Wednesday, January 9, 2008

ফ্রিডম অব ডিপ্রেশন ইন বাংলাদেশ...



এই সমাজ বাস্তবতায় আমি বিচার চাই না, আমি শুধু বাঁচতে চাই -- রাজশাহীর সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলম আকাশ তাঁর ওপর সন্ত্রাসী হামলার বর্ণনা দিতে গিয়ে এই কথা বলে যখন কান্নায় ভেঙে পড়েন, তখন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মহাসচিব আইরিন খানের সঙ্গে সাংবাদিক - মানবাধিকারকর্মীদের পুরো মতবিনিময় সভায় নেমে আসে দীর্ঘ নিরবতা।

বুধবার সন্ধ্যায় ধানমণ্ডির দৃক গ্যালারীর এই মত বিনিময় সভায় আকাশ বর্ণনা দিচ্ছেলেন, দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ করার দায়ে কী ভাবে সন্ত্রাসীরা তাঁকে গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে সারারাত ধরে পেটায়, বৈদ্যুতিক শক দেয়।...তার পাশেরই বসেছিলেন আরেক নির্যাতীত সাংবাদিক টিপু সুলতান। তিনি অবশ্য তখন আমার মতোই ব্যস্ত ওই মতবিনিময় সভার তথ্য সংগ্রহ করতে।



আকাশের কান্নায় যে চাপা নিরবতা তৈরি হয়, আইরিন খান নিজেই তা ভাঙেন। তিনি বলেন, এটি হচ্ছে একজন নির্যাতীতের চরম ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।

টিপু সুলতানও বলেন গ্রামীণ সাংবাদিকদের তথ্য সংগ্রহ করার অসুবিধা। এটি এখন জরুরী অবস্থার মধ্যে প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সাংবাদিক অমি রহমান পিয়ালের কণ্ঠেও হতাশা ছড়িয়ে পড়ে। তিনি পেশাগত পরিচয় ছাড়াও নিজেকে ব্লগার হিসেবে পরিচিতি দেন। পিয়াল বলেন, অতিগুরুত্বপূর্ণ ঘটনার দিন ইন্টারনেট লাইন থাকে না, ওয়েবসাইট ডাউন হয়ে যায়, চলে যায় বিদ্যুত। কঠিন হয়ে পড়ে অনলাইন এই দৈনিকে নিউজ আপডেট দেওয়া। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, আমার সামনে আকাশ ও টিপু সুলতানের উদাহরণ আছে। তাহলে আমার কাজের নিশ্চয়তা কোথায়? আমিও কী ভবিষ্যতে আকাশ বা টিপু সুলতান হবো?

এর পর আদিবাসী নেতা সঞ্জিব দ্রং চলেশ রিছিলে মৃত্যূর প্রসঙ্গে টানেন।

সবার মনে আছে নিশ্চয়, টাঙ্গাইলের মধুপুরের গারো আদিবাসী নেতা চলেশ রিছিল (৪১) গত বছর ১৮ মার্চ যৌথ বাহিনী হেফাজতে মারা যান। তিনি ছিলেন মধুপুরের ইকো - পার্ক প্রকল্পের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা আদিবাসী আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্ব দানকারী। সে সময় সরকারের পক্ষ থেকে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে চলেশ রিছিল মারা গেছেন দাবি করা হলেও নিহতর পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, নির্যাতন করেই তাকে হত্যা করা হয়েছে।

আইরিন খান স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন, নিঃসন্দেহে বিচার বাহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে চলেশ রিছিলের প্রতি সুবিচার করা হয়নি, অন্যায় করা হয়েছে। চলেশ রিছিলের বিষয়ে আমি এ দেশের সরকারের উচ্চ পর্যায়ে কথা বলেছি; চিঠি দিয়েছি। তা^র মৃত্যূর বিষয়ে গঠিত সরকারি তদন্ত কমিটির রিপোর্ট প্রকাশ করতে হবে।

এর পর আমি পেশাগত ও ব্লগার পরিচয় দিয়ে বলি, সেনা সমর্থিত তত্ত্বাধায়ক সরকার একদিকে ইন্টারনেট মনিটরিং, সাংবাদিকদের টেলিফোন ট্যাপিং করছে। সেনা বাহিনীর আপত্তির কারণে গত ১৫ বছরেও পার্বত্য চট্টগ্রামে মোবাইল টেলিফোন যায়নি। সেখানে বন্ধ রয়েছে তথ্য যোগাযোগের অবাধ প্রবাহ। এই সরকারই আবার তথ্য অধিকার আইন করতে যাচ্ছে। পুরো বিষয়টিকে আমার কাছে এক ধরণের প্রহসন বলেই মনে হচ্ছে।

জরুরী অবস্থা ভঙ্গের দায়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র - শিক্ষকদের ধরপাকড়ের বিষয়ে আমি বলি, আইন অনুযায়ী তাদের বিচার হবে, সেটি ভালো কথা। কিন্তু সরকার একদিকে শিক্ষকদের বিচারের মুখোমুখি করাবেন, আবার দস্তখত দিয়ে রাষ্ট্রপতি সাধারণ ক্ষমা দেখাবেন -- এটি কোন ধরণের প্রহসন? আমরা তো শুনেছি সামরিক জান্তা আইয়ূব খানের শাসনে এমনটি হয়েছে!

ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, সাংবাদিক নির্যাতনের বিষয়ে তেমন জোড়ালো কোনো মানবাধিকার আন্দোলন হয়নি, এটি সাংবাদিক - মানবাধিকার কর্মী সবার যৌথ ব্যর্থতা।

প্রথম আলোর ফারুক ওয়াসিফসহ সেখানে উপস্থিত অন্যান্য সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরাও সকলে বলেন, এক ধরণের সেনা শাসনের মতো দুঃশাসনের ভেতর দিয়েই দেশ যাচ্ছে। এ অবস্থায় মানবাধিকারের অবস্থা যা হওয়া উচিত, তাই হচ্ছে।

মতবিনিময় ওই অনুষ্ঠানের বিষয় টেনে (ফ্রিডম অব এক্সপ্রেশন ইন বাংলাদেশ) সমকালের একজন সাংবাদিক তো বলেই ফেললেন, এখন ফ্রিডম অব ডিপ্রেশন ইন বাংলাদেশ চলছে!

আইরিন খান সমাপনী বক্তব্যে বলেন, মানবাধিকার রক্ষায় আন্তর্জাতিক আইন কী ভাবে ব্যবহার করা হবে, তা এদেশের সরকারগুলোর কাছে পরিস্কার নয়। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে মৌলিক মানবাধিকারের ধারণা পরিবর্তন করতে হবে। নইলে গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।

এতে অন্যান্যের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের আসিফ সালেহ। সভাপতিত্ব করেন দৃক নিউজ প্রধান শহিদুল আলম।

আইরিন খান অ্যামনেস্টি ডটঅর্গ স্ল্যাস বাংলা নামে ওয়েব সাইটও উদ্বোধন করেন।।



No comments:

Post a Comment