার সর্দার কত টাকার বাজার করেছেন, কি কি বাজার করেছেন, সেটি মূখ্য নয়। মুখ্য হচ্ছে এসব বাজার সদাই করার কারণে আমার যে মৌলিক চাহিদা ভাত,মাছ, শুটকি, সব্জি ইত্যাদি খেতে পারছি কি না। অর্থাৎ শান্তিচুক্তি মৌলিক শর্তগুলো পূরণ না হওয়ায় তার সুফল সাধারণ পাহাড়ি-বাঙালির ঘরে পৌঁছে নি।
এছাড়া ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় এক ফেসবুক নোটে জানাচ্ছেন, শান্তিচুক্তির অন্যতম শর্ত মেনে স্থানীয় শাসন ব্যবস্থা তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাচন বিধিমালা প্রনয়ণের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় গত ১৩ বছরে অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসকে ১৭টি তাগাদাপত্র দিয়েছে। বিস্ময়কর এই যে, অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস এ সংক্রান্ত কোনো পত্রেরই উত্তর দেয়নি!
এসব ঘটনাতেই শান্তিচুক্তির প্রধান বিষয়গুলো বাস্তবায়নে সরকারের তীব্র অনীহা ও কথামালার রাজনীতি স্পষ্ট হচ্ছে। আর এ-ও স্পষ্ট, কোনো সরকারই আর ভূমি কমিশন কার্যকরকরাসহ শান্তিচুক্তির মৌলিক শর্ত বাস্তবায়ন করবে না। আশাবাদ ও মানবন্ধন-সেমিনারের মতো কর্মসূচিতেও সরকারের টনক নড়বে না। এ জন্য চাই প্রচণ্ড প্রতিবাদ, বিপুল গণবিস্ফোরণ। অন্তত অতীত আন্দোলনের ইতিহাস আগামীদিনের এমন আন্দোলনেরই ডাক দিয়ে যায়। ...
---
ছবি: রমেল চাকমা, সংগৃহিত।
No comments:
Post a Comment